বাংলার এই প্রবাদের কথা হয়তো অনেকে শুনে থাকবেন – দেখা দেখি স্যাকা নাচে। একটু ব্যাখ্যা করা যাক। কেউ একজন মনের আন্দে আপনভোলা হয়ে নেচে চলেছেন। আর তাকে দেখা বলা নেই কওয়া নেই আরও একজন নাচতে শুরু করল। এই দ্বিতীয়জনের নেচে ওঠার কোনও কারণ তল খুঁজলে পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশ হল সেই স্যাকা। কাউকে নাচতে দেখলেই হল। তিরিং করে নাচতে শুরু করবে। কেন এই গৌড়চন্দ্রিকা, এবার সেই ব্যাখ্যায় যাওয়া যাক।
সম্প্রতি ঢাকায় ভারতীয় ভিসা আবেদনকেন্দ্র বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দিল্লি। তারপরে রাজশাহী ও খুলনার ভিসা সেন্টারও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় চট্টগ্রামের ভিসা সেন্টার। এই সবকিছুর পিছনে সুনির্দিষ্ট কারণ ছিল। মূল কারণ নিরাপত্তা। সম্প্রতি ভারতের কূটনৈতিক দফতরের সামনে হয়েছে বিক্ষোভ। উদ্বেগজনক নিরাপত্তা পরিস্থিতির কথা জানিয়ে ঢাকার ভিসা কেন্দ্র বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সাউথব্লক। এই কূটনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে মৃত্যু হয় হাদির। এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তেতে ওঠে গোটা বাংলাদেশ। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা ভারতের ডেপুটি হাইকমিশন ঘেরাওয়ের ডাক দেয় বিশেষ একটি গোষ্ঠী। এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে চট্টগ্রামে ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার দফতর লক্ষ্য করে ইট ছোড়ার অভিযোগ ওঠে। ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বিশাল পুলিশবাহিনী। বিক্ষোভকারীদের হঠাতে পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে হয়। ফাটাতে হয় কাঁদানে গ্যাসের সেল।
উত্তেজনা ছড়ায় সিলেটেও। তার পরেই রবিবার, ২১ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের ভিসা-কেন্দ্র বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। উদ্ভূত পরিস্থিতির নিরিখে সিলেটে ভারতীয় উপদূতাবাসের কাছেও নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়। কী করে এরকম একটি হাইসিকিউরিটি জোনে উত্তেজিত জনতা ঢুকে পড়ল, ইট ছুড়ল, সেটা তো বড়ো প্রশ্ন। সম্প্রতি দিল্লিতেও বাংলাদেশের হাইকমিশনের সামনে সম্প্রতি বিক্ষোভ হয়েছে। বাংলাদেশের কিছু সংবাদমাধ্যমে তা অতিরঞ্জিত করে দেখানো হয় বলে অভিযোগ নয়াদিল্লির। তার বিরোধিতা করে ইতিমধ্যে বিবৃতি দিয়েছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, বিক্ষোভ হলেও বিক্ষোভকারীরা কেউই বাংলাদেশের কূটনৈতিক দফতরের ভিতরে প্রবেশ করেননি। তবে ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কূটনৈতিক টানাপড়েন জিইয়ে রাখার চেষ্টা দেখা গিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের। ভারত সরকার ওই ঘটনাকে ‘সরলীকরণ’ করার চেষ্টা করছে বলে দাবি করে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার।
এই বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন যা বলেছেন, তা একবার শোনা যাক –
ভারতের বক্তব্য সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করি। প্রত্যাখ্যান করি এই জন্য যে বিষয়টি যখন উত্থাপন করা হয়েছে, আমাদের মিশন কূটনৈতিক এলাকার গভীরে অবস্থিত। এমনটা নয় যে এটা বাইরের কোনও জায়গা… তারা বলছে ২০-২৫ জনের একটি দল … হতে পারে… কিন্তু সেটা কথা নয়। ২৫ জন বা ৩০ জনের একটা হিন্দু চরমপন্থী সংগঠনের একটি দল এতদূর পর্যন্ত আসতে পারবে কেন? তার মানে তাদেরকে আসতে দেওয়া হয়েছে। আসতে পারার কথা নয় কিন্তু। এবং সেখানে দাঁড়িয়ে তারপরে যে তারা প্রতিবাদের স্লোগান দিয়েছে। আরও অনেক কিছু বলেছে, আমরা জানি। আমাদের কাছে যে রিপোর্ট এসেছে তাতে বলা হয়েছে তারা হত্যার হুমকি দিয়েছে।
তাই, ভারত যেহেতু ভিসা সেন্টার বন্ধ করেছে, সে কারণে বাংলাদেশ ভারতে তাদের ভিসা সেন্টার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সোমবার রাতে এক সংক্ষিপ্ত বিজ্ঞপ্তিতে আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন জানিয়েছে, অনিবার্য কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত আগরতলার ভিসা সেন্টার ও কনস্যুলার পরিষেবা বন্ধ থাকবে। এর আগে গত সোমবার নয়াদিল্লি ও শিলিগুড়িতেও ভিসা সেন্টার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা। রাতারাতি সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গেল বাংলাদেশের তিনটি ভিসা পরিষেবা কেন্দ্র। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপড়েন চলছিল। এবার সেই টানাপড়েনে ভিসা-কেন্দ্রের সমীকরণও জুড়ে গেল।
গত দেড় বছর ধরে বাংলাদেশে চলছে ভারত – বিরোধিতা। ভারতের কোনও প্রান্তে কিন্তু এতোদিন পর্যন্ত কোথাও সে অর্থে বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ হয়নি। এবার কিন্তু দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বাংলাদেশ-বিরোধিতার সুর চড়তে শুরু করেছে।












Discussion about this post