তাঁর রাজনৈতিক জীবন বড় বিতর্কিত। বিশেষ করে শেষ 5 বছর। ধুতি পাঞ্জাবি পায়ে কোলাপুরী চপ্পল পরা লোকটি চলে গেলেন এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে। তিনি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্য। বৃহস্পতিবার সকালে এমন দুঃসংবাদ আসবে। কেউ হয়তো ঘুণাক্ষরেও টের পাননি। কারণ আগে থেকে কোন সতর্কতা ছিল না। ওই দিন সকালে প্রাতরাশ সেরেছিলেন বাড়িতে। এরপর আস্তে আস্তে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সুযোগ ই পেলেন না। মাত্র ৮০ বছর বয়সে বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তাঁর রাজনৈতিক জীবন বড় বিতর্কিত। বিশেষ করে শেষ 5 বছর। তাঁর ছেলে বেলা থেকে রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশ এক নজরে একবার দেখে নেব।
ফিরে দেখা
- ১৯৪৪ সালের ১ মার্চ। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জন্ম উত্তর কলকাতায়ক্রিকেট ও কবাডিতে দারুণ আগ্রহ ছিল তাঁর
- ১৯৬৬ সালে সিপিআইএমে যোগদান করেন দলে যোগ দেওয়ার পরও মূলত দলীয় পত্রপত্রিকা সম্পাদনা এবং লেখালিখির দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি
ষাটের দশকের শেষের দিকে ডিওয়াইএফ-এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক হন বুদ্ধদেব। খাদ্য আন্দোলনে অংশ নেন। - সত্তরের দশকে মূলত কলকাতা জেলা জুড়েই তিনি সংগঠন শক্তিশালী করার কাজে ব্রতী হন বুদ্ধদেব সিপিএমের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সদস্য হন সত্তরের দশকের গোড়ায়। ১৯৭৭ সালে কাশীপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রথম নির্বাচনে জেতেন
- ১৯৭৭ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মন্ত্রিসভায় তথ্য ও জনসংযোগ দফতরের দায়িত্ব পালন করেন
- ১৯৮২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত হন বুদ্ধদেব। পরে ১৯৮৭ সালে যাদবপুর কেন্দ্র থেকে জিতে তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী হন
- ২০১১ সালে আবার এই কেন্দ্র থেকেই হেরে জন তিনি
তথ্য সংস্কৃতির পাশাপাশি বুদ্ধদেব স্বরাষ্ট্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতরেরও দায়িত্ব সামলেছেন জ্যোতি বসুর মন্ত্রিসভায় - ১৯৮৫ থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হয়েছিলেন
১৯৯৯ সালের জানুয়ারি মাসে জ্যোতি বসুর সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী হন। পলিটব্যুরোর সদস্য হন ২০০০ সালে
সে বছরই মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসেন বুদ্ধদেব
পর পর দুবার হয়েছিলেন এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ২৯৪-এর মধ্যে ২৩৫টি আসনে জেতে বামফ্রন্ট। ফের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। শিল্পায়নের অভিমুখে রাজ্যকে এনে ফেলতে সে দিনই তিনি সিঙ্গুরে টাটা গোষ্ঠীর এক লক্ষ টাকার গাড়ি কারখানার প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু তার কিছু দিনের মধ্যে সিঙ্গুরে জমি পরিদর্শনে গিয়ে গ্রামবাসীদের বিরোধিতার মুখে পড়েন টাটার প্রতিনিধিরা। এরপর ধীরে ধীরে বিরোধীদের পায়ের তলার মাটি শক্ত হয়। নানা ঘাত প্রতিঘাতের পর বাম দুর্গকে সরিয়ে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে গুলি চালায় পুলিশ। সংঘর্ষে নিহত হন ১৪ জন গ্রামবাসী। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্ব থেকেই বিতর্ক তাড়া করতে শুরু করেছিল বুদ্ধদেবকে। ২০০৮-এর পঞ্চায়েত ভোটে খানিকটা ধাক্কা খায় বামফ্রন্ট। ধাক্কা আরও বৃহদাকার ধারণ করে ২০০৯ লোকসভা ভোটে। ৪২টি আসনের মধ্যে ২৭টিতে হেরে যায় বুদ্ধদেবের নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট। ২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্য রাজনীতিতে বড় পটপরিবর্তন ঘটে। বুদ্ধদেবের নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্টকে হারিয়ে দেয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। অবসান হয় দীর্ঘ সাড়ে ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট শাসনের।
Discussion about this post