“আয়নাঘর”, নামটা শুনলেই যেন রূপকথার এক ঘরের কথা মনে আসবে। নামটা শুনতে যতটা সাদামাটা, কিন্তু বাংলাদেশে এই নামটাই যেন আতঙ্কের, অপার রহস্যের। কারণ, জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশে এই আয়নাঘর আদতে এক ভয়ঙ্কর কারাগার, বা গুমঘর। যেখানে দিনের পর দিন বিরোধী কন্ঠস্বর রোধ করার জন্য মানুষজনকে অপহরণ করে রাথা হতো। কেউ তাঁদের খোঁজ পেতেন না। এমনকি চলতো অকথ্য অত্যাচার এবং নির্যাতন। আয়নাঘর আসলে আলো-বাতাসহীন একেকটি কক্ষ, যেখানে রাখা হতো বন্দিদের। দাবি, শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে যে বা যারা সরব হতেন, তাঁদের ধরে এনে এই আয়নাঘরেই চলতো অত্যাচার। শেখ হাসিনার বিদায়ের পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে ভয়ঙ্কর সেই অত্যাচারের কাহিনী। এমনকি বাংলাদেশ হাসিনা মুক্ত হওয়ার পর বেশ কয়েকজনকে উদ্ধারও করা হয়েছে বিতর্কিত আয়নাঘর থেকে। আসুন জানা যাক সেই আয়নাঘরের রোমহর্ষক কাহিনী।
গত সোমবার বাংলাদেশে তথাকথিত গণ অভ্যুত্থানের পর সমাজমাধ্যমে ছড়িয়েছে নানান ভিডিও এবং চিত্র। আরেকটি শব্দও সামাজিক মাধ্যমে দাবানলের মতো ছড়িয়েছে। সেটি হল “আয়নাঘর”। তবে এই আয়নাঘর শব্দের উপস্থাপনাতে রয়েছে অপরিসীম ঘৃণা এবং আতঙ্ক। আগে জেনে নেওয়া যাক কী এই আয়নাঘর?
আওয়ামী লিগের আমলে তৈরি হয়েছিল ডাইরেক্টরেট জেনারেল অফ ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স বা ডিজিএফআই। এই সংস্থা আসলে সরকার বিরোধী চক্রান্তে সন্দেহভাজনদের চিহ্নিত করা এবং আটক করে জেরা করার কাজে ব্যবহৃত হতো। ব্যবহারিক অর্থে ডিজিএফআই হল বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের গোয়েন্দা সংস্থা। দাবি, শেখ হাসিনা এই গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করতেন সরকার বিরোধীদের ধরে এনে শাস্তি দিতে। আর তাঁদের গোপন বন্দিশালা হল এই আয়নাঘর। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ডেইলি অবজারভারের প্রতিবেদন বলছে, আইনজীবী আহমেদ বিন কাসেম আরমান এবং প্রাক্তন সেনা আধিকারিক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমন আযমী আট বছর ধরে নিখোঁজ ছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণ আন্দোলন জোরালো হওয়ার পরপরই তাঁরা আচমকা ফিরে আসেন। ওই সংবাদপত্রে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তাঁরা দাবি করেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত থাকার অভিযোগে তাঁদের গুম করে আয়নাঘরে আটকে রাখে। দুজনেই দাবি করেছেন, যে হাসিনা সরকার তাঁদের বিনা বিচারে ওই অন্ধকার কারাগারে অকথ্য অত্যাচার করেছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, আয়নাঘরে কমপক্ষে ১৬টি কক্ষ রয়েছে। যেখানে একসঙ্গে ৩০ জন বন্দিকে আটকে রাখা যায়। আর এই আয়নাঘর ঢাকা সেনানিবাশের ভিতর কোনও গোপন জায়গায় রয়েছে। অনেকেই এই আয়নাঘরকে জার্মানিতে নাৎসিদের কুখ্যাত কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের সঙ্গে তুলনা করছেন। এমনকি সেখান থেকে বেড়িয়ে আসা বন্দিরাও একই দাবি করছেন। এক আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় উঠে এসেছে, ২০০৯ সালেই বাংলাদেশে প্রায় ৬০০ মানুষ রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়েছিল। সুইডেনভিত্তিক বাংলাদেশী সংবাদমাধ্যম নেত্র নিউজের প্রতিবেদনে প্রথম আয়নাঘরের রহস্য ফাঁস হয়। তাঁরা হানিসুর রহমান এবং শেখ মোহাম্মদ সেলিম নামে দুই বন্দির বয়ান প্রকাশ করেছিল। সেখান থেকেই জানা গিয়েছিল কি ধরণের অকথ্য অত্যাচার করা হতো এই আয়নাঘরে। শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিখোঁজ ব্যক্তিদের আত্মীয় পরিজন ঢাকায় ছুটে এসেছেন আয়নাঘরের সন্ধানে। যদি তাঁদের প্রিয়জনকে খুঁজে পাওয়া যায় এই উদ্দেশ্যে।
Discussion about this post