বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান এবং শেখ হাসিনার পতন যে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ কোনও বিষয় না, এটা এখন দিনের আলোর মতোই পরিস্কার। এই পুরো পরিকল্পনা আসলে ভারতের বিরুদ্ধে হওয়া এক গভীর ষড়যন্ত্র। শেখ হাসিনাকে সরিয়ে মুহাম্মদ ইউনূসকে বাংলাদেশের সিংহাসনে বসানো দিয়ে শুরু হয়েছে ওই পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়। এরপর ইউনূসের আমলে গোটা বাংলাদেশ জুড়েই চলেছে হিন্দুদের উপর লাগাতার অত্যাচার। সেই সঙ্গে ভারতের বিরুদ্ধে নানান উস্কানিমূলক মন্তব্য। যা ওই পরিকল্পনার দ্বিতীয় পর্যায় বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্য, ভারতকে যুদ্ধের জন্য উস্কানো, যাতে কোনও ভাবে ভারত একটা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। বলা যায় আমেরিকার জো বাইডেন প্রশাসন এই পরিকল্পনার অন্যতম কুশীলব। পাশাপাশি পাকিস্তানও এই ষড়যন্ত্রের আরেক কুশীলব।
ওয়াকিবহাল মহল বলছে, ভারত দিন দিন বিশ্বের সুপার পাওয়ার হিসেবে উঠে আসছে। ফলে এশিয়ার এক নির্নায়ক দেশ হিসেবে এই মুহূর্তে ভারতের অবস্থান খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছে। অপরদিকে, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ নিয়ে আমেরিকার দাবিতে শেখ হাসিনার পাত্তা না দেওয়া মেনে নিতে পারেনি জো বাইডেন। ফলে হাসিনাকে সরতে হল সিংহাসন থেকে। তাঁর জায়গায় এলেন বাইডেনের কাঠপুতুল মুহাম্মদ ইউনূস। কিন্তু এতকিছুর পরও বাংলাদেশের কিছু মানুষের মুর্খামির জন্য এই গভীর ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হতে চলেছে। ভারত এই ষড়যন্ত্রের আভাস আগেভাগেই পেয়ে গিয়েছিল, কিন্তু মুখে কিছু প্রকাশ করেনি। বরং তলে তলে ভারতও ঘুঁটি সাজিয়েছে। এই আবহেই ভারতের সুবিধা হয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে জিতে যাওয়ায় এবং বাইডেনের দল গো-হারা হেরে যাওয়ায়। বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, ট্রাম্পের এই ভূমিধস জয়ের পিছনেও ভারতের কিছুটা হাত রয়েছে। বিশেষত মার্কিন প্রবাসী ভারতীয়, বাংলাদেশী মানুষদের রিপাবলিকান পার্টির দিকে ঝুঁকতে সাহায্য করেছেন মোদি। যা ভোটে জেতার পর স্বয়ং ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য ক্যাবিনেট দেখেই বোঝা যায়। ফলে। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য অতি ভয়ঙ্কর হতে চলেছে এই জানুয়ারি মাস।
প্রশ্ন উঠছে, সামরিক দিক থেকে বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ শক্তিধর দেশ ভারতের সঙ্গে ৩৭তম স্থানে থাকা বাংলাদেশ কোন সাহসে যুদ্ধের উস্কানি দেয়? বিগত পাঁচ মাসে মুহাম্মদ ইউনূসের আমলে বাংলাদেশ যেন “হিরক রাজার দেশ”। তদরাকি সরকার একটা আছে ঠিকই, কিন্তু তা চলছে পুরোদস্তুর জামাত শিবিরের কথা অনুযায়ী, সেখানে কার্যত কোনঠাসা বিএনপি-র মতো শক্তিশালী রাজনৈতিক দলও। বাংলাদেশে জামায়তে ইসলামী, জেএমবি, হুজি, হিজবুত তেহরি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের মতো একাধিক জঙ্গি সংগঠনের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বাধ্য হয়েছে তদারকি সরকার। কারণ, শেখ হাসিনাকে হঠিয়ে মুহাম্মদ ইউনূসকে ক্ষমতায় আনার পিছনে মূল উদ্দেশ্যেই ছিল জঙ্গি সংগঠনগুলিকে পুনরায় চাঙ্গা করা। পাকিস্তানের আইএসআই এই চক্রান্তের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে, এটা এখন দিনের আলোর মতো পরিস্কার। আর যেখানে মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেয়, সেখানে যুদ্ধের হুমকি, নাশকতার ছক খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। সেই দিক থেকে বাংলাদেশ থেকে ভারতকে যুদ্ধের উস্কানি দেওয়াটা গুরুত্বহীন নয়। আরেকটি ব্যাপার ভাবা দরকার। সেটা হল সামরিক দিক থেকে রাশিয়া বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ শক্তিশালী দেশ হলেও তাঁরা ছোট্ট একটা দেশ ইউক্রেনের সঙ্গে দু বছরের বেশি যুদ্ধ করেও হারাতে পারছে না। রাশিয়ার হাতে সবচেয়ে বেশি পারমানবিক অস্ত্র থাকলেও ইউক্রেন ভয় পায়নি। আসলে ইউরোপ-আমেরিকার পশ্চিমী শক্তিগুলি রাশিয়াকে দীর্ঘকালীন যুদ্ধে লিপ্ত করে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করতে চেয়েছিল। সেই কারণেই ইউক্রেনকে তাঁরা অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করে গিয়েছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য। ভারতও এখন বিশ্বের অন্যতম শক্তি হিসেবে উঠে আসছে। তাই ভারতকেও একটা যুদ্ধে লিপ্ত করতে চলছে ক্রমাগত উস্কানি। যদিও ভারত পশ্চিমী দেশগুলি মূলত জো বাইডেনের পাতা এই ফাঁদে পা দেয়নি খুব সচেতনভাবে। যদিও ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, এই জানুয়ারি মাসেই ভারতীয় উপমহাদেশে একটা যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সেটা পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে, অথবা বাংলাদেশ ইস্যুতে পাকিস্তান-ভারতের মধ্যে। এখন দেখার ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার পর দক্ষিণ এশিয়ায় খেলা কতটা ঘোরে। যদিও বলে রাখা ভালো ভারত এখন যে কোনও যুদ্ধের জন্য পুরোদস্তুর প্রস্তুত।
Discussion about this post