বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। বলা হয়েছে, বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত, আওয়ামী লীগ কোনও কাজ করতে পারবে না। এর মধ্যেই আওয়ামী লীগের এক মাসের একটি কর্মসূচি প্রকাশ্যে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার চালানো হচ্ছে। আর সেই প্রচারে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে সরকার এবং প্রশাসন। পুলিশ নাকি তৎপরতা শুরু করেছে। এর মধ্যে ৬ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন সামনে এসেছে।সেই প্রতিবেদনটি সামনে এনেছেন আলজাজিরার সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান। সেই প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছে, পুলিশ ব্যাপক তৎপর হয়েছে। ১৬ জুন থেকে ১৬ ই জুলাই পর্যন্ত তাদের এই কার্যক্রম ঘোষণা করা হয়েছে। সেটাকে তারা কোনভাবেই ছোট করে দেখছে না। সেই কারণেই পুলিশের তরফে প্রবল ভাবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতেই পারে। এই কারণেই তৎপর হয়েছে পুলিশ প্রশাসন।
১৬ জুন থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত আওয়ামী লীগের আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মাঝে ২৩ শে জুন তাদের প্রতিষ্ঠা দিবস হয়েছে। সেদিন নাকি ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করবেন আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা। আর এই একমাস যাবত পুলিশ কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে, সেই নিয়ে পুলিশ ৬ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন সামনে এনেছে। ওই প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, পুলিশের সমস্ত আধিকারিককে সতর্ক থাকতে হবে। তারা উচ্চ ঝুঁকি এবং মধ্য ঝুঁকি বলে বর্ণনা করতে চাইছেন। তবে উচ্চপর্যয়ের কিছু হতে পারে তেমন কোনও ইঙ্গিত ওই প্রতিবেদনে নেই। ওই প্রতিবেদনে মধ্য ঝুঁকি বলে যে বিষয়টি তারা সামনে নিয়ে এসেছেন, সেখানে বলা হয়েছে, মাসব্যাপী ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসাবে ২৩ জুন আওয়ামী লীগের ৭৬ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী হিসাবে ভার্চুয়ালি বিভিন্ন নেতাকর্মীদের নিয়ে একটি কর্মসূচি পরিকল্পনা রয়েছে। এই কর্মসূচি সফল করতে বিশেষ করে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ এবং বিভিন্ন স্থানে মিছিল পালন করে সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচার করে তাদের সমর্থক ও নেতাদের উৎসাহ প্রদান করতে পারে।
এর পাশাপাশি আরও একটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় এবং সংশোধিত নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনিশ্চয়তা থেকে তারা এক মাসব্যাপী কর্মসূচি পালন করতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করার চেষ্টা করবে। অন্যদিকে নিম্ন ঝুঁকি হিসাবে তারা উল্লেখ করার চেষ্টা করছে, বিভিন্ন জায়গাতে আওয়ামী লীগের মিছিল, কর্মসূচি করে সাধারণ মানুষের সমর্থন রয়েছে তাদের প্রতি, এটা তারা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। শুধু তাই নয়, ২৩ শে জুন ভার্চুয়াল কর্মসূচিতে যারা অংশগ্রহণ করতে পারে, তাদের তালিকাও পুলিশ প্রকাশ করেছে। সেই তালিকায় রয়েছেন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ড: হাসান মাহমুদ, আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবিনা ইয়াসমিন তুহিন, ইলিয়াস মোল্লা সহ আরও বেশ কিছু জনের সেই তালিকায় নাম রয়েছে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের জন্য বাংলাদেশের যে যে জেলাগুলি ঝুঁকিপূর্ণ সেগুলোকেও তুলে ধরা হয়েছে। ঢাকা সহ মিরপুর, পল্লবী, শ্যামলী, উত্তরা, পল্টন, মতিঝিল, চট্টগ্রাম, ফরিদপুর, বরিশাল, সাতক্ষীরা, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ এই জেলাগুলির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও গোটা দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের গতিবিধি নজরে রাখার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, তাদের গ্রেপ্তার করতে পারে পুলিশ। সেই উদ্যোগ গ্রহণ হবে এই কর্মসূচির সময়সীমার মধ্যে। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনও উস্কানিমূলক বক্তব্য মনিটার করবে বলে।
তবে প্রশ্ন উঠছে এতগুলো মাস কেটে যাওয়ার পর, হঠাৎ করে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিয়ে এত তৎপরতা কেন পুলিশের? তাহলে কি আওয়ামী লীগ বড় কোনও কর্মসূচির দিকেই হচ্ছে? আর সেই আশঙ্কা থেকেই বলেছে এই তৎপরতা? অন্যদিকে আওয়ামী লীগ কি এর মাধ্যমে দেশে ফেরার চেষ্টা করছে? নাকি এই সমস্ত কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের মানুষকে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ? তবে তাদের কর্মসূচি আদেও পুলিশের বাধার সম্মুখীন হয় কিনা, সেটাই দেখার।
Discussion about this post