কার্যত দেউলিয়া বাংলাদেশ। একদিকে তাঁরা ব্যস্ত অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলি সামলাতে, অন্যদিকে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো শিয়রে এসে দাঁড়িয়েছে এক মহা বিপদ। সেটা হল আরাকান আর্মি। যার প্রভাবে মিয়ানমার সীমান্তে প্রতিদিনই উত্তেজনা বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ২৭১ কিমি এখন মিয়ানমারের বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্টী আরাকান আর্মির দখলে। ফলে বিগত কয়েকদিনে প্রায় ৮০ হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ বাংলাদেশে নতুন করে অনুপ্রবেশ করেছে বলে জানা যাচ্ছে। আবার আরাকান আর্মিও জানিয়ে দিয়েছে, যদি রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে তাঁরা কড়া পদক্ষেপ নিতে পিছুপা হবে না। ফলে যে কোনও মুহূর্তে বাংলাদেশের বিশেষ কয়েকটি এলাকায় আরাকান আর্মি ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। আবার কয়েকটি আন্তর্জাতিক মিডিয়া দাবি করছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কয়েকটি এলাকা এখন আরাকান আর্মির দখলে এসে গিয়েছে। এখন প্রশ্ন হল, কেন আরাকান আর্মি বাংলাদেশের কয়েকটি বিশেষ অঞ্চলের দিকে হাত বাড়াতে চাইছে?
মিয়ানমারের এই সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী নিজেদের ওয়েবসাইটে এক ঘোষণায় জানিয়েছে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বরাবর, বিশেষ করে চট্টগ্রামে জিহাদি ও চরমপন্থী সংগঠনগুলি বৌদ্ধ ও হিন্দুদের ওপর নিপীড়ন ও নৃশংস অত্যাচার চালাচ্ছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলিতে, রোহিঙ্গা সলিডারিটি আর্মি, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি এবং আরাকান রোহিঙ্গা আর্মির মতো ১০ টিরও বেশি জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্যরা অবস্থান করছে। যারা হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ এবং অন্যান্য অপরাধের সাথে জড়িত। আরাকান আর্মি তাঁদের ওয়েবসাইটে আরও অভিযোগ করেছে যে, বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে থাকা জঙ্গি দলগুলি আল-কায়েদা এবং জামায়াত-ই-ইসলামির সাথে সম্পর্ক রেখে চলেছে। আবার গ্লোবাল আরাকান নেটওয়ার্কের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই জিহাদিরা মংডুর মুসলিম জনসংখ্যাকে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। তাঁরা স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়কে বৌদ্ধ ও হিন্দু-সহ অমুসলিম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য উস্কানি দিয়েছে। আরাকান আর্মির এহেন ঘোষণা এখন মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বিড়ম্বনার কারণ, এ কথা বলাই বাহুল্য। ফলে যে কোনও সময় আরাকান আর্মি যে বাংলাদেশের নির্দিষ্ট কয়েকটি এলাকায় হামলা চালাতে পারে সেটাই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ।
বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ১২ লক্ষের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে। তাঁরা চট্টগ্রাম জেলায় বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে রয়েছে। জানা যাচ্ছে, আরাকান আর্মি মংডু দখল নেওয়ার পর থেকে নাফ নদী পেরিয়ে প্রায় ৮০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে নতুন করে অনুপ্রবেশ করেছে। ফলে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা চাপ যেমন বাড়ছে, তেমনই আরাকান আর্মিও এটাকে ভালো চোখে দেখছে না। কারণ, রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলি সরাসরি আরাকান আর্মির সঙ্গে যুদ্ধ করেছে মিয়ানমারের জুন্টাবাহিনীর হয়ে। এবং তাঁরা রোহিঙ্গা মহিলা, শিশু, বয়স্কদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে গেরিলা আক্রমণ চালিয়ে এসেছে। এবার মংডুর পতনের পর সেই রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীর যোদ্ধারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে বলে জানতে পেরেছে আরাকান আর্মির যোদ্ধারা। মিয়ানমারের প্রথমসারির সংবাদপত্র ইরাবতীর প্রতিবেদন এবং আরাকান আর্মির সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি থেকে জানা যাচ্ছে তাঁরা ইতিমধ্যেই মহিলা, শিশু ও বৃদ্ধ রোহিঙ্গাদের উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত নাফ নদীর ওপর দুটি দ্বীপ জালিয়া দিয়া ও লাল দিয়াতে আরাকান আর্মির যোদ্ধারা ঘাঁটি গেড়েছে। তাঁরা সেখানে ভারী মাত্রায় গোলাবারুদ মোতায়েন করেছে। নাফ নদীর ওপর অবস্থিত আরও কয়েকটি দ্বীপে আরাকান আর্মির সহযোগী বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সদস্যরাও অবস্থান করছে। এমনকি নাফ নদীতে যাতে টেকনাফ, কক্সবাজারের মৎসজীবীরা মাছ ধরতে না যায় সেটাও ঘোষণা করেছে আরাকান আর্মি। ফলে সবধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে তাঁরা। অপরদিকে বাংলাদেশের তদারকি সরকার এখন দিশেহারা, তাঁরা কোন দিক সামলাবেন আর কোন দিকে ছাড় দেবেন। জানা যাচ্ছে, কায়েরোতে অনুষ্ঠিত ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সাহায্য প্রার্থনা করছেন।
Discussion about this post