শেখ হাসিনার জমানা শেষ হতেই বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান খবরের শিরোনামে। কখনও তাকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা সামনে এসেছে, কখনও আবার তার বিরুদ্ধে কু ঘটানোর পরিকল্পনা। সেগুলি প্রকাশ্যে আসতেই তোলপাড় হয়েছে পদ্মাপাড়। এইবার সামনে এল সেনাবাহিনীর বিপক্ষে আন্দোলন। চাকরিচ্যুত সেনাবাহিনীর সদস্যরা আন্দোলন করছে। তাদের দাবি, আওয়ামী লীগ সরকার থাকতে তাদের থেকে অন্যায়ভাবে চাকরি কেড়ে নিয়েছে। এখানেই প্রশ্ন তুলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। যদি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চাকরি যায়, তবে এই সময়টাকেই কেন তারা বেছে নিলেন? আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটেছে প্রায় ১০ মাস কেটে গিয়েছে। এতগুলো দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর কেন এই আন্দোলন? এখানেই যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।
চাকরিচ্যুত সেনাসদস্যদের যতদিন পর্যন্ত চাকরি পুনর্বহাল হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত তাদের বেতন ভাতা দিতে হবে। আর যদি কোনওভাবে তাদের চাকরি দেওয়া না যায়, তবে সরকারি সমস্ত সুযোগ সুবিধা দিতে হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ যতদিন সরকারে ছিল, ততদিন অন্ততপক্ষে ৪ জন সেনাপ্রধান বদল হয়েছেন। কাজেই যে কারণেই সেনা
সদস্যদের চাকরি যাক না কেন, তাতে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকারের দায় থাকার কথা নয়। আসলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা সেনাপ্রধানকে সরিয়ে দেওয়ার একটি ছক। যেটা দীর্ঘদিন ধরে করা হচ্ছে। কিন্তু সেভাবে সুবিধা করতে না পেরে এইবার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আন্দোলন। নেপথ্যে মোহাম্মদ ইউনূস রয়েছেন বলে মনে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের।
এছাড়াও উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে। হঠাৎ করে কারও চাকরি চলে যেতে পারে না। কারও বিরুদ্ধে জোরালো নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে, তবেই তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। সেই অভিযোগ গ্রাহ্য হলে তবেই উচ্চপদস্থ কর্তারা বিচার করেন। তারপর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কাজেই এটা সেনাপ্রধানের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়। এটি একটি কালেকটিভ সিদ্ধান্ত।
এই আবহে অনেকে হাসনাত আব্দুল্লাহর একটি বক্তব্য তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেছিলেন, যারা শেখ হাসিনাকে পালানোর জন্য করিডোর দিয়েছে, তাদের কাওকে ছাড়া হবে না। এই ছাত্রনেতা প্রথম থেকে টার্গেট করে রেখেছেন সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামানকে। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, সেনাপ্রধানের সাহায্য ছাড়া ভারত যেতে পারতেন না শেখ হাসিনা। কিন্তু এই সেনাপ্রধান ছিল বলেই সামরিক শাদিন জারি হয়নি। তিনি ছিলেন বলেই, ক্ষমতা, শাসনভার নিজের হাতে না নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে দিয়েছিলেন।
এমনকি এই সেনাপ্রধানকে গ্রেফতার করার ছক কষা হয়েছিল। তখন তিনি বিদেশ সফরে গিয়েছিলেন। যেটা আগে থেকে তিনি বুঝতে পেরে পরিস্থিতি আয়ত্তে নিয়ে আসেন।
কিছুদিন আগেই শোনা গিয়েছিল, ১১ ই মে মোঃ ইউনুস চুপিসারে পৌঁছে যান রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন চুপ্পুর দরবারে। সেখানে গিয়েই মহম্মদ ইউনুস বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামানকে সরিয়ে দেওয়ার একটি প্রস্তাব নিয়ে আসেন। এমনকি একটি চিঠিও দেওয়া হয় রাষ্ট্রপতিকে। আর সেই চিঠি ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর সঙ্গে তিনি বাহিনীর প্রধান দেখা করতে যান বলে খবর। আর সেখানেই আলোচিত হয়, দেশের মানুষ এখনও সেনাবাহিনীর ওপরই আস্থা রাখছে। আর তারপরই আলোচনা করে ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়া যায়।
তবে জেনারেল ওয়াকার উজ জামানের কিছু ভুলও ছিল। মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তিনি যদি প্রশ্রয় না দিতেন, তবে ছাত্রনেতারা মাথা তুলতে পারতেন না। অর্থাৎ বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য অনেকেই সেনাপ্রধানকে দায়ী করেন। তবে বাংলাদেশে যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় রয়েছে, তখন মোহাম্মদ ইউনূসের রাস টানা উচিত ছিল। কিন্তু তিনি সেটা করেননি। বরং দিনে দিনে কথাই কথাই যেভাবে বাংলাদেশে মিছিল, আন্দোলন হচ্ছে, তাতে অন্ত:কলহের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তিনি দেশের সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে চক্রান্তের বিনাশ না করে, বরং তাতে ইন্ধন দিয়ে আসছেন। এর ফল ভুগতে হবে গোটা বাংলাদেশকেই। বলছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। এখন আবার, চাকরিচ্যুত সেনা সদস্যদের আন্দোলন। এটিও ইন্ধনের ফল। এখন দেখার, শেষমেষ কি পরিস্থিতি হয় পদ্মাপাড়ের দেশে।
Discussion about this post