বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসকে ফের একবার তীব্র আক্রমণ করলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্প্রতি ব্যাংককে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশের প্রেস সচিবের দাবি, সেই বৈঠকে তিনি শেখ হাসিনার মুখ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদির কাছে। কিন্তু দেখা গেল, ওই দাবির কয়েকদিনের মধ্যেই শেখ হাসিনা সোশ্যাল মিডিয়াতে আরও একবার বিস্ফোরণ ঘটালেন। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে সরাসরি সুদখোর, জঙ্গি, সন্ত্রাসী, সাজাপ্রাপ্ত আসামি বলে অভিহিত করেছেন আওয়ামী লিগ নেত্রী। সোমবার রাতে আওয়ামী লীগের ওই অনুষ্ঠানে হাসিনার বক্তব্যে স্পষ্ট ভারত সরকার হাসিনার ভাষণের ওপর কোনও রকম হস্তক্ষেপ করেনি। ফলে শেখ হাসিনাও পুরনো মেজাজে ইউনুসকে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, মোদি-ইউনূস বৈঠক নিয়ে ক্রমাগত মিথ্যে প্রচার করে চলেছে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শাফিকুল আলম। তিনি ব্যাংককে ওই বৈঠকের ঠিক পরেই দাবি করেছিলেন বাংলাদেশের স্বার্থ সম্বলিত সব রকম বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এমনকি শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ দাবি-সহ ভারতে থেকে তার নানা উস্কানি মূলক বক্তব্যেরও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এরপর দেশে ফিরে তিনি ফেসবুকে এক লম্বা চওড়া পোস্ট করেন। সেখানেও তিনি আকাশ কুসুম দাবি করেন। কিন্তু ভারত সরকারের তরফে বুঝিয়ে দেওয়া হয় সেসব কিছুই হয়নি। মাত্র ৪০ মিনিটের ওই বৈঠকে কার্যত ভারতই ইউনুসকে বুঝিয়ে দিয়েছে দুদেশের সম্পর্ক ঠিক রাখতে হলে কি করতে হবে, আর কি করা যাবে না। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের একাংশ দাবি করছে, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী যে কথা বলছেন তার সঙ্গে ভারত সরকার দ্বিমত পোষণ করে না। পাশাপাশি বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধিতে ভারত যে অত্যন্ত চিন্তিত সেটাও বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর পরই আমরা দেখলাম, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুহাম্মদ ইউনুসকে সরাসরি জঙ্গি বলে সম্বোধন করলেন। আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানে হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে শান্তির দেশ বানাতে চেয়েছিলাম। অনেক দূর অগ্রসর হয়েছিলাম। সেই দেশটাকে ইউনুস জঙ্গিদের দেশ বানিয়েছে। জঙ্গি, খুনি, সন্ত্রাসীরাই আজ ইউনুসের শক্তি।
এখানেই শেষ নয়, ইউনুসকে আক্রমণ করে হাসিনা বলেন, উনি গ্রামীণ ব্যাঙ্ক এবং গ্রামীণ টেলিফোনের টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করেছে। কর্মীদের টাকা মেরে দিয়েছে। এজন্য শ্রম আদালতে সে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। সেই মামলা অবৈধ সরকার প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ফের বিচার করা হবে। পাশাপাশি দলীয় কর্মী সমর্থকদের প্রতি তাঁর দাবি, ‘আমি আল্লাহ’র নামে প্রতিজ্ঞা করছি, খুনিদের বিচার আমি একদিন করবই। হয়তো সেই কারণেই আল্লাহ আমাকে বারে বারে মৃত্যুর মুখ থেকে রক্ষা করে বাঁচিয়ে রেখেছেন।’ আওয়ামী লিগ নেত্রী বলেন, খুনের মামলা কখনও তামাদি হয় না’।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে আওয়ামী লিগ সরকারের পতন হয়, শেখ হাসিনা কোনও রকমে ভারতে পালিয়ে আসেন। একটা অংশের দাবি, এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের প্রায় এক লক্ষ কর্মী সমর্থক ভারতের আশ্রয়ে রয়েছেন। ভারত বাংলাদেশের তদারকি সরকারকে বারে বারে চাপ দিচ্ছে দ্রুত অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন করাতে হবে। অর্থাৎ ভারত চায় আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার পুনর্বাসন, প্রত্যাবর্তন নয়।
Discussion about this post