ঢাকা শহরের উপকণ্ঠে গাজীপুর শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে কানাইয়া এলাকা। সারি সারি গাছের ভিতর দিয়ে রাস্তা, মনোরম গ্রাম্য পরিবেশ। তাঁর মধ্যে মাথা তুলে দাঁড়ানো এক সুদৃশ্য বাগানবাড়ি। বাড়ি না বলে ছোটখাটো প্রাসাদ বলা ভালো। বাড়িটির নামটাও ওই গ্রামীণ পরিবেশের সঙ্গে বেমানান, টিউলিপ’স টেরিটরি। সম্প্রতি পদত্যাগ করা ব্রিটিশ মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকীর নামেই এই বাড়িটি। বলাই বাহুল্য. এই বাগানবাড়ির মালিকানা কার। সরকারি নথিপত্রে বাড়িটির মালিক শফিক আহমেদ সিদ্দিক, যিনি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার স্বামী ও টিউলিপের বাবা। তবে একটি বাড়ি নয়, গাজীপুরে আরও তিনটি বাড়ি নিয়ে জল্পনা সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশে। টিউলিপ’স টেরিটরি-সহ চারটি বিলাশবহুল বাংলো বা বাগানবাড়ি শেখ পরিবারের। অর্থাৎ, শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার পরিবারের।
জানা যাচ্ছে, চারটি বাগানবাড়ির মধ্যে একটির মালিক বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। যদিও সরকারি নথিতে হাসিনার বোন শেখ রেহানা, তাঁর ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর নামও রয়েছে। একটি বাড়ির মালিক শেখ রেহানার স্বামী শফিক আহমেদ সিদ্দিক, বাড়িটির নাম টিউলিপ’স টেরিটরি। অন্যদিকে বাকি দুটির মালিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ও শেখ রেহানার দেবর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক। প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট পালাবদলের পর থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব এবং তদারকি সরকারের উপদেষ্টারা বারংবার দাবি করে আসছিলেন, অবৈধভাবে শেখ হাসিনা এবং তাঁর পরিবার্ কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি করেছেন। আবার এই দাবিও উঠেছে, তাঁরা সম্মিলিতভাবে কয়েকশো কোটি টাকা বিদেশেও পাচার করেছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা সুইজারল্যাণ্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মঞ্চে শেখ হাসিনা এবং তাঁর পরিবারের পাচার করা সম্পত্তি বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার প্রসঙ্গ তুলেছিলেন।
এবার আসি গাজীপুরে হাসিনা পরিবারের চারটি বিলাসবহুল বাড়ি সম্পর্কে। স্থানীয়দের বক্তব্য, তাঁরা জানতেন এই বাগান বাড়িগুলি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বা তাঁর পরিবারের। এখানে তাঁরা মাঝেমধ্যেই আসতেন। তবে শীতকালে এখানে আসার পরিমান বেড়ে যেত। বড় বড় গাড়ি আসতো, কোনওটাতে বাংলাদেশের পতাকা লাগানো থাকতো। তবে রাতের দিকেই তাঁরা আসতেন এবং উঁচু পাচিল ও বিশাল গেটের কারণে সে সব দেখা যেত না। পাশাপাশি স্থানীয় পুলিশ সেই সময় বাড়িটি ঘিরে রাখতো। ফলে কে আসছেন, কে যাচ্ছেন সেটা তাঁরা জানতে পারতেন না। গাজীপুরে চারটি বাগানবাড়ির দলিলাধীন জমির পরিমাণ প্রায় ২৫ বিঘা। তবে স্থানীয়দের দাবি, জমির পরিমাণ এর অনেক বেশি। সরকারিভাবে এই অঞ্চলে ২৫ বিঘা জমির দাম ৫০ কোটি টাকার কাছাকাছি, তবে বাড়ি, পুকুর মিলিয়ে মোট দাম ১০০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। সে সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন বোন শেখ রেহানাও। তবে দুই বোনের পরিবারের সদস্যরা অনেক আগে থেকেই বিদেশে বসবাস করছিলেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর কৌতূহলবশত অনেকেই বাগানবাড়িগুলোতে যান। কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুরও চালায ছাত্র-জনতা। এখন এই বাড়িগুলি নিয়ে তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক। পাশাপাশি দুদক গত ১৭ ডিসেম্বর ৯ প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ ও টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। এর সঙ্গেই উঠে আসছে এই চারটি বাগানবাড়ির তথ্য। যা নিয়ে এখন বাংলাদেশের রাজনীতি তোলপাড়। প্রশ্ন উঠছে, হাসিনা এবং তাঁর পরিবার কোন উপায়ে এত এত সম্পত্তি করেছেন।
Discussion about this post