সোমবার ইস্তফা দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাত্র ৪৫ মিনিটের ব্যবধানে তাঁকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয় বলেই বাংলাদেশী সংবাদমাধ্যমের খবর। এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি ঢাকা ছেড়ে ভারতে চলে আসেন। এখনও পর্যন্ত তিনি ভারতের নতুন দিল্লিতে কোনও সেফ হাউসে রয়েছেন বলেই খবর। পরবর্তী সময় শেখ হাসিনা কোথায় যান সেদিকে নজর রয়েছে গোটা পৃথিবীর। সেই সঙ্গে নজর রয়েছে ভারত শেখ হাসিনা ইস্যুতে কোন অবস্থান নেয় সেটার দিকেও। আবার বাংলাদেশের পালাবদল নিয়ে ভারতের নীতিই বা কি হবে, সেটার দিকেও তাকিয়ে কূটনৈতিক মহল। সবমিলিয়ে যথেষ্ট চাপে নয়াদিল্লি। কারণ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বহুদিনের। আর পালাবদলের পর সেই সম্পর্ক যে আদৌ মধুর থাকবে না সে কথা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে ভারত। ফলে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে ভারত যে যথেষ্ট চাপে সেটা বোঝাই যাচ্ছে।
কূটনৈতিক মহলের মতে, বর্তমান বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে এখন ভারত “ধীরে চলো” নীতি নিতে চলেছে। সাবধানে পা ফেলা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই ভারতের সামনে। এদিকে ভারতবন্ধু হিসেবে পরিচিত শেখ হাসিনা এখন ভারতের আশ্রয়েই রয়েছেন। যা নিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান সেনাশাসকরা যে মোটেও খুশি নন সেটা বোঝাই যায়। শে ক্ষেত্রে হাসিনা যদি ভারতেই থেকে যান, তবে বাংলাদেশের পরবর্তী শাসকদের সঙ্গে সম্পর্ক একেবারেই তলানিতে পৌঁছে যাবে। নতুন করে সম্পর্ক স্থাপন করার কোনও সুযোগ থাকবে না ভারতের কাছে। ভারতের ভৌগলিক অবস্থানের দিকটি মাথায় রেখে প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যাবে বাংলাদেশ-ভারত সূসম্পর্ক কতটা কার্যকর ছিল। কারণ, একদিকে পাকিস্তান, অন্যদিকে চিনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খুব একটা ভালো নয় সেটা সকলেই জানেন। নেপাল, ভূটান ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের গ্রাফ ওঠানামা করে সময়ের সঙ্গে। আবার মিয়ানমার এবং মালদ্বীপের সঙ্গে ভারতের সাম্প্রতিক সম্পর্কও খুব একটা ভালো না। একমাত্র শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সঙ্গেই ভারতের সম্পর্ক সবচেয়ে পোক্ত ছিল। যার বলে ভারত বাকি প্রতিবেশীদের বার্তা দিতো। এবার হাসিনার গদিচ্যুত হওয়ার ঘটনায় দক্ষিণ এশিয়ায় কার্যত একা হয়ে গেল ভারত।
অপরদিকে হাসিনাকে ভারত যদি পাকাপাকি আশ্রয় না দেয়, তবে ভারতের তরফে বাংলাদেশের নয়া প্রশাসকদের একটা বার্তা দেওয়া সম্ভব হবে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোনও বিশেষ বিশেষ নেতা নয়, বরং নতুন প্রশাসনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করার মতো একটা জায়গা তৈরি হবে। সেই কারণেই হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে একটা সংকোচ বোধ দেখা যাচ্ছে নয়াদিল্লির। ভারতের সব প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গেই সবচেয়ে দীর্ঘ সীমান্ত ভাগ করে ভারত। প্রায় ৪ হাজার ৯৬ কিমি সীমান্ত রয়েছে ভারত-বাংলাদেশের দেশের মধ্যে। হাসিনা ইস্যুতে ভারত যদি হস্তক্ষেপকারী ভূমিকা পালন করে সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জঙ্গিগোষ্ঠীগুলি বড়সড় ষড়যন্ত্র করতে পারে। কারণ, ইতিমধ্যেই খবর পাওয়া যাচ্ছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলে বন্দি জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত বেশ কয়েকজন মুক্ত হয়ে গিয়েছে।
ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, জামায়তে ইসলামীর মতো কট্টরপন্থী ভারতবিদ্বেষী সংগঠন বর্তমান বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে একটা বড় ভূমিকা পালন করতে চলেছে। তাই হাসিনাকে ভারতে পাকাপাকি আশ্রয় দিয়ে নয়াদিল্লি বিপদ ডেকে আনতে চাইবে না। কিন্তু এই আবহেই হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তাঁর মা ভারতেই থাকতে চাইছেন। অন্য কোনও দেশে যাওয়ার ইচ্ছা নেই হাসিনার। তবুও বিভিন্ন কূটনৈতিক চ্যানেলে যোগাযোগ করে যত দ্রুত সম্ভব অন্য কোনও দেশের নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠাতে চাইছে ভারত। ইতিমধ্যেই জানা যাচ্ছে, ব্রিটেন বা আমেরিকা হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে গড়রাজি। এ ক্ষেত্রে শোনা যাচ্ছে ফিনল্যান্ড, রাশিয়ার মতো দেশের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে।
Discussion about this post