আওয়ামী লীগের প্রায় ৪০ হাজার নেতাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য, আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনা। নির্বাচনে অংশ নিতে অবশ্যই চায় আওয়ামী লীগ। কিন্তু তাদের সাহাষ্য করছে কে? কাদের মাধ্যমে নির্বাচনে অংশ নেবে আওয়ামী লীগ? এর কারণ গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে চাপের মুখে পড়ে ৫ই অগাষ্ট দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। যার মাথায় বসেন নোবেল জয়ী মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। নিবন্ধন বাতিল করা হয়। বাংলাদেশে বেশিরভাব রাজনৈতিক দলগুলি আওয়ামী লীগের বিপক্ষে চলে গিয়েছে। তাই প্রশ্ন উঠেই যাচ্ছে। কে বা কারা আওয়ামী লীগকে জায়গা করে দেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য? এরমধ্যেই এসেছে একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য। শোনা যাচ্ছে, জাতীয় পার্টির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থক ও ভোটারদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে বেশিরভাগ নেতা কর্মীকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। অনেকে বলছেন, এতে করে সবুজ সংকেত পাচ্ছে শেখ হাসিনার দল। তবে কি সরকারের ভিতরেও আওয়ামী লীগকে সাহায্যের জন্য চর তৈরি হয়েছে? এখানেই রয়েছে আরও একটি গুরত্বপূর্ণ তথ্য। অনেকেই সন্দেহ করছেন, যেভাবে গণ অভ্যুত্থানের সময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের আটক করা হয়েছে, এরপর তারা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে, এতে সরকারেরই হাত রয়েছে। সরকার নিজেই চায়, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিক। কিন্তু কেন? যেভাবে শেখ হাসিনা সরকারের বিরোধীতা করা হয়েছে, তাতে হঠাৎ সরকার এটা করতে যাবে কেন? আজকের প্রতিবেদনে সেটাই উল্লেখ করব।
জানা যাচ্ছে, গ্রেফতার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্র জনতার উপর নির্যাতনের অভিযোগে মামলা হয়। এছাড়া রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে উস্কানি, ষড়যন্ত্র, নাশকতা-জনিত বিষয়ে ফৌজদারি মামলা হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে বেশিরভাগ আসামি জামিনে মুক্ত হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যদি তারা আসামী হয়ে থাকে, গুরতর অপরাধ করে থাকে, তবে জামিনে মুক্ত কেন হচ্ছে? অর্থাৎ তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছিল, সেগুলি আদালতে গিয়ে আর ধোপে টেকেনি। ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল। জানা যাচ্ছে, যাদের ৫ই অগাস্টের পর জেলে যেতে হয়েছিল, তাদের মধ্যে ৭০ ভাগ আওয়ামী কর্মী সমর্থক জামিন পেয়েছে। এই সংখ্যা জেলা পর্যায়ে প্রায় ৯০ ভাগ। একটি সূত্র মারফত খবর, ১৪ মাসে আওয়ামী লীগ, যুব লীগ, ছাত্র লীগ-সহ ৫৩ জন ১৮৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এরমধ্য়ে জামিন পেয়েছে ৩৯ হাজার ৪১ জন। একটি বিশেষ সূত্র মারফত খবর, ডি এম পি এই পর্যন্ত শেখ হাসিনা সরকারের ৭ হাজার ৭১২ জন সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে। তাদের মধ্যে জামিন পেয়েছে, ৪ হাজার ৫২ জন। চট্টগ্রাম মেট্রো পলিটন পুলিশ গ্রেফতার করেছে, ২ হাজার ৮৬ জনকে। জামিন পেয়েছে ১ হাজার ৫৫৬ জন। শতকরা ৭৪.৫৯ ভাগ। অন্যদিকে সিলেট মেট্রো পলিটন পুলিশ এলাকা-সহ ২৪ টি জেলা থেকে মুক্তি পেয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের ৯০ ভাগের বেশি সহযোগী। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার চাইছে আওয়ামী লীগ অংশ নিক আসন্ন নির্বাচনে। তাই এত পরিমাণ আটক ব্যক্তিরা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কেন? এখানে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আওয়ামী লীগকে নির্বাচন থেকে বাদ রাখলে বর্হি-বিশ্বে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তৈরি হতে পারে। তাহলে নির্বাচন করে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন, কোনও দেশই তাদের সঙ্গে কাজ করতে চায়বে না। ফলে এই সমস্ত দ্বিধা ধন্দ্ব কাটাতে এমন সিদ্ধান্ত সরকারের। এমনটাই মনে করছে কূটনৈতিক মহল। এমনকি সরাসরি আওয়ামী লীগ অংশ নিতে না পারলেও তারা জাতীয় পার্টির মাধ্যমে অংশ যাতে নিতে পারে, তারই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাই আওয়ামী লীগের তৃণমূল স্তরের নেতা-কর্মীকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। যদিও কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যত দিন যাবে, ততই সরকারের আসল লক্ষ্য পরিলক্ষিত হবে।












Discussion about this post