হাদি অতীত। বাংলাদেশের ক্ষমতায় নেই হাসিনার আওয়ামী লীগ। তবু হাদির মৃত্যু আর আওয়ামী লীগের ভূত তদারকি সরকারকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। হাদির ঘটন সদ্যই বলা যেতে পারে। কিন্তু হাসিনার ঘটনা গত বছরের। জুলাই-অগাস্ট আন্দোলনের কারণে হাসিনা সরকারকে ক্ষমতা ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল। বছর ঘুরলেই বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যাতে অংশগ্রহণ করতে না পারে, তার জন্য দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আর সেই ঘোষণা প্রত্যাহারের জন্য তদারকি সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে।
মঙ্গলবার ছিল ৫৪ তম বিজয় দিবস। ওই দিন জাতীর উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন তদারকি সরকার প্রধান। বিশেষ এই দিনেও বাংলাদেশ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম মোছার চেষ্টা চালান ইউনূস। ওই দিন সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সমাজমাধ্যমে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানান। শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন, একাত্তরের যুদ্ধে পাক বাহিনীকে পরাজিত করেন। অন্যদিকে, জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে ভারতের অবদান তো দূরের কথা, ভারত শব্দটিও মুখে নিলেন না ‘অকৃতজ্ঞ ইউনূস।’ শুধু তাই নয়, ভাষণে আওয়ামী লীগকেও আক্রমণ করতে ছাড়েননি তিনি।
কী বলছেন ইউনূস ? দেশবাসীকে দেওয়া বার্তায় তিনি বলেন, ‘প্রিয় দেশবাসী আপনাদের সামনে আজ উপস্থিত হয়েছি অত্যন্ত ব্যথিত হৃদয়ে। এই আনন্দের দিনে, গভীর বেদনার সঙ্গে জানাচ্ছি, জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখযোদ্ধা ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর সম্প্রতি যে হামলার ঘটনা ঘটেছে, তা শুধু একজন ব্যক্তির ওপর আঘাত নয়, এটি বাংলাদেশের অস্তিত্বের ওপর আঘাত। আমাদের গণতান্ত্রিক পথ চলার ওপরে আঘাত। শরিফ ওসমান হাদি বর্তমানে সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন। তাঁর চিকিৎসা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ’
ইউনূস বোঝাতে চেয়েছেন, হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফেরার পথে প্রধান বাধা জুলাই অভ্যুত্থানের কুশীলবরা। আসলে নির্বাচন হওয়ার আগে ভয়, আতঙ্ক, অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে দিয়ে সেই তরুণ শক্তিকে তারা দমন করতে চাইছেন। তাহলে কী নির্বাচন সামনে রেখে আরও ভয়াবহরূপে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরতে চলেছে? ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো এই দলটি এবার প্রথম এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি। দলটি এর আগেও কয়েকবার রাজনৈতিক সংকট না হলে সামরিক শাসনের মুখে কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল। তবে প্রতিবারই আওয়ামী লীগ আবার রাজনীতিতে ফিরে আসে। তবে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। অন্য যে কোনও সময়ের তুলনায় দলটির সংকট অনেক বেশি। কারণ, জুলাই-অগাস্টে গণ-অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনের অবসান ঘটে। দলটি প্রধান শেখ হাসিনা-সহ শীর্ষনেতাদের বড় অংশ দেশ ছেড়ে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।
ছাত্র জনতার সেই আন্দোলনে ‘গণহত্যা’র অভিযোগে এখন দলটি নেতাদের বিচার চলছে। আওয়ামী লীগের শাসনের সময় বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, বিরোধী মত দমনে অনেক অভিযোগও রয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগ বড়ো ইস্যু হয়ে উঠেছে। ফলে, অতীতে বিভিন্ন সংকটে থাকা দলটি নিজেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র-বিরোধী অবস্থান নেওয়া এবং বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ এসেছে। আর এমন প্রেক্ষাপটেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি ওঠে। অন্তর্বর্তী সরকারও সেই দাবির মুখে দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, বর্তমান বাস্তবতায় দলটির সংকট আগের যে কোনও সময়ের সংকটের থেকে ভিন্ন।












Discussion about this post