গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়েছিলেন বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণ অভ্যুত্থানের পর কোনও কার্যত এক কাপড়ে তিনি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সাহায্যে ভারতে পালিয়ে আসেন। ১৩ নভেম্বর তাঁর ভারতে অজ্ঞাতবাসের ১০০ দিন পূর্ণ হল। ফলে তাঁকে নিয়ে কৌতুহল ক্রমাগত বাড়ছে। কারণ, ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর তাঁকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। এমনকি তাঁর কোনও ভিডিও পাওয়া যায়নি। একটি মাত্র অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে, যদিও তার সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। ফলে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শরীর ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। অপরদিকে, বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের তরফে হাসিনার নামে ইন্টারপোলে রেল অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে বলে খবর। এই পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনাকে নিয়ে জল্পনা-কল্পনা বেড়েই চলেছে।
স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে কেমন আছেন আওয়ামী লিগের সর্বোচ্চ নেত্রী?
ভারত সরকারের বিভিন্ন সূত্র মারফৎ জানা যাচ্ছে, বহাল তবিয়তে রয়েছেন শেখ হাসিনা। তাঁকে দিল্লির অভিজাত এলাকায় ভিভিআইপি অতিথিশালায় রাখা হয়েছে। এমনকি তাঁর নিরাপত্তার জন্য একাধিক সাদা পোশাকের কমান্ডো বাহিনীর জওয়ান মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য দিল্লির অল ইন্ডিয়া মেডিকেল সায়েন্স বা এইএমসের চিকিৎসকদল তৈরি করা হয়েছে। তাঁরা নিয়মিতভাবে আওয়ামী লিগ নেত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন। তাঁকে সম্ভবত রাখা হয়েছে, দিল্লির লুটিয়েন্স বাগ এলাকায় ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের জন্য বরাদ্দ হওয়া কোনও এক বাংলোয়। যেখানে তাঁর ধর্মীয় আচার পালনের যাবতীয় সুবব্যস্থা রয়েছে। কারণ শেখ হাসিনা প্রতিদিন ভোরবেলা উঠে প্রার্থনা করেন।
দিল্লির আমলা মহলের তরফে জানা যাচ্ছে, শেখ হাসিনা ভারতে এসে মোটেই বন্দিদশা কাটাচ্ছেন না। বরং তাঁকে একজন প্রধানমন্ত্রীর প্রোটকল মেনে যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। যদিও নিরাপত্তার কারণে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বাসস্থান নিয়ে চূড়ান্ত গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে। কিন্তু তাঁর সঙ্গে অনেকেই দেখা করছেন। বা তিনি যার সঙ্গে বৈঠক করতে চাইছেন, তাঁদেরও সেখানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ, শেখ হাসিনা ভারতে বসেই দলীয় পদাধিকারীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বা তাঁদের দূত এসে হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করছেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশ পাচ্ছেন। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকও নিশ্চিত করেছে, ভারত সরকারেরর তরফে যদিও কোনও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে বাংলাদেশের তরফে শেখ হাসিনার নামে যে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করা হচ্ছে সেটার কি হবে। অথবা বাংলাদেশ সরকার যদি সরকারিভাবে হাসিনাকে ফেরত চায় তখনই বা ভারত সরকার কি করবে। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক অবশ্য বুধবারই স্পষ্ট করে দিয়েছে তাঁদের অবস্থান। কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল এই ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশকে কোনও ভাবেই পাত্তা দিতে নারাজ। বাংলাদেশের ইউনুস প্রশাসন ইন্টারপোলকে হাসিনার নামে রেড কর্নার নোটিস জারির জন্য চিঠি দিয়েছে। তা আমল দেবে না ভারত। সরকারি সূত্র বলছে, হাসিনার নিরাপত্তার সঙ্গে সঙ্গে আপস করে ইন্টারপোল কিংবা বাংলাদেশ সরকার, কোনও পক্ষের কাছেই অতিথিকে তুলে দেবে না ভারত। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উপর পাল্টা চাপের নীতিই গ্রহন করবে ভারত। তাঁরা যেন, ভারতকে চাপ দেওয়ার চেষ্টা না করে বরং ভারতের সহায়তা নিয়েই বাংলাদেশের অর্থনীতিকে কিছুটা চাঙ্গা করা লক্ষ্য হওয়া উচিত। ইতিমধ্যেই ভারতের এই অবস্থান বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে ইউনূস প্রশাসনকে।
Discussion about this post