বামপন্থী রাজনীতির একটা যুগের অবসান হল বৃহস্পতিবার। দীর্ঘ ৩৪ বছরের বাম শাসনকালের শেষ মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এদিন প্রয়াত হলেন। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে যতটা জনপ্রিয় ছিলেন, ততটাই জনপ্রিয় ছিলেন একজন সৎ ও সজ্জন রাজনীতিবিদ হিসেবে। খুব একটা বিতর্ক তাঁকে ঘিরে হয়নি এমনকি কোনও কাঁদা ছোঁড়াছুড়ির মধ্যেই তিনি জীবদ্দশায় যাননি। ফলে বঙ্গ রাজনীতিতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নাম আজও সকলে সম্মানের সঙ্গে নিয়ে থাকেন। তাঁর মৃত্যুতে স্বভাবতই গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে রাজনীতি থেকে শুরু করে অন্যান্য মহলে। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে বালিগঞ্জের পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। এই খবর রটতেই সামাজিক মাধ্যমে শোকজ্ঞাপন করতে শুরু করেন বাম-ডান সব রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন। তিনি এক্স হ্যন্ডেলে লেখেন, “পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আকস্মিক প্রয়াণে আমি মর্মাহত। বিগত কয়েক দশক ধরেই আমি তাঁকে চিনতাম। গত কয়েক বছরে তিনি অসুস্থ ছিলেন তখন আমি কয়েকবার তাঁকে বাড়িতে দেখতে গিয়েছিলাম। এই মুহূর্তে আমি খুব দুঃখিত বোধ করছি। এই শোকের সময়ে মীরাদি এবং সুচেতনের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা। আমি সিপিআই(এস) দলের সকল সদস্য-সদস্যা, সমর্থক ও তাঁর অনুগামীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি”।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যুতে গভীর শোকজ্ঞাপন করেছেন। তিনি এক্স হ্যন্ডলে লেখেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণে শোকাহত। উনি এক জন বলিষ্ঠ রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। যিনি একাগ্র ভাবে তাঁর রাজ্যের মানুষের সেবা করেছেন। ওঁর পরিবার এবং সমর্থকদের আমার আন্তরিক সমবেদনা জানাই। ওম শান্তি”। প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে ভারত সরকার বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে পদ্মভূষণ সম্মান দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তিনি তা গ্রহন করতে অস্বীকার করেন।
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস তাঁর শোকবার্তায় বলেন, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এমন একজন নেতা যিনি জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে মানুষের ভালোবাসা এবং সম্মান পেয়েছেন। তাঁর সরল ও অনাড়ম্বর জীবনযাপন সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ মানুষকে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাশীল করেছিল।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ফেসবুকে এক শোকবার্তায় লেখেন, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। তাঁর বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করে তাঁর আত্মীয় পরিজন ও অনুরাগীদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ফেসবুকে লেখেন, সম্মানীয় শ্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণে আমি শোকাহত। তাঁর পরিবার এবং ভক্তদের প্রতি আমার সমবেদনা। আমি তাঁর আত্মার চিরশান্তি কামনা করি। ওম শান্তি।
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে তাঁর শোকবার্তায় বলেন, পাঁচ দশকের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি মানুষের সেবা করেছেন। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যুতে তাঁর পরিবার এবং সহকর্মীদের গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার বলেন, আমরা মর্মাহত, তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারকে আমি আমার তরফ থেকে এবং আমার দলের তরফ থেকে সমবেদনা জানাই। মাননীয় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ ছিলেন। রাজনৈতিক মতাদর্শগত ভাবে ভিন্ন মেরুর মানুষ হলেও ব্যক্তিগত ভাবে আমি ওঁকে সম্মান করতাম।
বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান এবং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক লড়াইয়ের সঙ্গী বিমান বসু বলেন, খবরটা যখন আসে বসেছিলাম। সেখান থেকে আমি উঠতেই পারছিলাম না।
Discussion about this post