বাংলাদেশ অস্থিরতা যেন ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে। সদ্য অন্তর্বর্তী সরকারের তরফে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম সে দেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেনাপ্রধান কে নিশানা করে তার পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে দেশকে বাঁচানোর উপায় কি? তবে কি শেষমেষ রাষ্ট্রপতিকে জরুরি অবস্থা ঘোষণা দিতে হবে। জল্পনা এখন তুঙ্গে।
বাংলাদেশের সংবিধানকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে বিভিন্নভাবে। কেউ কেউ বলছেন ১৪১-ক অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির নিজের সিদ্ধান্তে জরুরি অবস্থা জারি করার কোন অধিকার নেই। এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার পূর্বেই দেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি স্বাক্ষর প্রয়োজন পড়বে। কিন্তু ১৪১ এর ক ৩ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন ছাড়া বা প্রতি স্বাক্ষর ছাড়াও দেশে প্রয়োজন হলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন।
বাংলাদেশ জুড়ে এখন দিকে দিকে অশান্তির সংঘর্ষ এক প্রকার অস্থিরতা শুরু হচ্ছে পদ্মা পাড়ে। আর এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির পেছনে একটা কারণ সম্পত্তি দর্শনে হাসনাত আব্দুল্লার নেতৃত্বে ছাত্র নেতাদের বিক্ষোভ কর্মসূচি সংঘটিত হয়েছিল প্রধান উপদেষ্টা বাসভবন যমুনার সামনে তাদের সেই বিক্ষোভের দাবি মেনে প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনুস যে শুধু দেশে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে তা কিন্তু নয় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের তরফে জানানো হয়েছিল ১০ ই মে থেকে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র পেশ করা হবে। আর খুব স্বাভাবিকভাবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা এই জুলাই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের সংবিধান বাতিল হতে পারে। Ncp ছাত্র নেতাদের কথায় যেটি মুজিববাদী সংবিধান, ৭২ এর সংবিধান অর্থাৎ বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধান তা বাতিল হয়ে যাবে। আর এখন স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠছে এই সংবিধান বাতিল হয়ে গেলে এই সংবিধানের সঙ্গে জড়িত সাংবিধানিক পদগুলির কি হবে?
মূলত বাংলাদেশেরসংবিধানের শীর্ষ ও সাংবিধানিক পদগুলির মধ্যে প্রথম হল রাষ্ট্রপতি । এবার একটু ফিরে যেতে হবে ৫ ই আগস্টের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে, যেদিন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ্জামান জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে স্পষ্টতই জানালেন যে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়েছে এবং সেই সঙ্গে দেশের জানমালের দায়িত্ব নিচ্ছে সেনাবাহিনী। এবং খুব শীঘ্রই একটি অন্তর্ভুক্তির সরকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সেনাবাহিনী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। কিন্তু তার বক্তব্য একবারও বলা হলো না যে দেশের সংবিধান বাতিল হচ্ছে, ৭২ এর সংবিধান মুছে ফেলা হচ্ছে। এরপর সেনাপ্রধান দেশে অন্তর কর্তৃকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল গুলিকে সঙ্গে নিয়ে রওনা হন বঙ্গভবনে অর্থাৎ, বাংলাদেশের সাংবিধানিক প্রধান রাষ্ট্রপতির ভবনে। আর সেই সময় উন্মুক্ত জনতার অংশটি দেয় ধ্বংস হয়ে যায় গণভবন হতে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি স্থাপনাতে যা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছিল সেনাবাহিনী কিন্তু একমাত্র বঙ্গভবনটিকে সেনাবাহিনীর তরফ থেকে কড়া নিরাপত্তা দিয়ে রক্ষা করা