আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়েই কি বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন হবে? মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার বাংলাদেশে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করার পরই কার্যত একটা দেওয়াল লিখন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। কারণ, তার আগেই প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ঢাকায় সফররত যুক্তরাজ্যের এক মন্ত্রীকে জানিয়ে দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগকে কেন নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে দেওয়া হবে না। এখানেই শেষ নয়, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক উপদেষ্টা বা সরকারের সংশ্লিষ্ট অনেকেই একই দাবি করেছেন। এমনকি বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনও জানিয়ে দেয় আওয়ামী লীগের ভবিষ্যত।
সবমিলিয়ে এখনও পর্যন্ত যা ঠিক হয়ে আছে তাতে বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ কার্যত হচ্ছে না। এমনকি হাসিনাপন্থী আরও রাজনৈতিক দলকেও বাদ রাখা হতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। তাহলে বাংলাদেশের আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন অন্তর্ভূক্তিমূলক হচ্ছে না, অংশগ্রহণমূলকও হচ্ছে না। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি এই নির্বাচন আন্তর্জাতিক মহল মেনে নেবে? এই আবহেই বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক অডিও বার্তায় দাবি করেছেন, আওয়ামী লীগকে যতই বদমান করুক না কেন, বাংলাদেশের মানুষের কাছে আওয়ামী লীগের বিশ্বাস, আস্থা রয়েছে, এবং আওয়ামী লীগের উপরেই থাকবে।
শেখ হাসিনার বক্তব্য অনুযায়ী বাংলাদেশের নির্বাচন আওয়ামী লীগকে ছাড়া হয় না। কারণ, বাংলাদেশের একটা বড় অংশের মানুষ তাঁদের সমর্থন করে। সাম্প্রতিক কয়েকটি সমীক্ষা বা জরিপেও তা প্রমানিত হয়েছে। আবার, আওয়ামী লীগের ডাকা যে কোনও কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এবারের নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী নেত্রীর অবস্থানও বেশ চোখে পড়ার মতো। তিনি বলেছেন, মুহাম্মদ ইউনূসের এই তফসিল ঘোষণা তাঁরা প্রত্যাখ্যান করলেও নির্বাচন বয়কট করছে না। অর্থাৎ, এই নির্বাচনে তাঁরা রয়েছে। সেটা কিভাবে, সেটাই এখন আসল প্রশ্ন। কারণ, বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করেছে। ফলে হাসিনার দল সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারছে না। তবুও নেত্রী শেখ হাসিনা ওই অডিও বার্তায় বাংলাদেশের জনগণ এবং মহিলাদের উদ্দেশ্যে এক বিশেযষ বার্তা দিলেন। তিনি বলেছেন, আপনারা সকলে ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচার করুন, আওয়ামী লীগ নারী ক্ষমতায়ন এবং তরুণ সমাজের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের জন্য কি কি কাজ করেছে। সেই সঙ্গে তিনি মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধেও একাধিক অভিযোগ আনেন।
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী, এবং নিবন্ধন বাতিল হওয়া, একটি কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া দলের সভানেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার এই বক্তব্যগুলি যথেষ্টই বেমানান। তাঁর কথায় বোঝা যাচ্ছে, যতই ইউনূস সাহেব তাঁর দলকে আসন্ন নির্বাচনে সুযোগ দিতে না চান, তিনি জানেন তাঁর দল সুযোগ পাবে। তাই তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, দেশ সেবার সুযোগ পেলে তিনি কী কী করবেন। যাকে কার্যত নির্বাচনী ইস্তেহার বলা যেতে পারে। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, হাসিনা নির্বাচন ব্যবস্থা প্রতি তাঁর দলের আস্থা জ্ঞাপন করতেই কার্যত একটি নির্বাচনী ইস্তেহার ঘোষণা করেছেন বিজয় দিবসের ভাষণে। এমনকি সরাসরি তিনি আওয়ামী লিগের ভোটারদের ভোট বয়কটের ডাক দেননি। এর অর্থ হল, হাসিনা এখনও আশাবাদী তাঁর দল শেষ মুহূর্তে বাংলাদেশের ভোটে অংশ নিতে পারবেন। তাই হাসিনা বলেছেন, বিগত ১৫ বছর ৮ মাস ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনি বাংলাদেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতির আমুল পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। রীতিমতো পরিসংখ্যান দিয়েই তিনি বহু দাবি করেছেন। এবং এরপর যদি বাংলাদেশে ফিরতে পারেন তাহলে কি করবেন সেটাও জানিয়ে রেখাছেন। সবমিলিলে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা হলেও তিনি কার্যত ফুরফুরে মেজাজে। আর প্রবল চাপে রয়েছেন মুহাম্মদ ইউনূস।












Discussion about this post