বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের শিল্পগোষ্ঠী আদানি গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল সে দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের। সেই মতো ঝাড়খণ্ডের আদানি পাওয়ার লিমিটেড থেকে বাংলাদেশে সরাসরি সরবরাহ করা হচ্ছিল বিদ্যুৎ। যা দিয়ে বাংলাদেশে বিদ্যুতের ঘাটতি মেটানো হতো। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদল হয়েছে। চলতি বছরের আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহেই পূর্বতন প্রধানমন্ত্রী এক তীব্র গণ আন্দোলনের পর পদত্যাগ করতে বাধ্য হন, এবং দেশত্যাগ করে ভারতে এসে আশ্রয় নেন। এরপর বাংলাদেশে পদ্মার বুকে বয়ে গিয়েছে বহু জল। বর্তমানে বাংলাদেশের ক্ষমতায় রয়েছে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে তদারকি সরকার। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কে অনেকটাই ছেদ পড়েছে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কাছ থেকে ভারতের শিল্পপতি গৌতম আদানির সংস্থা আদানি পাওয়ার লিমিটেডের মোটা অঙ্কের বকেয়া হয়ে গিয়েছে। সূত্রের খবর, ‘পাওয়ার পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট’ অনুযায়ী, অক্টোবরের ৩১ তারিখের মধ্যে টাকা দিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের তদারকি সরকার সেই বকেয়া মেটায়নি। ফলে ১ নভেম্বর থেকেই আদানি পাওয়ার লিমিটেড বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দিল। জানা যাচ্ছে, এর জেরে বাংলাদেশে ভয়াবহ বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিয়েছে। আদানি গ্রুপের দাবি, বিদ্যুতের বিল বাবদ প্রায় ৮৪ কোটি ডলার বাকি রেখেছে বাংলাদেশ সরকার। তাতেই এবার বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক কমিয়ে দেওয়া হল। বাংলাদেশের পাওয়ার গ্রিড থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাত থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছে আদানিরা। ওই রাতে বিদ্যুতের ১৬০০ মেগাওয়াটের বেশি ঘাটতি ছিল বলে জানিয়েছে সংস্থা।
সূত্রের খবর, ঝাড়খণ্ডে অবস্থিত আদানি পাওয়ার লিমিটেডের বিদ্যুৎকেন্দ্রে এই মুহূর্তে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে। কিন্তু এতদিন এখানে প্রতিদিন ১৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো। অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে উৎপাদন। সেই অনুযায়ী বাংলাদেশের পাওয়ার গ্রিডে অর্ধেক বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে। এর আগে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে চিঠি দিয়ে ৩১ অক্টোরের মধ্যে বিদ্যুতের বিল মিটিয়ে দিতে বলেছিল আদানি পাওয়ার। সেই চিঠিতে এও বলা হয়েছিল, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বকেয়া না মেটানো হলে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির আওতায় পদক্ষেপ করা হবে। বিদ্যুৎ সরবরাহে রাশ টানা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। আদানি গ্রুপের দাবি, বাংলাদেশ সরকার না বকেয়া মিটিয়েছে, না লেটার অফ ক্রেডিট বা ঋণপত্র দিয়েছে। অপরদিকে, বাংলাদেশ সরকারের তরফে অন্য দাবি করা হচ্ছে। তাঁদের দাবি, আদানিদের আগের বকেয়া মিটিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জুলাই মাস থেকে কয়লার বাড়তি দাম ধরে, আদানিরা বেশি টাকা চাইতে শুরু করেছে। নয়া দর অনুযায়ীই বকেয়া টাকা এত পরিমাণে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে ডলারের ঘাটতির জন্য ঋণপত্র দেওয়া যাচ্ছে না। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায়, বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের আমলে যে যে চুক্তি করা হয়েছিল তা নিয়ে বিরোধীরা বরাবর প্রশ্ন তুলে আসছিল। এমনকি এমনকি হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে যে গণ আন্দোলনের সূচনা ঘটে, তাতেও এই বিদ্যুৎ চুক্তির প্রসঙ্গ ছিল। এখন ওই চুক্তি অনুযায়ী আদানিদের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ হবে কিনা সেটাই দেখার।
Discussion about this post