হয়েছিল। এবং এটা সাংবিধানিক শূন্যতাকে পূর্ণ করতে রাষ্ট্রপতির পদটিকে সাংবিধানিক প্রধান পদ হিসেবে মর্যাদা দিয়ে, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বৈঠকটিকে সেনাপ্রধান সুকৌশলে বঙ্গভবনে নিয়ে যান। আর এরপর ৫ই আগস্ট রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন চুপ্পু যখন জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছেন তখন তার পিছনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় তিন বাহিনীর প্রধান কে। আর রাষ্ট্রপতি তরফে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে বলা হয় বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে দ্রুত মুক্তি দেওয়া হবে এবং দেশে একটি অন্তর্ভুক্তির সরকার গঠন করা হবে যাতে তার তত্ত্বাবধানে দেশে খুব শীঘ্রই একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করা সম্ভব হয়। অর্থাৎ স্পষ্টভাবেই তার কথা বোঝা দিয়েছে আওয়ামী দেখতে যেহেতু সত্য ক্ষমতাস্যুত করা হয়েছিল তাই সেই মুহূর্তে বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিকে চিহ্নিত করা হয়েছে যার ফলে দ্রুত বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ারও ঘোষণা করেন রাষ্ট্রপতি। পাশাপাশি বাংলাদেশের মূলত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার স্থাপনের মূল লক্ষ্য ছিল সেই সরকারের দ্বারা দেশে একটি সুষ্ঠু স্বাভাবিক অবাধ নির্বাচন কিন্তু বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস তিনি ক্ষমতার লোভী একজন ব্যক্তি। দেশের নির্বাচনটিকে বারে বারে বিলম্বিত করছেন নানারকম প্রতিকূলতাকে সামনে এনে। এমনকি তার সমন্বয়ক ছাত্র নেতাদের দিয়ে একটি পৃথক রাজনৈতিক দল গঠনেরও সুপারিশ দিয়েছিলেন মোহাম্মদ ইউনুস আর এরপরেই ছাত্র সমন্বয়কদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি জন্ম নেয় বাংলাদেশের রাজনীতিতে। অর্থাৎ ইউনুসের পরিকল্পনা এখন জলের মতো পরিষ্কার, অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতায় বসে নিজের জায়গা পাকা করতে অন্য একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে সেটিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করিয়ে সেই দলের প্রধান হিসেবে নিজেকে আসীন করতে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের মতো বাংলাদেশের প্রাচীন রাজনৈতিক দল তাদের যখন নির্বাচনে অংশগ্রহণের সম্ভাবনা ধীরে ধীরে প্রকট হচ্ছে তখন ছাত্র নেতাদের বিক্ষোভ ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচ্ছন্ন মততে গোটা দেশে আওয়ামী লীগের সমস্ত কার্যক্রমের উপর নিষেধার আরোপ করা হলো।
এবার নিজের ক্ষমতা রক্ষার লড়াইয়ে যখন প্রথম পদক্ষেপে সফল হল মোহাম্মাদ ইউনুস তখন তার পরবর্তী নিশানার দিকে গুটি সাজাতে শুরু করল ইউনুস ও তার বাহিনী। অর্থাৎ সেনাপ্রধান তাকে বরখাস্ত করার জন্য বুড়িয়া হয়ে উঠলো মোহাম্মদ ইউনুস। তবে রাষ্ট্রপতি ও তিন বাহিনীর যৌথ তৎপরতায় সেই পরিকল্পনা অসফল ই থেকে গেল মোহাম্মদ ইউনুসের।
কিন্তু এখানেই থেমে থাকে নি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। বাংলাদেশে আরো দু মাসের জন্য সেনাবাহিনীর পাওয়ার বৃদ্ধি করে লড়াইয়ের মাঝে সেনাপ্রধান কে রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন পাশাপাশি বাংলাদেশের অন্তরে যেন আরো একটি সংঘাত সৃষ্টি হল। এখন এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি প্রতি মুহূর্তে সরকারের একের পর এক ষড়যন্ত্র,ক্ষমতা ধরে রাখার লড়াই সবটাই যেন বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে অস্থির করে তুলছে এখন এই পরিস্থিতিতে সংবিধান মেনে রাষ্ট্রপতি সর্বশেষ জরুরি অবস্থা জারি করার ঘোষণা দেয় কিনা সেদিকেই নজর বিশেষজ্ঞ মহলের।
Discussion about this post