বাংলাদেশে এখন আলোচনার কেন্দ্রে মব জাস্টিস। যদিও মুহাম্মদ ইউনূসের আমলে অর্থাৎ বিগত দশ মাসেই এই মব জাস্টিসের নৃশংসতা দেখে আসছে বাংলাদেশবাসী। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এর নগ্ন রূপটি দেখতে পেল গোটা বিশ্ব। কারণ বাংলাদেশের সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা সিইসি কে এম নূরুল হুদাকে একদল উচ্ছৃঙ্খল জনতা রীতিমতো দলবদ্ধভাবে হেনস্থার ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ, বিএনপির একটি সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলের একদল নেতাকর্মী এ ধরনের ‘মব সন্ত্রাসের’ সাথে জড়িত। কে এম নূরুল হুদাকে হেনস্তায় ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শেখ ফরিদ হোসেন দলবল নিয়ে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে সমস্ত ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু পুলিশ এখনও পর্যন্ত কড়া কোনও ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানা যায়নি। যে তিন চার জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ, ঢাকা মেট্রোপলিটন আদালত তাঁদের জামিন দিয়ে দিয়েছে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের পুলিশ প্রশাসন বাংলাদেশে মব সন্ত্রাস বন্ধ করতে কতটা উদ্যোগী। অপরদিকে আছে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান। তিনি কয়েকদিন আগেই হুঙ্কার দিয়েছিলেন সেনাবাহিনী মব দমন করবে, বাংলাদেশে আর মবের রাজত্ব মেনে নেওয়া হবে না। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কেন মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে পারছে না? এর উত্তর অনেকেই জানেন।
মুহাম্মদ ইউনূস যে ছাত্র নেতাদের আন্দোলনের হাত ধরেবাংলাদেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় এসেছেন, মব সন্ত্রাস সৃষ্টির পিছনে তাদের হাতই সবচেয়ে বেশি। তাই ইউনুস প্রশাসন মব জাস্টিসের নামে বাংলাদেশে যা যা ঘটেছে বা ঘটে চলেছে তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি খুব সচেতন ভাবেই। তবে সাবেক মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক নুরুল হুদার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ন্যাক্কারজনক ঘটনা একটু আলাদা। কারণ এর পিছনে এনসিপি বা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনও যোগ নেই। সরাসরি যোগ রয়েছে বিএনপি’র। তবে, দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটি সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ অবশ্য বলছেন, এই ঘটনার সঙ্গে দল হিসেবে বিএনপির সংশ্লিষ্টতা নেই। কার্যত তাঁর দাবি ঠিক, আবার ঠিকও নয়। কারণ যে স্বেচ্ছাসেবক দল এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাঁরা বিএনপির ছায়া সংগঠন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে যা নিয়ে চর্চাও চলছে। বলা হচ্ছে মুহাম্মদ ইউনুস এবং তাঁর দোসররা এতদিন মব জাস্টিসকে প্রশ্রয় দিয়ে এসেছে ক্ষমতা দখলে রাখার অন্যতম উপায় মনে করে। এবার মব সন্ত্রাসকে হাতিয়ার করে আসরে নেমেছে বিএনপি।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ দাবি করছেন, অন্তরবর্তীকালীন সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেওয়ার পাশাপাশি কোনও কোনও ক্ষেত্রে ‘মব সন্ত্রাসকে’ আস্কারা দিয়ে এ পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে। তাঁদের যুক্তি, দীর্ঘ সময় ধরেই এ ধরনের ‘মব সন্ত্রাস বা দলবদ্ধ সহিংসতা’ চলতে থাকা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা হতে পারে না। এর দায় সরকার এড়াতে পারে না। উল্লেখ্য, নূরুল হুদাকে কেন্দ্র করে যা ঘটল সেটা অনেক প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। কারণ, গত রবিবার দুপুরে ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় সাবেক সিইসি নূরুল হুদা সহ ১৯জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে বিএনপি। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে তিনি দায়িত্বে থাকার সময় ভুয়া ভোটের অভিযোগ করা হয়। থানায় অভিযোগ দায়ের করার পর সেই রবিবার বিকেলেই বিএনপির সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা কর্মী পরিচয়ে একদল ব্যক্তি তার বাড়িতে গিয়ে তাঁকে বের করে হেনস্থা করতে থাকেন। তাঁরা নূরুল হুদাকে গলায় জুতার মালা পড়িয়ে দেয় ও জুতা দিয়ে মুখে আঘাত করে। যার ভিডিও সমাজ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। প্রসঙ্গত, নূরুল হুদা শুধুমাত্র সরকারি উচ্চপদেই আসীন ছিলেন না, তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাব সেক্টর কমান্ডার হিসেবে লড়াই করেছিলেন। অর্থাৎ তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। সকালে অভিযোগ, বিকেলেই আইন হাতে তুলে নেওয়ার খেলা বিএনপি এর আগে বহুবার করেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতায় এরকম উদাহরণ বহু আছে।
১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে বিএনপির শাসন ছিল। সেই সময়কার মুখ্য নির্বাচনী অফিসার বা সিইসি ছিলেন এ কে এম সাদেক। সে বারও বিএনপি একতরফা নির্বাচন করেছিল। কোনও রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি সেই নির্বাচনে। বিএনপি ও ফ্রিডম পার্টি মিলে সরকারও গঠন করেছিল। এর আগে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ডঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরীকেও রেললাইন ধরে ছুটতে হয়েছিল নিজের প্রাণ বাঁচাতে। তিনি ছিলেন বিএনপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। সেই ডঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরী রাষ্ট্রপতি হিসেবে পদত্যাগের পর বিএনপি কর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছিলেন। এই ধারা বহু পুরোনো। ফলে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনে যে বৈঠক করেন মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানেই নির্বাচন নিয়ে একটা নিশ্চয়তা পায় বিএনপি। এরপরেই তাঁরা এবার সংগঠিত মব সন্ত্রাস শুরু করে দিয়েছে। যেমনটা করছিল ছাত্র নেতারা। ফলে বাংলাদেশে সন্ত্রাসের আবহ থামবে না আপাতত। কারণ ডঃ ইউনূস নিদ্রা গিয়েছেন। তাঁকে ক্ষমতায় থাকতে হবে আরও কয়েক মাস।
Discussion about this post