আরও একটি ‘বিচ্ছিন্ন’ ঘটনা ঘটে গেল বাংলাদেশে। ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ শব্দটি নিউজ বর্তমান-য়ের নয়। এই শব্দ বন্ধনি পদ্মাপারের এক ভদ্রলোকের। বিশেষ একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে তাঁকে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা প্রশ্ন করেন। জানতে চাওয়া হয় হাদির মৃত্যু প্রেক্ষিতে তিনি কি মনে করেন না আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে। তাঁর জবাব ছিল – ‘আইন-শৃঙ্খলার অবনতি কোথায় হল ? একটু মাঝে-মধ্যে খুন-খারাবি হয়। এই যে হাদির একটা ঘটনা হয়েছে, আমরা এগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মনে করি।’
গত ২৬ নভেম্বর এই ভদ্রলোকের মুখে শোনা যায় একেবারে উল্টোকথা। ওই দিন তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পারফেক্ট লেভেলে চলে গেছে বলে তিনি মনে করেন না। তবে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে। তার কাছে এটাও জানতে চাওয়া হয়, যে কোনও একটি স্বার্থাণ্বেষী গোষ্ঠী নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করছে। এই ব্যাপারে তাঁর দফতর কী পদক্ষেপ করেছে। জবাবে তিনি বলেন, কেউ কেউ ভোট প্রতিহত করতে চাইলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হাদির ঘটনায় যে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ঘুম উড়ে গিয়েছে, সেটা আরও একটি ঘটনা থেকে স্পষ্ট। রবিবার ২১ ডিসেম্বর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে একটি জরুরী বৈঠক বসে। আসন্ন ত্রয়োদশ নির্বাচন এবং গণভোট ইস্যুতে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কীভাবে ঠিক রাখা যাবে, তা নিয়ে সেখানে আলোচনা হয়। সেখানে ছিলেন সে দেশের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক এএমএম নাসিরউদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সিনিয়র সচিব, তিন বাহিনীর প্রধানের প্রতিনিধি, সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপ্যাল স্টাফ অফিসার, আইজিপি, এনএসআই, ডিজিএফআই, কোস্ট গার্ড, বিজিবি, র্যা ব, আনসার, ভিডিপির মহাপরিচালক এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার। এখন প্রশ্ন হল কে বলেছিলেন, বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিন্দুমাত্র অবনতি হয়নি? কে বলেছিলেন – ‘এই যে হাদির একটা ঘটনা হয়েছে, আমরা এগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মনে করি’। তিনি আর কেউ নয়, বাংলাদেশের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক এএমএম নাসিরউদ্দিন।
আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি হয়েছে না অবনতি হয়েছে, সেটা তো দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। বাংলাদেশের একটি দৈনিকের প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি বছরের ১০ মাসেই রাজনৈতিক কারণে বলি হয়েছেন ১০৯ জন। আর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে রাজনৈতিক হিংসার বলি ২৮১ জন। গত অগাষ্ট থেকে এ বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীর ওপর কমপক্ষে ১৭১টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই সব ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১২০ জন। সেই তালিকায় জাতীয় নাগরিক পার্টির মোতালেব শিকদার। হাদি, জান্নাতারা রুমি। তাঁর পর মোতালেব শিকদার। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন এগিয়ে আসতেই রাজনৈতিক হিংসা ক্রমশই বাড়ছে।
হাদিহত্যায় তদারকি সরকার দায় চাপাতে চেয়েছিল আওয়ামী লীগের ওপর। সেই চেষ্টা বিফলে যাওয়ার তারা বিএনপির ঘাড়ে বন্দুক রাখতে চেয়েছিল। যদিও তদারকি সরকার বলছে, হাদির ঘটনায় কোনও রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তাহলে কেন ভারতের বিরুদ্ধে আঙুল তোলা হচ্ছে ? কেন বলা হচ্ছে তারা ভারতে পালিয়ে গিয়েছে? পুলিশ বলছে হাদির হত্যাকারীদের ভারতে পালিয়ে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। আর মোতালেব শিকদারের ঘটনায় পুলিশ যা বলছে, সেটা তো সরকারি ভাষ্যের সঙ্গে মিলছে না। গুলি চলে সোমবার ১২ ডিসেম্বর। এই নিয়ে পুলিশ বলছে, ‘যে ঘরটিতে ওরা… কালকে রাত্রে তিনজন এসেছিল … এবং আশাপাশে ওদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও আমরা জানতে পারি যে এরা প্রায় সময়েই এখানে আসত এবং বিভিন্ন ধরনের মাদক সেবন করত এবং বিভিন্ন মেয়ে মানুষও নিয়ে আসত। তো এই ধরনের অপকর্মে ওরা জড়িত ছিল এবং ওদের… আমাদের কাছে… আপনার…. ভিতরে যে গুলি করেছে.. কার্তুজও রয়েছে… পড়ে আছে… এবং যেটা আমাদের কাছে তথ্য যে ওদের ইন্টারনাল কোন্দলের কারণে ঘটনাটা ঘটেছে। ’
তদারকি সরকার তো এই ঘটনাকেও আওয়ামী লীগের ওপর চাপিয়ে দিতে পারত। যদিও না পুলিশকর্তা বয়ান দিতেন।












Discussion about this post