কয়েক মাস আগে কায়কতাও নৌঘাঁটি দখল করেছিল আরাকান আর্মি। এবার তাঁদের হাতে এল আরও বড় সাফল্য। মিয়ানমারের ইরাওয়াদি নদী সংলগ্ন সামরিক অবস্থানগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক নৌঘাঁটি দখল করে নিল বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির জোট। ফলে সামরিক জুন্টা বাহিনী এখন আরও কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। মিয়ানমারের সংবাদপত্র দি ইরাবতী জানিয়েছে, মিয়ানমারের পূর্বতন রাজধানী ইয়াঙ্গনের অদূরে থান্ডওয়ে নৌঘাঁটির দখল নিয়েছে বিদ্রোহী জোটের বৃহত্তম শরিক আরাকান আর্মির যোদ্ধারা। এমনকি পাশের গুরুত্বপূর্ণ গাওয়া শহরও তাদের দখলে চলে এসেছে। এবার সামনে শুধু দেশের প্রধান প্রশাসনিক এবং বাণিজ্যিক কেন্দ্র ইয়াঙ্গন। এই শহর বিদ্রোহীরা দখল নিতে পারলেই সামরিক জুন্টার পতন অনিবার্য বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে মসনদ দখল করেছিল মায়ানমার সেনা। মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী আং সান সু চি-র দল ‘ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি’র নেতৃত্বাধীন সরকারকে উৎখাত করেই সামরিক জুন্টা বাহিনী ক্ষমতায় এসেছিল। এর ঠিক আড়াই বছরের মাথায়, ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠী— ‘তাঙ ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি’ বা টিএনএল, ‘আরাকান আর্মি’ বা এএ এবং ‘মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি’ বা এমএনডিএএ মিলিয়ে নতুন জোট ‘থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়্যান্স’ সামরিক জুন্টা সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। তাঁদের অভিযানের পোশাকি নাম “অপারেশন-১০২৭”। সামরিক জুন্টার বিরুদ্ধে এই বিদ্রোহ দিনে দিনে গোটা মিয়ানমারে ছড়িয়ে পড়ে। তথ্য বলছে, সামরিক জুন্টা বিরোধী আরেকটি বিদ্রোহী জোট আত্মপ্রকাশ করে মিয়ানমারে। যার নাম “চিন ব্রাদারহুড”। এই জোটের শরিক ‘ইয়াও ডিফেন্স ফোর্স’, ‘ইয়াও আর্মি’ এবং ‘মনিওয়া পিপল্স ডিফেন্স ফোর্স’ চিন। এই নতুন জোট মূলত মিয়ানমারের চিন প্রদেশে সামরিক জুন্টার বিরুদ্ধে লড়াই করে ইতিমধ্যেই ওই প্রদেশটির পুরো দখল নিয়ে নিয়েছে।
মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী আং সান সু চি সমর্থক স্বঘোষিত ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’ নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ইরাওয়াদি’ বুধবার জানিয়েছে, বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ইয়াঙ্গনের অদূরে থাণ্ডওয়ে নৌঘাঁটির দখল নিয়েছে। এবার তাঁদের লক্ষ্য মিয়ানমারের পূর্বতন রাজধানী ইয়াঙ্গন। আরাকান আর্মি এবং তাঁদের সহযোগী বিদ্রোহী গোষ্ঠীরা ইতিমধ্যেই এগিয়ে চলেছে ইয়াঙ্গন এবং রাজধানী নেপিডোর দিকে। এই অঞ্চল কার্যত মায়ানমারের মূল প্রশাসনিক কেন্দ্র। সংবাদ সংস্থা ‘দ্য ইরাওয়াদি’ দাবি করছে, বিগত ১৩ মাসের গৃহযুদ্ধে এই প্রথম ইরাওয়াদি অববাহিকায় অনুপ্রবেশ করল আরাকান আর্মি। প্রসঙ্গত, গত রবিবার রাতে মণিপুর লাগোয়া চিন প্রদেশের দখল নিয়েছে মায়ানমারের বিদ্রোহীরা!
এই অংশেই মায়ানমারের কুকি জনগোষ্ঠীর বসবাস। এই জনগোষ্ঠী ভারতের মণিপুরেও রয়েছেন। ফলে নতুন করে মিয়ানমার-ভারত সীমান্ত পেরিয়ে মণিপুরে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যা নিয়ে চিন্তিত কেন্দ্রীয় সরকার। অপরদিকে সামরিক জুন্টা সরকারের সেনাবাহিনীকে হটিয়ে তাইল্যান্ড এবং চিনের সীমান্তবর্তী এলাকার বড় অংশ কয়েক মাস আগেই নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল বিদ্রোহী জোট। এখন শুধু বাকি মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডো এবং বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গন। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, আগামী ২ মাসের মধ্যেই তা আরাকান আর্মি ও তাঁদের সহযোগীদের দখলে চলে আসবে। আর এটা হলে, দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে যাবে। চাপে পড়তে পারে বাংলাদেশ।
Discussion about this post