বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি যে জায়গায় দাঁড়িয়ে, এখান থেকে সেদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও সাধারণ মানুষের জীবন সবটাই প্রশ্নের মুখে পড়েছে। তবে কি বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ করে দিল ভারত? পাশাপাশি চীন শহরে গিয়ে মোহাম্মদ ইউনুসের ভারত সম্পর্কে যে কড়া মন্তব্য, সেই ভুলের দায় এবার নিতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। ভারতের সেভেন সিস্টার্সকে নিয়ে করা মন্তব্যের বিরুদ্ধে এবার সরব নয়া দিল্লি।
উল্লেখ্য,বাংলাদেশের লালমনিরহাট ভারতের ‘চিকেনস নেক’ এলাকার সাথে সংযুক্ত। বাংলাদেশের এই লালমনিরহাট জেলা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার সংলগ্ন এলাকা । অর্থাৎ কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত সংবেদনশীল। এহেন পরিস্থিতিতে চিনকে এই এলাকায় বিমানঘাঁটি নির্মাণের অনুমতি দিয়ে ভারতের উদ্বেগ বাড়িয়েছে বাংলাদেশ। তবে,পাল্টা অ্যাকশনে ভারত সরকার।
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের চিন সফরকালীন ভারতের সেভেন সিস্টার্স নিয়ে মন্তব্যের জেরেই ভারত বাড়তি ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করল। চিনের মাটিতে দাঁড়িয়ে ইউনুস চিনের প্রেসিডেন্টকে আহ্বান জানান পরিত্যাক্ত লালমনিরহাট বিমানঘাঁটিতে এয়ারবেস তৈরির। যা ভারতের কাছে একটা বড় হুমকি হতে পারে। কারণ, শিলিগুড়ি করিডোর থেকে লালমনিরহাট মাত্র দেড়শো কিলোমিটার দূরে। লালমনিরহাটে যদি চিন নিজেদের এয়ারবেস তৈরি করে, আবার মোংলা বা চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের নামে যদি সেখানেও একটি নৌঘাঁটি তৈরি করে নেয় চিন, তাহলে তা ভারতের জন্য অস্বস্তির।
আর বাংলাদেশের এই মন্তব্যের পর ভারত নিল এক কঠোর সিদ্ধান্ত। ২০২০ সাল থেকে বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা একতরফা ভাবেই বাতিল করলো ভারত। এতে বাংলাদেশের বৈদশিক বাণিজ্য জোরদার ধাক্কা খাবে বলেই মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে তৃতীয় কোন দেশে বাংলাদেশের পণ্য পাঠানোর সুযোগ বাতিল করার নির্দেশ দেয় ভারত সরকার।
মঙ্গলবার ভারতের কেন্দ্রীয় পরোক্ষ কর ও শুল্ক বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘‘২০২০ সালের ২৯ জুনের জারি করা সার্কুলার, বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংশোধিত এই সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে। তবে আগের সার্কুলারের প্রক্রিয়া অনুযায়ী ইতোমধ্যে ভারতে প্রবেশ করা বাংলাদেশি কার্গোকে ভারতীয় অঞ্চল ত্যাগ করার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।’’
আগের বিজ্ঞপ্তিতে ভারতীয় বন্দর ও বিমানবন্দরগুলোতে যাওয়ার পথে দেশটির স্থল শুল্ক স্টেশন ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় দেশে রপ্তানি কার্গো ট্রান্সশিপমেন্টের অনুমতি দেওয়া হতো। ভারতীয় বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের সরকারের এই সিদ্ধান্ত পোশাক, জুতো, রত্ন এবং গহনার মতো কয়েকটি ভারতীয় রপ্তানি খাতে এটি সহায়ক হবে।
এক ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল, তিনি বলেন, ভারতের বিমানবন্দরগুলোতে ‘উল্লেখযোগ্য জট’ তৈরি হয়ে পণ্যের সমস্যা দেখা দেয়, যাতে ভারতের রপ্তানিকারকদের লজিস্টিক পরিসেবার ব্যয় বেড়ে যায়।
অর্থাৎ, এই কারণে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের ভারতের বিমানবন্দর ও বন্দরগুলো ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে পণ্য পরিবহনের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। তবে এতে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশে বাণিজ্যের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না।
বিশেষত গার্মেন্টস খাতের ভারতীয় রপ্তানিকারকেরা দীর্ঘদিন ধরেই এই সুবিধা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তারা অভিযোগ করছিলেন, প্রতিদিন প্রায় ২০-৩০টি ট্রাক বাংলাদেশ থেকে দিল্লি বিমানবন্দর কার্গো টার্মিনালে প্রবেশ করে, যার ফলে ভারতীয় পণ্যের রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে।
ভারতীয় বিশ্লেষকদের দাবি, এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ধাক্কা। সেই সঙ্গে ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্ত ভারত বাংলাদেশ বাণিজ্যিক সম্পর্কে টানাপরেন সৃষ্টি করতে পারে। আঞ্চলিক বাণিজ্য ও পরিবহন ব্যবস্থার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট ভারত সরকারের নয়া নির্দেশ।
Discussion about this post