২৮ অক্টোবর সোমবার, বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলা বোয়ালমারী উপজেলার কাদিরদী ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র ১৯ বছরের হৃদয় পালের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল ধর্মীয় অবমাননাকরমূলক একটি পোস্ট করার। আর সেই অভিযোগের পর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ওই এলাকা। তাতেই দেখা গেল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জওয়ানদের অমানবিক ছবি। রীতিমতো ওই যুবকের চোখ বেঁধে কাঁধে চাপিয়ে তুলে নিয়ে গেল সেনা জওয়ানরা। এমনকি আশেপাশের উন্মত্ত জনতার দাবি মতো, গাড়িতে তুলে ওই যুবককে পদাঘাত করা থেকে শুরু করে লাঠিপেটাও করলেন ওই সেনা জওয়ানরা। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, বাংলাদেশের সেনাবাহিনী কী নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারছে না? কী ভাবে সেনা জওয়ানরা এই ধরণের অমানবিক কাজ করতে পারল?
বাংলাদেশের কয়েকটি সংবাদ পত্র এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন পোস্ট থেকে জানা যায়, কিছুদিন আগে কৃষ্ণা দাস রাহুল নামে ফেসবুক ফেক আইডি থেকে মুসলিম ধর্মের মহানবির উদ্দেশ্যে কিছু অবমাননাকর এবং কুরুচিকর পোস্ট করা হয়েছিল। ওই কলেজের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের ধারণা, কৃষ্ণ দাস রাহুল নামের ফেসবুক আইডিটি পরিচালনা করতেন হৃদয় পাল। শুধুমাত্র সন্দেহের বশবর্তী হয়েই তাঁকে মারধর শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনও ভাবে তাঁকে উদ্ধার করে অফিসে নিয়ে যায়। বাইরে তখন বিশাল জনতা বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। তাঁরা রীতিমতো কলেজ ঘেরাও করে দাবি তোলেন ওই ছাত্রকে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়ার। এমনকি উন্মত্ত জনতা ওই কলেজের কয়েকটি কক্ষ এবং বাইরে রাখা মোটরসাইকেল ভাঙচুর চালায়। এরপর স্থানীয় পুলিশ এবং পরে সেনাবাহিনীর একদল জওয়ান ঘটনাস্থলে আসেন। তাঁরাই হৃদয় পালের চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে যায় সেখান থেকে। এই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। (যদিও এই ভিডিও-র সত্যতা যাচাই করেনি নিউজ বর্তমান) তাতেই দেখা যাচ্ছে চুরান্ত অমানবিক দৃশ্য। ভিডিও উন্মত্ত জনতাকে সেনা জওয়ানদের উদ্দেশ্যে বলতে শোনা যাচ্ছে, স্যার পাঁচ মিনিটের জন্য আমাদের হাতে ছেড়ে দিন। ওকে আরও মারুন, পায়ের তলায় মারুন। ঠিকমতো চোখের শান্তি হল না। এরপরই দেখা গেল সেনা জওয়ানরা জনতার দাবি মেনে হৃদয় পাল নামে ওই যুবককে গাড়িতে তুলে বুট দিয়েই লাথি মারছেন, আবার কেউ লাঠিপেটা করছেন।
বাংলাদেশী লেখিকা তসলিমা নাসরিন সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ভিডিও পোস্ট করে লিখেছেন, ফরিদপুরের কিশোর হৃদয় পালের কী অপরাধ? কেন তাকে চোখ বেঁধে ওভাবে নিচ্ছে সেনাবাহিনীর লোকেরা? মনে হচ্ছে সে কোনও সিরিয়াল কিলার। বিরাট ক্রিমিনাল। পেছনে যারা আসছে, তাদের আমি হায়েনা বলতে চাই না, কারণ হায়েনারাও এত অসভ্য নয়, তারা পেটের ক্ষিধে মেটাতে মাংস খায়, বাঘ আর সিংহের আধ খাওয়া শিকারকেই মূলত খায়, বনের নিয়মের বাইরে তারা যায় না। প্রশ্ন উঠছে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু এক যুবককে শুধুমাত্র উন্মত্ত এবং ধর্মান্ধ জনতার দাবি মেনে এভাবে মারধোর করতে পারেন সেনা জওয়ানরা? কারণ, সেনাবাহিনীর কর্তব্য, প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার সুরক্ষিত করা। প্রতিটি নাগরিককে সুরক্ষা দেওয়াই সেনাবাহিনীর একমাত্র কর্তব্য। সেখানে সেনা জওয়ানরাই উন্মত্ত জনতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সংখ্যালঘু এক যুবককে মারধর করলেন।
বোঝাই যাচ্ছে বাংলাদেশ আছে বাংলাদেশেই। শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশে অবস্থিত সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর অত্যাচার নিয়ে ভারত বারবার সরব হয়েছে। যার বিরোধিতা করেছে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন তদারকি সরকারের উপদেষ্টারা। কিন্তু এই ভাইরাল ভিডিও চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল বাংলাদেশ সরকারের সেনাবাহিনীও সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ। জানা যাচ্ছে, মাস পাঁচেক আগেও হৃদয় পালের বিরুদ্ধে একই ধরণের অভিযোগ উঠেছিল। তখন পুলিশি তদন্তেই প্রমান হয়েছিল কৃষ্ণা দাস রাহুল নামে ফেসবুক আইডি তাঁর নয়। ওটা ফেক আইডি ছিল। ফলে সে বার হৃদয় মুক্তি পায় হৃদয়। কিন্তু এবার পুলিশ তো দূর অস্ত, সেনাবাহিনীই তাঁকে শাস্তি দিল বিনা তদন্ত বা বিনা বিচারে। এটাই কী পাল্টে যাওয়া বাংলাদেশ? প্রশ্ন সে দেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের।
Discussion about this post