বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস চার দিনের লন্ডন সফরে গিয়েছেন। আর সেখানে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পাশাপাশি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে শুক্রবার। কেউ কেউ বলছেন, মহম্মদ ইউনূসের এই বৈঠকের প্রতি আগ্রহ যতটা না রয়েছে, তার থেকে বেশি আগ্রহ রয়েছে বিএনপির। কিন্তু এই আগ্রহ কেন? এর পিছনে রহস্যটা কি? সেটা বোঝার জন্য একটা খবরই যথেষ্ট। লন্ডন যাচ্ছেন বিএনপি নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। অনেকে বলছেন, বিএনপি চায়, মহম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যে দূরত্ব রয়েছে, সেটা কমিয়ে নিয়ে আসতে। এর মধ্যে দিয়ে একটা নির্বাচন করে সামনের পথকে প্রশস্ত করার কথা ভাবছে বিএনপি। আর সেই কারণেই তারেক রহমান এই বৈঠকে রাজি হয়েছেন। যাতে অন্য কোনও পক্ষ সুযোগ নিতে না পারে। যাতে আলাপ আলোচোনা এবং বৈঠক করেই সমস্ত কিছু মেটানো যায়।
তবে অনেকে আবার বিএনপির দূর্বলতার কথাও তুলে ধরছেন। তার কারণ বিএনপি’র কিছু স্পর্শকাতর জায়গা রয়েছে। যেগুলি মহম্মদ ইউনূসের অজানা নয়। শুক্রবার লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে মূলত নির্বাচন ইস্যুতে কথা হবে, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। পাশাপাশি রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি বা তারেক রহমানের পক্ষ থেকে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানানো হতে পারে। তবে এই বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। এমনকি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় বা বিএনপির তরফে এই বিষয়ে কিছু বলেনি। তবে এখানে প্রশ্ন উঠছে, বিএনপি কোনওভাবে কি পিছু হটছে তাদের দাবি থেকে? যদি বিএনপির দাবি অনুযায়ী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণা দেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, তাহলে সেটার উপর কি ভরসা করা যায়? এর আগে বহুবার বিএনপি নির্বাচন ইস্যুতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা বারেবারে বলে এসেছে, এই সরকার নির্বাচন করতে ইচ্ছুক নয়। তাহলে কি নির্বাচনের আশা দেখতে পাচ্ছে বিএনপি? নাকি তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে শেষ চেষ্টা করছে নির্বাচন করানোর? অন্যদিকে রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছেন, বিএনপির কথামতো প্রধান উপদেষ্টা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন মেনে নিলেও, তিনি কি কোনও শর্ত দেবেন বিএনপিকে? কারণ এই মুহূর্তে ছাত্রনেতা থেকে এনসিপির নেতাদের একমাত্র উদ্দেশ্য, জুলাই সনদ ঘোষণাকরা। আর সেটার জেরেই শর্ত দিয়ে বেঁধে দিতে পারে বিএনপিকে। এদিকে সেটা মানতে বাধ্য হবে বিএনপি। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ জুলাই সনদ ঘোষিত হলে, রাষ্ট্রের সমস্ত কিছু ওলট-পালট হয়ে যেতে পারে। তবে কি বিএনপি ট্র্যাপে পা দিয়ে ফেলবে?
অন্যদিকে কেউ কেউ বলছেন, প্রধান উপদেষ্টা একটি মোক্ষম সুযোগ পেয়ে গেলেন। ২১ অগাষ্ট মামলার রায়ে তারেক রহমান সহ বেশ কিছু বিএনপি নেতৃত্ব যে খালাস পেয়েছে, সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার অনুমোদন পেয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, হত্যাকাণ্ড এবং গ্রেনেড হামলা এবং বিস্ফোরক। শুধু তাই নয়, পয়লা জুলাই এর মধ্যেই রাষ্ট্রপক্ষকে আপিল করতে হবে। অর্থাৎ খারা ঝুলচ্ছে বিএনপির উপর। কারণ যদি তারেক রহমান মামলায় জড়িয়ে পড়েন, তাহলে আগামী বছর ইউনুস নির্বাচন করালেও, তারেক রহমানের সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাটা কঠিন হয়ে পড়বে। ফলে এই মুহূর্তে মোহাম্মদ ইউনূসের হয়ে কথা বলা ছাড়া উপায় নেই বিএনপির। বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আর সেই কারণেই দেখা যাচ্ছে, মোহাম্মদ ইউনূসের যতটা আগ্রহ রয়েছে তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার, তার থেকে বেশি আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তারেক রহমানের। তবে বিএনপির একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল হিসেবে যদি মোহাম্মদ ইউনূসের কাছে যে কোন শর্তের মাথা নত করে, তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্ষেত্রটা অনেক বেশি দুর্বল হয়ে যাবে। তবে প্রত্যেকের নজর রয়েছে শুক্রবারের এই বৈঠকের দিকে। এখন দেখার, শেষমেষ কি হয়!
Discussion about this post