যখন শেখ হাসিনা বুঝলেন তার কথায় সেনাপ্রধান দেশের ছাত্র এবং জনগনের উপর কোন চাপ বা প্রতিরোধে যাবেন না। নতুন করে রক্ত ঝরিয়ে আন্দোলনকে প্রতিহত করার চেষ্টা করবেন না, তখন হাসিনা ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, যাতে তাকে ভারত সাহায্য করে, কিন্তু ভারত অন্য দেশের ভিতরে গিয়ে তাকে সাহায্য করতে রাজী হল না, আন্তর্জাতিক আইনের বাধা নিষেধ স্মরণ করিয়ে। তখন সেনা প্রধানকে হাসিনা বারবার বলেন তাকে নিরাপদে অন্য কোন দেশে পাঠিয়ে দিতে। শোনা যায় তখন বেশ কিছু নেতা, যারা বিরোধী দলে আছেন, এবং বেশ কিছু সেনা অফিসারের সঙ্গে সেনা প্রধানের মিটিং হয়। সেই সময় সেনাপ্রধানকে অনেকেই বলেন, হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন ঠিক আছে, কিন্তু তার জায়গায় যাকে আনা হবে সে যেন যোগ্য ব্যক্তি হয়। এখন ইউনূস এবং চেলাচামুন্ডাদের কাজকর্মে বিরক্ত হয়ে দেশ বাঁচাতে পথ খুঁজছেন সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান। আর তাই হঠাৎ খালেদার অসুস্থতার খোঁজ নেওয়ার আছিলায় গোপন মিটিং সারলেন তিনি।
আসলে ইউনূস বা অন্য যে কেউ দেশের দায়িত্ব নিক, তাতে কোন আপত্তি ছিল না সেনাপ্রধানের। কারণ তিনি যখন সব দলগুলি সহ অন্য সেনা অফিসারদের সঙ্গে, হাসিনার বিদায় পরবর্তী অবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন, তখন জানিয়েই দিয়েছিলেন যে তিনি ক্ষমতা চাননা।দেশ কিভাবে সমস্ত প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠবে সেই চেষ্টাই করবেন তিনি। তাই ক্ষমতায় জিনিই আসুন, তাকে ভোট পরিচালনা করতে সব রকম সাহায্য করবেন তিনি। আর সেই আশ্বাসকেই ইউনূস ভেবেছিলেন সেনাপ্রধান তার সঙ্গে আছেন। কিন্তু এখন সেনাপ্রধান দেখছেন ইউনূস এবং তার সাঙ্গপাঙ্গ ক্ষমতা আটকে রাখতে চাইছে, এবং সেটাকে দীর্ঘমেয়াদী করার জন্য নতুন নতুন ফন্দি ফিকির আঁটছে, এখন সেনাপ্রধান জাতির উদ্দেশ্যে ভাষনে বলেছিনলে তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে ভোট করাবেন, সেই আশ্বাস এখন বিশবাঁও জলে।
তিনিও মিথ্যাবাদীতে পরিনত হচ্ছেন।যদিও দেশের মানুষ এখন সেনাপ্রধানকেই বিশ্বাস করছেন।তাই জনগনকে তাদের দ্বারা নির্বাচিত সরকার দিতে বদ্ধপরিকর ওয়াকার উজ জামান। অন্যদিকে ইউনূস যে সংস্কার করার কথা বলছেন, তাতে ঘোর আপত্তি বিএনপির। তাদের সাফ বক্তব্য যে সংস্কার হবে তাকে মান্যতা দেবে কে। তার জন্য নির্বাচিত সরকার লাগে। পার্লামেন্ট লাগে, যেখানে সরকার এবং বিরোধী মিলে আইন পাশ করাবে। তো ভোট না করিয়ে সংবিধান বা সংস্কার সম্ভব নয়। বিএনপির সঙ্গে ইউনূসের এই দূরত্বকেই কাজে লাগাতে চাইছেন সেনাপ্রধান। তাই বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৃহস্পতিবার রাতে সাক্ষাৎ করলেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ়-জ়ামান। রাজধানী ঢাকার গুলশানে খালেদার বাড়িতে হল বৈঠকও। মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির টানাপড়েনের আবহে খালেদা-ওয়াকারের এই বৈঠক ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল।খালেদার বাড়িতে সেনাপ্রধান ওয়াকারের সঙ্গে গিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী সারাহনাজ় কামালিকা রহমান। ঘটনাচক্রে, কামালিকা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার তুতো বোন।
বিএনপি প্রধানের ‘প্রেস উইং’-এর সদস্য শায়রুল কবির খান জানিয়েছেন, রাত সাড়ে ৮টা থেকে প্রায় ৪০ মিনিট দু’জনের কথা হয়েছে। খালেদার দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন সেনাপ্রধান ওয়াকার। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ফজ়লে এলাহি আকবরও হাজির ছিলেন বৈঠকে। ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বিএনপি এবং কট্টরপন্থী দল ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ যা জামাত’ নামেই পরিচিত-তার সংঘাত ক্রমশ বাড়ছে। বৃহস্পতিবার বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজ়ভি সরাসরি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জামাতের ‘ভূমিকা’ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, ইউনূসের জমানায় জামাতের প্রভাব ক্রমশ বাড়তে থাকায় অসন্তুষ্ট বিএনপি। বিশেষত, অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা পদে জামাত-ঘনিষ্ঠদের নিয়োগ এবং নির্বাচন ঘিরে টালবাহানার জেরে সেই অসন্তোষ আরও বেড়েছে। তারই প্রতিফলন দেখা গিয়েছে রিজ়ভির বক্তব্যে।
ইতিহাস বলছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জামাত নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে পাকিস্তান সেনার পক্ষে কাজ করেছিলেন। রাজাকার ঘাতকবাহিনীর নেতা হিসাবে গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে একাধিক জামাত নেতার বিরুদ্ধে।ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ইউনূস সরকার নানা টালবাহানা করে জাতীয় সংসদের নির্বাচন পিছিয়ে দিচ্ছে বলেও ইতিমধ্যেই অভিযোগ তুলেছে খালেদার দল। এই অস্থির পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে আবার সেনার ‘ভূমিকা’ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। হাসিনা-পরবর্তী পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেনারেল ওয়াকারের ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে। দ্রুত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে সেনাপ্রধান সিদ্ধহস্ত। খালেদার সঙ্গে তাঁর বৈঠক নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা।
Discussion about this post