বাংলাদেশের রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জল্পনার কেন্দ্রবিন্দু আমেরিকার সহায়তা। এই মুহূর্তে আমেরিকা বাংলাদেশের কোন দলকে সাহায্য করবে ক্ষমতায় থাকতে। অর্থাৎ, সরকার গঠন করতে কোন দলকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বিদেশী শক্তি। আমেরিকা কি তবে এনসিপির দিকে ঝুঁকছে নাকি বিএনপির সঙ্গে এক প্রকার সমঝোতা সেরে ফেললো দেশটি। আর এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে উঠে আসবে ভারত প্রসঙ্গ, ভারতের সঙ্গে শেখ হাসিনার সম্পর্ক এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পর্ক এ ছাড়া লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনুসের সমঝোতা। আর এসবের উপর ভিত্তি করে এখন আমেরিকার প্রতিনিধিদের বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে ঠিক কোন কোন বিষয়গুলি উঠে আসছে।
আমেরিকার সঙ্গে কাদের সমঝোতা গড়ে উঠলো ডঃ মোঃ ইউনুস এর, এনসিপির, নাকি বিএনপি বা জামাতের। বাংলাদেশের নির্বাচন কবে হবে সেটা নিয়ে কিছুটা জটকাটলেও ধোঁয়াশা এখনো রয়েই গিয়েছে। আর নির্বাচন সংগঠিত হলেই এই নির্বাচনের মাধ্যমে কোন দল সরকার গঠন করতে চলেছে এই প্রশ্নটা এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক। এর মাঝেই জানা গিয়েছে লন্ডনে ইউনুস ও তারেক রহমান বৈঠকে স্বস্তি প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অর্থাৎ এই বৈঠকের ফলে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন এবং দেশে নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। ২২ জুন বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য এফেয়ার্সের বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বিএনপি তরফে এই তথ্য প্রকাশ করার পর থেকেই জল্পনা তৈরি হচ্ছে তবে কি আমেরিকার সঙ্গে বিএনপি’র সমঝোতা হয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে পূর্ববর্তী প্রতিটি সরকারকেই ক্ষমতায় থেকে বিদেশি শক্তিদের সঙ্গে সমঝোতা আসতে হয়েছে বিদেশি সংস্থাদের সঙ্গে এক হয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়েছে এক কথায় বিদেশী শক্তির সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করতে হয়েছে। আর যখন সেই সুসম্পর্ক ছেদ হতে দেখেছি তখনই দেখা গিয়েছে ব্যতিক্রমী কিছু ঘটতে, সরকার পতন হতেও দেখা দিয়েছে। কারণ শেখ হাসিনার আমলের ক্ষেত্রেও এই ঘটনা ঘটতে দেখা গিয়েছে। কারণ হাসিনা সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনা বারংবার বলেছেন তিনি যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথায় রাজি হয়ে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ তাদের দিয়ে দিতেন বা করিডোর দিতে সম্মত হতেন তবে হয়তো তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হতো না। মার্কিন ডিপটেটের গভীর ষড়যন্ত্রে ক্ষমতারচ্যুত হতে হয়েছে শেখ হাসিনাকে। যদি অনেকে হাসিনার এই বক্তব্যগুলিকে অতিরঞ্জিত বলে মনে করেন সেক্ষেত্রে প্রমাণ হিসেবে বর্তমান বাংলাদেশের পরিস্থিতি যথেষ্ট। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে করিডোর এবং বন্দর ইসুতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে এবং বিদেশীদের দ্বারা ক্ষমতায় আসা মহম্মদ ইউনুস বিদেশীদের খুশি করতেই সেই সমস্ত পরিকল্পনায় সম্মত হয়েছেন। তাই বিদেশী শক্তির বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার মন্তব্য এবং বর্তমানে বাংলাদেশে বিদেশি শক্তির প্রভাব দুটোই যেন একই সরলরেখায় চলছে।
উল্লেখ্য বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে প্রচার চলাকালীন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনুস এর বিরুদ্ধে নানা রকম হুংকার হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন। মনে করা হয়েছিল ভারতের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মুহাম্মদ ইউনুসকে ক্ষমতারচ্যুত করে শেখ হাসিনাকে তার হারানো ক্ষমতা ফিরিয়ে দেবে কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল একেবারেই অন্য চিত্র। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কখনোই তার পররাষ্ট্র নীতি থেকে পিছু হটবে না।
ফলে আবারো বাংলাদেশে নতুন একটি দল হিসেবে বিএনপি কে বেছে নিয়ে আমেরিকা সমঝোতার দিকে এগোনোর চেষ্টা করছে। লন্ডনে ডক্টর ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে স্বস্তি জানিয়ে নয়া সমীকরণ তৈরি করছে যুক্তরাষ্ট্র। এদিন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গুলশান কার্যালয়ে যান ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন চার্জ দ্য এফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন। বৈঠকে দুদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এবং পরে এক ব্রিফিংয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানান, ট্যারিফের বিষয়টি নিয়ে যেমন আলোচনা হয়েছে। এছাড়া লন্ডন বৈঠক নিয়েও আলোচনা হয়েছে ওই বৈঠকে।
Discussion about this post