এই মুহূর্তে ঠিক কি কি চলছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে? এই প্রশ্নের উত্তরে সঠিক জবাব পাওয়া খুব কঠিন। তবে সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করলে খানিকটা আন্দাজ করা যায় বৈকি। যেমন বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি, যাদের সঙ্গে ইউনুস প্রশাসনের একটা ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়েছে। অপরদিকে একদা বিএনপি-র সহযোগী জামায়তে ইসলামী ইউনুস প্রশাসনে নিজেদের প্রভাব ভয়ানকভাবে বিস্তার করে ফেলেছে। সেখানে কোনঠাসা বিএনপি। বাংলাদেশে আরেক যে অক্ষ এই মুহূর্তে ক্ষমতাবান, তাঁরা হল সেনাবাহিনী। সেই সেনাবাহিনীও আড়াআড়ি বিভক্ত। একদিকে সেনাপ্রধান ও কিছু সিনিয়র কর্তা, অন্যদিকে জুনিয়ার ক্যাডেট অফিসাররা। এই জুনিয়র অফিসাররা আবার জামাতপন্থী বলেই জানা যাচ্ছে। ফলে উপদেষ্টামন্ডলী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব, জামাত-সহ কট্টরপন্থী ইসলামী সংগঠনগুলি এবং সেনাবাহিনীর একটা অংশ জোট বেঁধে বাংলাদেশের ক্ষমতায় কুক্ষিগত করেছে। যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় তাঁদের ইচ্ছাতেই দেশ পরিচালিত হচ্ছে। এই জোট মূলত পাকিস্তানপন্থী ও ভারতবিরোধী। অপরদিকে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান ভারত বন্ধু হিসেবে পরিচিত। তাই এই মুহূর্তে তাঁর বিপদ বাড়ছে বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ।
একটি সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, এই জানুয়ারি মাসেই বাংলাদেশে আরেকটি পট পরিবর্তন হতে চলেছে। সেটা হল উপদেষ্টা মন্ডলীতে রদবদল। উপদেষ্টা মন্ডলীর বেশ কয়েকজনের মাথায় খাড়া ঝুলছে, যাদের খুব শীঘ্রই দায়িত্ব ছাড়তে হবে। এবং সেই জায়গায় স্থান পাবেন জামাতপন্থীরা। জানা যাচ্ছে, এঁদের মধ্যে রয়েছেন সেনাবাহিনীর প্রাক্তন কয়েকজন কর্মকর্তা ও কয়েকজন আইনজীবী। যাদের বাংলাদেশ তদারকি সরকারের অংশ করে জামাত পুরোপুরি ক্ষমতা নিজেদের হাতে নিতে চাইছে। তাঁদের পরবর্তী টার্গেট সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করে গ্রেফতার করার চক্রান্ত চলছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। ওয়াকার-উজ-জামান সম্পর্কে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয়। অনেকেই মনে করছেন তিনিই সেফ গার্ড দিয়ে হাসিনাকে ভারতে পালিয়ে আসতে সাহায্য করেছেন। সেই কারণে তাঁকে বন্দি করা যায়নি। ফলে এই মুহূর্তে শেখ হাসিনা ভারতের নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে মাথা গলাতে পারছেন। যা কোনও মতেই মেনে নিতে পারছেন না জামাত বা বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতারা। অপরদিকে মুহাম্মদ ইউনুসের উপরেও মোহভঙ্গ হচ্ছে ক্ষমতাশালীদের একাংশের। তাঁকে হয়তো সরানো হবে না, কিন্তু তাঁর ডানা ছাটা হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বক্তব্য, বাংলাদেশের উপদেষ্টাদের বেশিরভাগ এনজিও-গ্রাম সদস্য। অর্থাৎ কেউ কেউ এনজিও চালান অথবা কেউ কেউ গ্রামীণ ব্যাঙ্কের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। ফলে তাঁরা মুহাম্মদ ইউনুসের অত্যন্ত ঘনিষ্ট। এঁদেরকেই সরিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। এই জায়গায় জামাতপন্থী বা বলা ভালো পাকিস্তানপন্থী কট্টরবাদীরা উপদেষ্টা হলে নীতি নির্ধারণ অনেকটাই সহজ হবে, এমনটাই দাবি একাংশের।
দীর্ঘদিন ধরেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতারা দাবি করছিলেন সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতির অপসারণ। এই দুজনেই শেখ হাসিনার আমলে নিযুক্ত ও হাসিনা ঘনিষ্ট বলে দাবি। কিন্তু আইনত জটিলতায় তা সম্ভব হচ্ছে না। সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান এবং রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুন্নুকে অপশারণের জন্য আইনসভায় প্রস্তাব পাশ করা জরুরি। কিন্তু হাসিনার পদত্যাগের পরই রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের আইনসভা বা পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়েছিলেন। এই মুহূর্তে একটা তদারকি সরকার দেশ শাসন করছে। যারা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত সরকার নয়। তাই তাঁদের ক্ষমতা নেই আইনানুগ পদ্ধতি মেনে রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধানকে ইমপিচমেন্ট করার। সেই কারণেই চলছে গভীর ষড়যন্ত্র, যাতে সেনাপ্রধানকে পদ থেকে সরিয়ে গ্রেফতার করা যায়। পাকিস্তান যেভাবে বর্তমান বাংলাদেশ প্রশাসনে মাথা গলাচ্ছে, তাতে খুব শীঘ্রই সে দেশে একটা বড় পরিবর্তন আসতে চলেছে, এ কথা বলাই বাহুল্য। এখন দেখার সেটা কিভাবে এবং কবে হয়।
Discussion about this post