ভারতীয় শিল্পপতি গৌতম আদানির সংস্থা আদানি পাওয়ার লিমিটেডের সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে চুক্তি হয়েছিল বাংলাদেশের পুর্বতন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিন সরকারের। চুক্তি মোতাবেক ভারত থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ পাঠাবে আদানি পাওয়ার লিমিটেড। ২০১৭ সালে দুই দেশের মধ্যে ২৫ বছর মেয়াদি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করা হয়েছিল। যা এখন তুমুল ডামাডোলের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এমনিতেই বিপুল বকেয়া রয়েছে এই দাবিতে আদানি গ্রুপ বর্তমানে বাংলাদেশকে চুক্তির থেকে কম পরিমান বিদ্যুৎ পাঠাচ্ছে। অপরদিকে, আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তির বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ হাইকোর্টে একটি মামলাও দাখিল করা হয়েছে। সবমিলিয়ে বাংলাদেশে আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ ব্যবসা এখন সরু সুতোয় ঝুলছে।
গত ৭ নভেম্বরের মধ্যে বকেয়া বিল পরিশোধ না হলে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের হুঁশিয়ারি দেয় আদানি পাওয়ার লিমিটেড। তার জেরে বাংলাদেশ সরকার আদানি পাওয়ারকে বকেয়া মেটাতে শুরুও করেছে। সূত্রের খবর, ৮৫০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া ছিল বলে দাবি আদানিদের। এরমধ্যে মাত্র ৯৭ মিলিয়ন ডলার মেটানো হয়েছে। শুধুমাত্র বিদ্যুতের দাম হিসেবে বকেয়া ছিল অন্তত ৮৪ কোটি ডলার। বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখার জন্য বিদ্যুতের দামের অন্তত ২০-২৫ কোটি ডলার মিটিয়ে দেওয়ার আবেদন করেছিল আদানি গ্রুপ। এরমধ্যেই আদানি গ্রুপ এবং বাংলাদেশ সরাকরের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ চুক্তি নিয়ে আইনি জটিলতা তৈরি হয়ে গেল। জানা যাচ্ছে বাংলাদেশ হাইকোর্ট ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি পর্যালোচনা করার জন্য এক মাসের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে। ওই কমিটিতে আন্তর্জাতিক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং আইনজ্ঞদের রাখাতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এই নির্দেশ দেন।
বাংলাদেশ হাইকোর্টের আরও নির্দেশ, একমাসের মধ্যে যে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠিত হবে. তাঁরা পরবর্তী দুই মাসে মধ্যে রিপোর্ট আদালতে জমা করবে। এমনকি সেই কমিটি পর্যালোচনা করবে, চুক্তির সময় যে দর কষাকষি হয়েছিল, সেটা নিয়েও। প্রসঙ্গত, মামলাকারীর বক্তব্য, বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দেশনায় আদানির সঙ্গে তাড়াহুড়া করে ২০১৭ সালে ২৫ বছর মেয়াদি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি হয়। ওই সময় দেশে আমদানি করা কয়লানির্ভর কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়নি। আদানির সঙ্গে চুক্তির ফলে পিডিবি নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চুক্তির অন্যতম একটি শর্ত হলো উৎপাদিত বিদ্যুৎতের অন্তত ৩৪ শতাংশ বাংলাদেশকে কিনতে হবে। অর্থাৎ পিডিবির চাহিদা যদি কমও থাকে বা বিদ্যুৎ নাও আনা হয়, তারপরও ৩৪ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের কয়লার খরচ দিতে হবে। ফলে আদানি গ্রুপের থেকে বিদ্যুৎ কিনতে বাংলাদেশ পিডিবি বিপুল ক্ষতি স্বীকার করছে। অপরদিকে, আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তিতে শুল্ক-কর ছাড়ের বিষয়ে এনবিআর অসম্মতি জানিয়েছিল। কিন্তু তা উপেক্ষা করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে নিজেরাই শুল্ক-কর অব্যাহতি দিয়ে চুক্তি সম্পাদন করে। এতে সরকার সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি শুল্ক হারিয়েছে বলে আদালতকে জানিয়েছেন মামলাকারীর আইনজীবী। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, আগামীদিনে ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চুক্তি বাতিলের সমুহ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এর ফলে আদানি গ্রুপ আলাদা করে পিটিশন দাখিল করে কিনা সেটাই এখন দেখার।
Discussion about this post