বছর ঘুরে আরও একটি ২১ শে জুলাই সামনে। লোকসভা ভোট মিটেছে। বিধানসভা উপ-নির্বাচনেও দারুন ফল করেছে তৃণমূল। খুঁটি পুজো শেষে ২১ শে জুলাই এর প্রস্তুতি। ২১ জুলাই য়ের কি মাহাত্ম্য ও কেন পালন করা হয় একবার দেখে নেব। বাংলায় ২১ শে জুলাই এর জন্ম আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর আগে, ১৯৯৩ সালে। সেদিন রক্তে রাঙিয়ে উঠেছিল বাংলার রাজনীতির ইতিহাস। আজকের তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি তখন যুব কংগ্রেস সভানেত্রী। ভরা বাম আমল। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন জ্যোতি বসু। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। নির্বাচনে স্বচ্ছতা আনতে সচিত্র ভোটার কার্ডের দাবি জানিয়ে ছিলেন মমতা।
২১ শে জুলাই যুব কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে মহাকরণের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। শহরের পাঁচ দিক থেকে এসেছিল মিছিল। পরিস্থিতি আঁচ করে জায়গায় জায়গায় পুলিশি ব্যারিকেড বসানো হয়। সেদিন নেত্রীর পাশে ছিলেন মদন মিত্র, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, সৌগত রায়ের মতো নেতারা। বাধা পেয়েই উত্তপ্ত হতে থাকে পরিস্থিতি। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে শুরু হয় ইট ও পাথরবৃষ্টি। পালটা বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশও। অভিযোগ ওইদিন বোমাবাজিও চলে। পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশের দিকে মারমুখী হয়ে ছুটে যান যুব কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকরা। এরপরেই পুলিশ পালটা গুলি চালায় বলে অভিযোগ। আর তাতেই মৃত্যু ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মীর। আহতও হন অনেকে।
২১ জুলাই ‘শহীদ’দের নাম
১. শ্রীকান্ত শর্মা
২. দিলীপ দাস
৩. মুরারি চক্রবর্তী
৪. রতন মণ্ডল
৫. কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
৬. বিশ্বনাথ রায়
৭. অসীম দাস
৮. কেশব বৈরাগী
৯. রঞ্জিত দাস
১০. প্রদীপ রায়
১১. বন্দনা দাস
১২. ইনু মিঞা
১৩. আবদুল খালেক
সেই থেকে তৃণমূল পরিবারে ২১ শে জুলাই পালন। শহীদদের স্মরণের পাশাপাশি প্রাক্তন বাম রাজনীতির নৃশংসতাকে তুলে ধরাই লক্ষ্য। চলতি বছর ২১ শে জুলাই পড়েছে রবিবার। শহরের পথে ভিড়, জমায়েত অনেকটাই হালকা থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ ওই দিন অফিস, কাছারি, আদালত বন্ধ থাকে। এরফলে যানজটের জেরে নাভিশ্বাস ওঠার পরিস্থিতি তৈরি হবে না। ৫ বছর আগেও এক রবিবার পড়েছিল ২১ শে জুলাই। তবে এত উৎসাহ ছিল না। লোকসভা ভোটের ফলই ছিল মন খারাপের নেপথ্যে। ২০১৯ এ লোকসভা ভোটে বাংলার বুক থেকে ১৮ টি আসন ছিনিয়ে নিয়েছিল বিজেপি।
২১শে জুলাইয়ের মঞ্চ বাঁধার আগে খুঁটিপুজো
এবার ছবিটা পুরোটাই গিয়েছে উল্টে। লোকসভা ভোটে ১৮ থেকে কমে ১২ তে এসে দাঁড়িয়েছে গেরুয়া শিবির। বাংলার বিধানসভায় যে তিনটি আসন হাতে ছিল সেটাও গিয়েছে। তাই অনেকেই মনে করছেন লোকসভা ও বিধামনসভা উপ-নির্বাচনে জোড়া সাফল্যে ২১ শের মঞ্চের ঝলকানি অন্যরকম হবে। তবে কি আবার পাগলু ড্যান্স দেখা যাবে শহীদ স্মরণের মঞ্চে? অনেকেই মনে করছেন, হয়তো না। কারণ তৃণমূল নেত্রীর অবস্থান এখন অনেক কড়া। এমন কিছু উদ্যোগ নেওয়া হবে না যাতে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলতে পারেন।
কেমন হবে ২১ শে জুলাইয়ের মঞ্চ? জানা যাচ্ছে এবারের ২১ শের মঞ্চেও থাকবে চমক। মূল মঞ্চের আয়তন হবে ৫২-২৪ ফুট। এই মঞ্চে থাকবেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। অপর একটি মঞ্চও তৈরি করা হচ্ছে। সেটির আয়তন ৪৮-২৪ ফুট। সেই মঞ্চে বসবেন বিভিন্ন পুরসভার কাউন্সিলররা। আরও একটি মঞ্চও করা হচ্ছে। সেই মঞ্চে থাকবেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। সেই মঞ্চের আয়তন হবে ৪০-২৪ ফুট। এখানে ২১শে জুলাইয়ে যাঁরা শহীদ হয়েছিলেন তাঁদের পরিবারের সদস্যরা থাকবেন। শুক্রবার থেকে জেলা থেকে কর্মীরা আসতে শুরু করবেন কলকাতায়। তাঁদের থাকার জন্য প্রতিবারের মতো নেতাজি ইন্ডোর, ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র, উত্তীর্ণ, গীতাঞ্জলি স্টেডিয়াম, সল্টলেক স্টেডিয়াম, ইকো পার্ক, সেন্ট্রাল পার্কে থাকার মতো ব্যবস্থা করা হয়েছে।
Discussion about this post