ব্যাপারটা আগেই আন্দাজ করা গিয়েছিল। এবার প্রকাশ্যেই তা স্বীকার করলেন বাংলাদেশের নতুন তদারকি সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। বুধবার সচিবালয়ে আটটি জাতীয় দিবস বাতিলের সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের জানানোর সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর দাবি করেন। এরমধ্যে অন্যতম বাংলাদেশে মহম্মদ ইউনুস সরকার শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতি বাতিল করতে চায়। সংবিধান থেকে এই সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ বাদ দেওয়া হবে জানিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা। তাঁর আরও দাবি, মুক্তিযুদ্ধ কোনও ব্যক্তির অবদান নয়, একটো গোটা জাতি এই সংগ্রামে সামিল হয়েছিলেন। ফলে এবার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নয়া ইতিহাস লিখতে চাইছে নতুন তদারকি সরকার।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালেই শেখ হাসিনা সরকার বাংলাদেশের সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রয়াত শেখ মুজিবর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। ওই সংশোধনীতে আরও বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের সমস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানে শেখ মুজিবর রহমানের ছবি রাখতে হবে। এরপর প্রতি বছর ১৫ আগস্ট দিনটি তাঁর মৃত্যু দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত হয়। এবার শেথ হাসিনা সরকারের পতন এবং এবং নতুন তদারকি সরকার আসার পর বাংলাদেশে অনেক পরিবর্তন হচ্ছে। যার মধ্যে জাতীয় ছুটির নতুন তালিকা তৈরি হয়েছে। এবং তাতে অনিবার্যভাবে বাদ গিয়েছে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের ছুটিটিও। শেখ মুজিরের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটিও সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করে এবং ওই দিনটি জাতীয় ছুটি ঘোষণা করেছিল হাসিনা সরকার। এবার ইউনুস সরকার সেই ছুটিও বাতিল করে দিয়েছে।
চলতি বছরের আগস্ট মাসে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদল হয়েছিল। ছাত্র আন্দোলনের চাপে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে হয়েছিল। এরপরই বাংলাদেশজুড়ে শেখ মুজিবরের মূর্তি, স্থাপত্য ভেঙে ফেলে একদল মানুষ। তখনই আশঙ্কা করা হয়েছিল ভবিষ্যতে বাংলাদেশ কোন পথে এগোবে। সেই আশঙ্কাই এবার সত্যি করে বাংলাদেশের নতুন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম পরিস্কার জানিয়ে দিচ্ছেন, ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, গোটা ইতিহাস নতুন করে লেখা হবে। একপেশে ইতিহাস বাদ দেবে বর্তমান সরকার। প্রসঙ্গত. এর ২০১০ সালেই শেখ হাসিনা সরকারের এই সংবিধান সংশোধন করে শেখ মুজিবর রহমানকে জাতির পিতা ঘোষণা করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছিল বিএনপি-সহ তৎকালীন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি।
এবার মুহাম্মদ ইউনূসের তদারকি সরকার বিএনপি-জামাতের দাবিকেই মান্যতা দিল। রাজনৈতিক মহলের একাংশ যদিও প্রশ্ন তুলছেন, জনতার রায়ে না জেতা কোনও প্রশাসক এভাবে সংবিধান বদল করতে পারে কিনা। কিন্তু অনেকেই মেনে নিচ্ছেন, মুহাম্মদ ইউনূসের এই সরকারকে কার্যত সমর্থন করছে বিএনপি-জামাত জোট। ফলে আগামীদিনে এটাই চল হয়ে যাবে। আবার একটা পক্ষ দাবি করছে, বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ইউনূস সরকারের এই ধরণের স্বৈরাচারী মনোভাব ভালোভাবে নিচ্ছে না। কারণ সেনাবাহিনী বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, বাংলাদেশের সংবিধান পরিবর্তন করা যাবে না। ফলে একটা বিরোধ তৈরি হয়েছে দুই পক্ষের। ফলে আগামীদিনে যদি বাংলাদেশের ইতিহাস পাল্টে ফেলতে ইউনূস সরকারকে কোনও বাঁধার সম্মুখীন হতে হয় কিনা সেটাই দেখার বিষয়।
Discussion about this post