ইউক্রেনের ইঞ্জিন দিয়ে রাশিয়ায় নির্মিত ভারতের সর্বশেষ ফ্রিগেট শ্রেণির যুদ্ধজাহাজ আইএনএস তুশিল নিয়ে এখন জোরদার চর্চা চলছে। এই দুর্ধর্ষ যুদ্ধজাহাজটিকে গত ৯ ডিসেম্বর রাশিয়ার কালিনিনগ্রাদের ইয়ান্তর শিপইয়ার্ডে ভারতীয় নৌবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। যা এখন সমুদ্রপথে ভারতের নৌবন্দরের দিকে আসছে। জানা যাচ্ছে, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসেই আইএনএস তুশিল ভারতের পশ্চিম উপকূলে পৌঁছে যাবে এবং নৌবাহিনীর কোনও একটি কম্যান্ডে যোগ দেবে। তবে আইএনএস তুশিল ভারতীয় নৌবাহিনীতে যোগ দেওয়ার আগেই চলতি জানুয়ারি মাসে ভারতীয় নৌবাহিনীর হাতে আসছে আরও তিনটি ভয়ঙ্কর অস্ত্র। দুটি ফ্রন্টলাইন যুদ্ধজাহাজ এবং একটি ডিজেল-বৈদ্যুতিক সাবমেরিন। সূত্রের খবর, আগামী ১৫ জানুয়ারি এই তিনটি প্ল্যাটফর্ম যুক্ত হতে চলেছে। যা ভারতের যুদ্ধ সক্ষমতাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে বলেই মনে করছেন সামরিক বিশেষজ্ঞরা।
নৌবাহিনী সূত্রে খবর, প্রায় আড়াই বছর ধরে সমুদ্রে যুদ্ধের মহড়া দেওয়ার পর অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে নৌসেনার অন্তর্ভূক্ত হতে চলেছে আইএনএস সুরাট। এটি চতুর্থ প্রজন্মের গাইডেড-মিসাইল ডেস্ট্রয়ার শ্রেণির যুদ্ধজাহাজ। এটি নির্মান করেছে মুম্বইয়ের মাঝগাঁও ডক ইয়ার্ড। এই ডেস্ট্রয়ার নানান ধরণের ক্ষেপণাস্ত্র, কামান, টর্পেডো-সহ একাধিক আধুনিক অস্ত্রসম্ভারে সজ্জিত। এতে রয়েছে ব্রহ্মোস ক্রুজ মিসাইল, বারাক-৮ মিসাইল এবং একে-৬৩০ ক্লোজ-ইন অস্ত্র সম্ভার। যা শত্রুপক্ষের জাহাজকে যে কোনও মুহূর্তে ধ্বংস করতে সক্ষম।
প্রজেক্ট ১৭এ স্টিলথ ফ্রিগেট শ্রেণির যুদ্ধজাহাজ হিসেবে ভারতীয় নৌসেনায় আরও একটি সংযোজন হতে চলেছে, যার নাম আইএনএস নীলগিরি। এটি শিবালিক শ্রেণির যুদ্ধজাহাজগুলির আরও উন্নত সংস্করণ। মূলত স্টিলথ প্রযুক্তিতে সজ্জিত এই যুদ্ধজাহাজে রাডার, অ্যাকোস্টিক ও ইনফারেডকে প্রতিহত করে শত্রুপক্ষকে ধোঁকা দিতে পারে। এর অস্ত্রাগারে রয়েছে ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল, বারাক-৮ সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল এবং টর্পেডো লঞ্চার, যা ভারতের শক্তিশালী আক্রমণাত্মক এবং প্রতিরক্ষামূলক ক্ষমতাকে আরও নিশ্চিত করে। আইএনএস নীলগিরির আরও একটি বৈশিষ্ট হল এই যুদ্ধজাহাজ থেকে কয়েকটি হেলিকপ্টার পরিচালনা করা যাবে। অর্থাৎ এই যুদ্ধজাহাজ বিমান পরিবাহী না হলেও বেশ কয়েকটি হেলিকপ্টার ওঠানামা করতে পারবে। এটিও সম্পূর্ণরূপে মুম্বইয়ের মাজাগাঁও ডক শিপবিল্ডার্স লিমিটেডে ডিজাইন এবং নির্মিত হয়েছে।
ভারতীয় নৌবাহিনীর পি-৭৫ প্রকল্পের অন্তর্গত ষষ্ঠ সাবমেরিন ভাগশির আগামী ১৫ জানুয়ারি কমিশনড হতে চলেছে। মুম্বইয়ের মাজাগাঁও ডক শিপবিল্ডার্স লিমিটেড এই ডুবোজাহাজ ডিজাইন ও নির্মান করেছে। বিগত এক বছরের বেশি সময় এটি সমুদ্রে ট্রায়াল দিয়ে অবশেষে নৌবাহিনীতে যুক্ত হতে চলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইএনএস ভাগশির সাবমেরিন হল বিশ্বের সবচেয়ে শান্ত ডিজেল-ইলেকট্রিক সাবমেরিনগুলির মধ্যে একটি। যেটি একটি হাইড্রোডাইনামিক আকৃতি-সহ উন্নত স্টিলথ ক্ষমতা বৈশিষ্ট্যযুক্ত। যা শব্দ এবং চৌম্বকীয় বিকিরণকে কম করে। ফলে শত্রুপক্ষ চট করে এর উপস্থিতি টের পায় না। আইএনএস ভাগশির অ্যান্টি মাইন ও অ্যান্টি সাবমেরিন যুদ্ধে পারদর্শী। পাশাপাশি এটাতে উন্নত প্রযুক্তির মাইন লেইং সিস্টেম দেওয়া হয়েছে। এই সাবমেরিনে গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র, গাইডেড টর্পোডো-সহ সমুদ্রের নীচে যুদ্ধ করার জন্য একাধিক অত্যাধুনিক যুদ্ধসম্ভার মজুত রয়েছে। পাশাপাশি আইএনএস ভাগশির ভারতীয় নৌবাহিনীর অন্যতম গোয়েন্দা ডুবোজাহাজ হিসেবে কাজ করতে পারবে। যা নৌসেনার শক্তিকে আরও বাড়িয়ে দেবে বলেই মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।
ভারত সরকার, আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে নৌসেনাকে সবচেয়ে উন্নত ও শক্তিশালী করে তোলার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর জন্য ভারতের নৌবাহিনীর ভাঁড়ারে অন্তত ২০০টি বিভিন্ন শ্রেণির যুদ্ধজাহাজ মজুত করার লক্ষ্য নিয়েছে নরেন্দ্র মোদির সরকার। নতুন যুদ্ধজাহাজগুলির বড় অংশই কোচি, মুম্বই, কলকাতা-সহ দেশের বিভিন্ন ডক ইয়ার্ডে তৈরি হচ্ছে। সূত্রের খবর, জানুয়ারি মাসে দুটি দুর্ধর্ষ যুদ্ধজাহাজ ও একটি অত্যাধুনিক ডুবোজাহাজ নৌসেনার হাতে আসছে। আর ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই নৌবাহিনীর ভাঁড়ারে চলে আসবে ‘তলোয়ার ক্লাস ফ্রিগেট’ আইএনএস তুশিল। যা ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরে দাপিয়ে বেরাবে। ফলে ইতিমধ্যেই ভয়ে কাঁটা হয়ে আছে চিন ও পাকিস্তান।
Discussion about this post