টেবিলে রাখা মহম্মদ আলি জিন্নাহর ছবি, তার দুই পাশে দুই দেশের পতাকা। একটি পাকিস্তানের অন্যটি বাংলাদেশের। টেবিলের দুই দিকে বসে আছেন দুই সেনাকর্তা। একজন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুণির অন্যজন বাংলাদেশ সেনার সেকেন্ড-ইন-কমাণ্ড প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামার-উল-হাসান। সম্প্রতি দুই দেশের দুই সেনাকর্তা এক গোপন বৈঠক করেন, কিন্তু বর্তমান প্রযুক্তির যুগে তা আর গোপনে রইল না। অতঃপর পাকিস্তানের তরফে বিবৃতি জারি করে জানানো হয়, দুই সেনাকর্তার বৈঠক সম্পর্কে। এবং আরও জানানো হয়, এই বৈঠকে উভয় কর্মকর্তা একমত হয়েছেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান ভাতৃপ্রতিম দেশ। এবং বাইরের যে কোনও শক্তির প্রভাব থাকা সত্বেও দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক অবশ্যই দৃঢ় থাকবে। এর থেকে একটা বিষয় পরিস্কার, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক ঝড়ের গতিতে এগিয়ে চলেছে। এবং সেই সম্পর্ক এখন দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যেও গাঢ় হচ্ছে।
বাংলাদেশ সেনার তরফে প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামার-উল-হাসান পাকিস্তানে গিয়ে দেখা করলেন পাকিস্তানের সর্বোচ্চ সেনা অফিসারের সঙ্গে। তাঁর সঙ্গে একান্ত বৈঠক করলেন। পাশাপাশি তিনি বৈঠক করেছেন পাকিস্তানের একাধিক সেনা কর্তার সঙ্গেও। ফলে বোঝাই যাচ্ছে এই বৈঠকগুলি কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আর এই বৈঠকগুলি এমন একটা সময় হল, যখন ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে ফাটল দেখা দিয়েছে। ফলে এই ধরণের বৈঠক কূটনৈতিক এবং সামরিক দিক থেকে অন্য বার্তা বহন করে বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞমহল। তাঁদের বক্তব্য, ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন হয়েছিল পাকিস্তান থেকে। স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল, ওই যুদ্ধে ভারত সরাসরি বাংলাদেশের পক্ষে লড়াই করেছিল। এরপর দীর্ঘ ৫৪ বছর পাকিস্তান থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছিল ঢাকা। কিন্তু গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতন এবং মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে তদারকি সরকারের ক্ষমতায় আসার পর থেকে পাকিস্তান সম্পর্কে অনেকটাই নরম হয়েছে ঢাকা। যা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
একাত্তরে পশ্চিম পাকিস্তানের খানসেনাদের থেকে মুক্তি চেয়েছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান। সেই গণহত্যা, কালো অধ্যায় ভুলে পাকিস্তানকেই এখন আলিঙ্গন করছে ঢাকা! আর ক্রমশ দূরত্ব বাড়ছে ভারতের সঙ্গে। এই পরিস্থিতিতে, পাকিস্তানের কাছে যুদ্ধবিমান কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে একটা ভারতবিরোধী হাওয়া তুমুল অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে জামায়তে ইসলামী এবং কট্টর ইসলামী সংগঠনগুলি বাংলাদেশের মাটিতে ভারতবিরোধী মনোভাব নিতে তদারকি সরকারকে উৎসাহিত করছে। এরই প্রভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে ঐতিহাসিক শত্রুতাকে অগ্রাহ্য করে ঢাকা ও ইসলামাবাদ কাছাকাছি চলে এসেছে। অনেকেই মনে করছেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য যে আন্দোলন হয়েছে বাংলাদেশে, এর পিছনেও পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর একটা ভূমিকা ছিল। ফলে শেখ হাসিন পরবর্তী ইউনূস শাসনে বহুবার পাকিস্তানের আইএসআই কর্তাদের দেখা গিয়েছে ঢাকায়। তখনই বোঝা গিয়েছিল বাংলাদেশ কোন পথে যাচ্ছে। এবার তা আরও পরিস্কার হল।
ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষমতায় এসেছিলেন জো বাইডেনের হাত ধরে। কিন্তু এবার যুক্তরাষ্ট্রে বাইডেন জমানা শেষ হতে চলল। এবার মার্কিন মসনদে বসতে চলেছেন রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর সঙ্গে আবার মুহাম্মদ ইউনূসের সম্পর্ক আদায়-কাঁচকলায়। ফলে তিনি যে বাংলাদেশকে প্রতি পদে বিপদে ফেলতে চাইবেন এ কথা অনেকেই দাবি করছেন। অপরদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার নরেন্দ্র মোদির প্রিয় বন্ধু হিসেবেও পরিচিত। ফলে ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার পরই মোদি বাংলাদেশকে উচিৎ শিক্ষা দিতে পারেন বলেই মনে করছেন বাংলাদেশের একাংশ। তাই ইউনূসের সেনাবাহিনী এবার পাকিস্তানের হাত ধরতে উদগ্রীব। এমনিতেই পাকিস্তানী সেনাকর্তারা এবার থেকে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেবেন বলে জানা গিয়েছিল। খুব সম্ভবত সেই বিষয়েই আলোচনা করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেকেন্ড-ইন-কমান্ড লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামার-উল-হাসান পাকিস্তানে গিয়েছিলেন। আরও জানা যাচ্ছে, অত্যাধুনিক জেএফ-১৭ থান্ডার যুদ্ধবিমান কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেন হাসান।
এই ফাইটার জেট চিনের তৈরি। কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে, অন্য সন্দেহ। কারণ, এই মুহূর্তে পাকিস্তানের সীমানা নিরাপদ নয় বলেই জানা যাচ্ছে। তালিবানী সেনা পাকিস্তানের ভিতর ঢুকে গোলাবর্ষণ করে গিয়েছে। এখনও পাক-আফগান সীমান্তে উত্তেজনা কমেনি। অপরদিকে ভারতের সঙ্গে তালিবান আফগানিস্তানের সম্পর্কের প্রভুত উন্নতি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানও হাত বাড়িয়েছে বাংলাদেশের দিকে। যাতে ভারতকে পূর্ব প্রান্তে চাপে রাখা যায়। সবমিলিয়ে ভারতের মাস্টারস্ট্রোকে দিশেহারা বাংলাদেশ ও পাকিস্তান একে অপরকে আঁকড়ে ধরে নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখতে চাইছে।
Discussion about this post