ভারতীয় রেল এখন সমস্ত ফোকাস বন্দে ভারত, বন্দে মেট্রো বা নমো ভারত ট্রেনগুলির দিকেই। এমনই অভিযোগ রেলের নিত্যযাত্রীদের। যারা প্রায়ই ট্রেনে যাতায়াত করেন তাঁদের অভিযোগ, অপরিচ্ছন্ন কেবিন, বার্থ, নিম্নমানের বিছানার চাদর, নোংরা কম্বল, টয়লেটে জলের অভাব নিয়ে। বর্তমানে বেশিরভাগ সুপারফাস্ট দূরপাল্লার ট্রেনে এসি কামরা বাড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় রেল। ফলে বেশি ভাড়া দিয়ে ট্রেনে ভ্রমণ করতে হচ্ছে যাত্রীদের। কিন্তু এই সব ট্রেনের পরিষেবা নিয়ে মোটেই সন্তুষ্ট নন যাত্রীরা। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে তাই রাশি রাশি অভিযোগ জমা পড়ছে। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ আসছে এসি কামরায় সরবরাহ করা বিছানার চাদর ও কম্বল নিয়ে। প্রত্যেকেরই অভিযোগ, সেগুলি হয় নোংরা, না হয় ছেঁড়াফাটা থাকে। এবার এই সমস্যার মোকাবিলায় বড় পরিবর্তন আনল ভারতীয় রেল।
এবার যাত্রীদের জন্য বরাদ্দ লিনেন পরিষেবায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে ব্যবহার করা হবে এআই অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। বলা ভালো, এআই- ক্যামেরা ভিত্তিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সমাধান সূত্র খুঁজতে চলেছে ভারতীয় রেল। সম্প্রতি রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এমন একটি মেশিনের উদ্বোধন করেছেন।
রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, প্রথমবার ভারতীয় রেল এআই ক্যামেরা ভিত্তিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন লিনেন পরিষেবা চালু করল। প্রাথমিকভাবে এই প্রযুক্তির প্রথম ব্যবহার হচ্ছে পুনের আইআরসিটিসি-র স্বয়ংক্রিয় লন্ড্রিতে। এটি সফলভাবে কাজ করলে এই ধরণের মেশিন গোটা দেশেই চালু করা হবে। ভারতীয় রেল সূত্রে জানা যাচ্ছে, বর্তমানে দেশে আইআরসিটিসি-র স্বয়ংক্রিয় লন্ড্রি রয়েছে ৮০টি। যেখান থেকে প্রতিদিন ৬ লক্ষের বেশি লিনেনের প্যাকেট বিলি করা হয় রেলযাত্রীদের ব্যবহারের জন্য। প্রতিটি প্যাকেটে থাকে দুটি করে বিছানার চাদর, একটি পিলো কভার, একটি ছোট তোয়ালে। আর থাকে একটি কম্বল। কিন্তু রেলযাত্রীদের অভিযোগ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় চাদর বা কম্বল নোংরা, ছেঁড়া। পুনের লন্ড্রিতে বসানো এআই ক্যামেরা এবার সেগুলি পরীক্ষা করবে। যদিও রেলমন্ত্রী বলেছেন, গোটা দেশে যত লিনেন প্রতিদিন সরবরাহ হয় তার মাত্র দুই শতাংশ এখানে পরীক্ষা করা হবে। যা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। যদিও তিনি আশ্বাস দিয়েছেন ধীরে ধীরে গোটা ভারতবর্ষেই এই প্রক্রিয়া চালু করা হবে। আপাতত মধ্য রেলওয়ে এবং পশ্চিম রেলওয়ের লন্ড্রিতে এটি ব্যবহার করার পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী।
কিভাবে কাজ করবে এই এআই ক্যামেরা
এই সিস্টেমে, প্রথমে বিছানার চাদরগুলি ম্যানুয়ালি কনভেয়ার সিস্টেমে লোড করা হবে। এর পর শুরু হবে শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া। একটি হাই রেজোলিউশন এআই ক্যামেরা ব্যবহার করে সব বেডসিট, পিলো কভার ও তোয়ালের বিস্তারিত ছবি তোলা হবে। ছবিগুলি রিয়েল-টাইম শনাক্তকরণ সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা হবে। কোনও রকম খুঁত থাকলে সঙ্গে সঙ্গেই জানিয়ে দেবে মেশিন। ফলে সেগুলি বাতিল করে দেবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা। এই রেজোলিউশন এআই ক্যামেরা প্রতিটি লিনেন পরীক্ষা করবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। কোনও রকম দাগ, নোংরা লেগে থাকলে, বা ছেঁড়া ফাটা থাকলে তা জানিয়ে দেবে সফটওয়্যার। রেল কর্তাদের দাবি, সফটওয়্যারটি ১০০ শতাংশ নির্ভুলতার সঙ্গে লিনেনের দাগ এবং ক্ষতি শনাক্ত, করতে উন্নত মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম ব্যবহার করছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, রেলের ৮০টি লন্ড্রির মধ্যে মাত্র একটিতে এই বিশেষ মেশিন বসানো হয়েছে। তাতে খুব বেশি লাভ হবে না। যতক্ষণ না সম্পূর্ণ বিভাগে এই বিশেষ এআই ক্যামেরা ব্যবহার করে লিনেন পরীক্ষা না করা হয়, ততক্ষন সমস্যার পুরোপুরি সমাধান হবে না।
Discussion about this post