গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওতে জঙ্গি হামলা ঘিরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমাগত যুদ্ধের পারদ চড়ছে। এক সপ্তাহের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ভারতের মনোভাব পাল্টাচ্ছে না, বরং আরও বড় কোনও পরিকল্পনার দিকেই ইঙ্গিত করছে। এই অবস্থায় ভারতের অপর প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের সেনার প্রধান ওয়াকার উজ জামান সদ্য ফিরলেন এক বিদেশ সফর সেরে। যা নিয়েও এক বড় জল্পনার জন্ম দিচ্ছে। রটে গিয়েছে, বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান কাতার সফরে গিয়ে এক গোপন বৈঠক করেছেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে। আদৌ কী এই বৈঠক হয়েছে? আর যদি হয়েও থাকে তবে তার তাৎপর্য কি?
প্রসঙ্গত সদ্য কাতার সফরে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান। আর কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি কয়েকদিন আগেই এসেছিলেন ভারত সফরে। তাৎপর্যপূর্ণ দিক হল, তাঁকে ‘ভাই’ বলে সম্বোধন করে বিশেষভাবে ভারতে স্বাগত জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কাতারের আমীরও তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে নরেন্দ্র মোদি ও ভারতের প্রশংসা করতে ছাড়েননি। আর সেই দেশেই সদ্য সফর করে ফিরলেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান। বাংলাদেশ মিডিয়া সূত্রে জানা যাচ্ছে, কাতার সফরে গিয়ে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান সাক্ষাৎ করেন সে দেশের উপপ্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী, কাতার সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনীর উপপ্রধানের সঙ্গে। পাশাপাশি তিনি বৈঠক করেন, কাতারে অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট শেখ জোয়ান বিন হামাদ বিন খলিফা আল থানির সঙ্গেও। উল্লেখ্য, পদাধিকার বলে ওয়াকার উজ জামান বাংলাদেশ অলিম্পিক কমিটির প্রধানও বটে। এই পর্যন্ত বিষয়টি ঠিক ছিল, কিন্তু একটি সূত্র বলছে, বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে এক গোপন বৈঠক করেছেন। কয়েকটি ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে এই দাবি করলেও বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমগুলি এরকম কোন খবরের সত্যতা স্বীকার করেনি।
কয়েকটি সূত্রের দাবি, এই মুহূর্তে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নয়া দিল্লিতেই রয়েছেন। কারণ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে তাঁকে সর্বোচ্চ ব্যস্ততায় থাকতে হচ্ছে। অজিত ডোভাল প্রায় প্রতিদিনই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠকে উপস্থিত থাকছেন। এই পরিস্থিতিতে তিনি ভারত ছেড়ে কাতার সফর করে এসেছেন সেরকম কোনও খবর নেই। কারণ বাংলাদেশের সেনাপ্রধান গত ৩ মে কাতারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন এবং ৫ মে দেশে ফেরেন। কূটনৈতিক মহলের একাংশ বলছেন, কাতারে ওয়াকার উজ জামান এবং অজিত ডোভালের কোনও বিশেষ প্রতিনিধির মধ্যে বৈঠক হতেই পারে। কারণ এই মুহূর্তে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যেমন উত্তেজনা রয়েছে তেমনই ভারতের নজরে রয়েছে বাংলাদেশও। মুহাম্মদ ইউনূস প্রশাসন যেভাবে বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে মানবিক করিডোর দেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা দক্ষিণ এশিয়ার ভূ রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলে দিতে পারে।
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকায় মার্কিন বেস স্টেশন তৈরীর কাজও নাকি চলছে। সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, এটা ভারত ভালোভাবে মেনে নিচ্ছে না। অপরদিকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস যেভাবে ভারতকে উপেক্ষা করে নিজের মতো করে বাংলাদেশের ভূখণ্ড বিদেশি রাষ্ট্রকে বিলিয়ে দিতে চাইছেন। সেটাও ভারত ঠিকভাবে নিচ্ছে না। সম্প্রতি ইউনূস বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। ফলে অজিত ডোভাল নিজে না গেলেও তাঁর কোনও বিশেষ প্রতিনিধি কাতারে গিয়ে বাংলাদেশ সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করে আসতেই পারেন। কারণ ভারতের পশ্চিম প্রান্তে পাকিস্তানকে কেন্দ্র করে ভারতের যেমন সৈন্য সমাহার হয়েছে, ঠিক তেমনই পূর্বপ্রান্তে বাংলাদেশকে কেন্দ্র করেও ভারতের যুদ্ধ প্রস্তুতি চলছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন এ কথা বলাই বাহুল্য। এখন দেখার ওয়াকার ও ইউনূস সংঘাত ঠিক কোন দিকে যায়।
Discussion about this post