এই মুহূর্তে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল চিন সফরে রয়েছেন। গত সোমবার বেজিংয়ে চিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের সাথে দেখা করেছেন এবং সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে ভারতের নতুন অবস্থান সম্পর্কে চিনকে অবগত করেছেন। কিন্তু কূটনৈতিক মহলের মতে অজিত ডোভাল শুধুমাত্র এই কারণেই বেজিং যাননি। তার এই চীন শহর আরও অনেক গুরুত্ব বহন করে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেদের একটি সামরিক ঘাঁটি তৈরি করতে চাইছে, তখন অজিত ডোভালের এই চিন সফর যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। অপরদিকে ভারতের সাথে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে কার্যত “দেউলিয়া” বাংলাদেশ একটি বড় পদক্ষেপ নিতে চলেছে বলে জানা যাচ্ছে। বাংলাদেশের মুহাম্মদ ইউনূস সরকার দেশের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার জন্য লন্ডনে একটি প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে। যারা যুক্তরাজ্য থেকে নতুন বিমান প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করবে। এও জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যের সাথে কয়েক হাজার কোটি টাকার একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করতে পারে। সবমিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ রাজনৈতিক পরিস্থিতি দ্রুত বদল ঘটতে চলেছে।
আমরা জানি পাকিস্তানের সেনাপ্রধান তথা নব্য ফিল্ড মার্শাল জেনারেল আসিম মুনির এবং পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের প্রধান জেনারেল আসিম মালিকের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজন বেজিংকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একদিকে যেমন পাকিস্তানকে হাতে রাখতে চাইছে তেমনই বাংলাদেশেও তাঁরা ঘাঁটি গাডতে চাইছে। বিষয়টি যেমন ভারতের জন্য অস্বস্তিকর ঠিক তেমনই চিনের কাছেও চিন্তাজনক। বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে রাষ্ট্র সংঘের আড়ালে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে আরাকান আর্মির জন্য যে মানবিক সহায়তা করিডর তৈরি করতে চাইছে মুহাম্মদ ইউনূস ও খলিলুর রহমান। কাজে মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথাতেই হচ্ছে সেটা এক কথায় পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। এটা চিন ও রাশিয়ার জন্য একটা হুমকি। ভারত সেটা ভালোভাবেই জানে। সেই কারণেই এসসিও সম্মেলনের আগে অজিত ডোভালের বেজিং পৌঁছে যাওয়া। কূটনৈতিক মহলের মতে, রাশিয়ার মধ্যস্থতায় ভারত ও চিনের মধ্যে এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হচ্ছে। লক্ষ্য দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আটকানো আর উপলক্ষ্য হল পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে সবক শেখানো। সূত্রের খবর, বেজিংয়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীও আসছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ঠেকাতে রাশিয়া চীন ও ভারতের একটা জোট তৈরির চেষ্টা চলছে বলে কূটনৈতিক মহলের অভিমত।
ভারত যেভাবে পাকিস্তানের নটি সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি ধ্বংস করেছে অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে, তাতে অনেকটাই আতঙ্কে ভুগছে মুহাম্মদ ইউনূসের তদারকি সরকার। কারণ ভারত অপারেশন সিঁদুর স্থগিত করেনি, আর বাংলাদেশকে ক্রমাগত সন্ত্রাসবাদী ও জঙ্গি নেতাদের জেল মুক্তি নিয়ে চোখ রাঙিয়ে যাচ্ছে। ফলে ভারত যদি বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদী ও জঙ্গি সংগঠন গুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করে অথবা সামরিক অভিযান শুরু করে তাহলে বাংলাদেশ তা ঠেকানোর মতো জায়গায় নেই। সম্ভবত সেই আশঙ্কা থেকেই ব্রিটেনে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে দিলেন মুহাম্মদ ইউনূস। তাৎপর্যপূর্ণভাবে ওই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন রংপুর এরিয়ার কমান্ডার এবং ৬৬ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ কামরুল হাসান। যিনি ঘোষিতভাবেই বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামানের বিরুদ্ধে। এই কামরুল হাসান পাকিস্তানপন্থী এবং খলিলুর রহমানের ঘনিষ্ট। জানা যাচ্ছে, ওই প্রতিনিধি দলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর ছয়জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও রয়েছেন। কূটনৈতিক মহলে দাবি, এই মাসের শেষের দিকে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামানের চিন সফরে যাওয়ার কথা ছিল। চিন থেকে অস্ত্রশস্ত্র ও সামরিক সাজ সরঞ্জাম কেনার ব্যাপারে সেনাপ্রধানের সফর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই সফর বাতিল হয়েছে। এখন জানা যাচ্ছে যুক্তরাজ্য থেকে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম কিনতে চায় বাংলাদেশ। এর জন্য বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করছে না কার্যত দেউলিয়া হতে বসা ইউনুস সরকার।
বাংলাদেশ সম্ভবত যুক্তরাজ্যের স্কাই সাবের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম পাবে। এই স্কাই সাবের হল ব্রিটেনে তৈরি মাঝারি পাল্লার স্থল ভিত্তিক মোবাইল বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এর আনুমানিক মূল্য ৯০০ মিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় ৭, ৭০০ কোটি টাকা। ভারতীয় সেনার অপারেশন সিঁদুরের সময় পাকিস্তানে চিনা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যে পুরোপুরি পর্যুদস্ত হয়েছিল সেটা প্রমাণিত। তাই মুহাম্মদ ইউনূস সরকার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য কোন একটি একক দেশের উপর নির্ভরশীল না হয়ে যুক্তরাজ্যের মতো পশ্চিমা দেশগুলির সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহায়তা বৃদ্ধির কথা বিবেচনা করছে।
এখন প্রশ্ন হল চিন কি হাত গুটিয়ে বসে থাকবে? তারাও পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখছে। আর ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল ইতিমধ্যেই চীনের বিদেশ মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে মার্কিন ডিপ স্টেট ও পশ্চিমা দেশগুলির এই ধরনের অস্ত্র বিক্রির ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের ফন্দি চিনের কাছে ফাঁস করে এসেছেন। কূটনৈতিক মহলের মতে খুব শীঘ্রই ইউনূসের সব জড়িজুড়ি খতম হতে চলেছে। চিন যেমন পাকিস্তানের উপর ক্ষুব্ধ, তেমনি বাংলাদেশের ওপরেও। অপরদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাণিজ্য নীতি, ট্যারিফ যুদ্ধ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় পা রাখার চেষ্টা নিয়েও বিব্রত বেজিং। ফলে রাশিয়া, চিন ও ইন্ডিয়া একযোগে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি হওয়া সময়ের অপেক্ষা। আর এটা হলেই খেল খতম মুহাম্মদ ইউনূসের।
Discussion about this post