মব-মিডিয়া-মিশন, নতুন বাংলাদেশের টার্গেট কেবলমাত্র ভারত সেটা বুঝতে আর বাকি নেই ভারতীয় গোয়েন্দাদের। আর বাংলাদেশে ভারত বিরোধী একের পর এক হিংসাত্মক ঘটনার পিছনে রয়েছে পাকিস্তানের চর সংস্থা আইএসআই, এই রিপোর্ট আগেই এসেছিল। গত বছর জুলাই-আগস্টে যে হাসিনা-বিরোধী আন্দোলন দানা বেঁধেছিল, এবারের আন্দোলন কার্যত সেই একই ছকে চলছে। একটু খেয়াল করলেই বোঝা যাবে ছাত্র-জনতার টার্গেট সেই মিডিয়া ও মিশন। অর্থাৎ প্রথমে মব সৃষ্টি করা হয়েছে, তারপর মিডিয়া হাউস ও ভারতের হাইকমিশনে হামলার ঘটনা। প্রথমে মব সৃষ্টি করা হচ্ছে ছাত্র-যুবদের জড়ো করে। পিছন থেকে তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করছে জামায়তে ইসলামী এবং অন্যান্য ইসলামিক সংগঠনগুলি। মবের অবস্থান ও বিক্ষোভের মধ্যে ঢুকে গোলমাল সৃষ্টি করছে কট্টরপন্থী ইসলামিক গোষ্ঠীগুলির সদস্যরা। এই খেলাই চলছে প্রতিনিয়ত। বাংলাদেশে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত বীণা সিক্রি দাবি করেছেন, পাকিস্তানের আইএসআই বাংলাদেশের জামাত-ই-ইসলামি নামে কট্টরপন্থী ইসলামি সংগঠনকে কলের পুতুল বানিয়ে এই খেলা চালিয়ে যাচ্ছে।
ভারত-বিরোধী নেতা ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে যেতেই বৃহস্পতিবার রাত থেকে উত্তপ্ত বাংলাদেশ। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে দুটি প্রথম সারির সংবাদ-মাধ্যমের অফিস। হামলা হয়েছে চট্টগ্রামে ভারতের উপ হাইকমিশনেও। ইতিমধ্যেই নিরাপত্তার ঘেরাটোপে মুড়ে ফেলা হয়েছে ঢাকা-সহ চার শহর। বিক্ষোভ সামাল দিতে শাহবাগে নামানো হয়েছে র্যা ব, সেনাবাহিনী। অনেকটা যেন চোর পালানোর পর বুদ্ধি বাড়ার মতো। যদিও এই ঘটনার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবস্থান নিয়েও উঠেছে অনেক প্রশ্ন। বৃহস্পতিবার রাতে দেখা গেল, প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারের কার্যালয় পুড়ে খাক হয়ে যাওয়ার পর ঘটনাস্থলে এল সেনাবাহিনী। ছায়ানট ও ৩২ নম্বর ধানমণ্ডিতে ভাঙচুরের পর ঢুকলো আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। অভিযোগ উঠছে, ইউনুস প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তার জেরেই পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ আকার নিয়েছে। ফলে ডাল মে কুছ কালা হ্যায়, সেটা বুঝতে বাকি নেই কারও। এই পরিস্থিতিতে ভারত কি চুপ করে বসে থাকবে?
এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার হুমকির পর নয়া দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহকে তলব করেছিল ভারতের বিদেশমন্ত্রক। তাঁকে কড়া ভাষায় সমঝে দেওয়া হয়েছিল, এই ধরণের মন্তব্য ভারত সহ্য করবে না। পাশাপাশি ভারতের হাইকমিশনের দিকে লং মার্চ নিয়েও ভারত নিজেদের চিন্তা ব্যক্ত করে ব্যবস্থা নিয়ে বলেছিল ঢাকাকে। কিন্তু তারপরও ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের দিকে অভিযান হয়। আবার হাসনাত ফের হুঙ্কার ছেড়ে বলেছেন ভারতের হাইকমিশনারকে লাথি মেরে দেশ থেকে বের করে দেওয়া উচিৎ। এবার ভারতবিরোধী নেতা ওসমান হাদির মৃত্যুর পর দেখা গেল গোটা বাংলাদেশে ভারত-বিরোধী জনগণ আক্রমনাত্মক হয়ে উঠল। পরিস্থিতি যে অন্যদিকে মোড় নিচ্ছে তা অনেক আগেই বুঝেছিল ভারতীয় গোয়েন্দারা। সেই রিপোর্ট দিল্লিতে পৌঁছেও গিয়েছিল। ফলে ভারত অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। বিশেষ করে বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতীয় সেনার প্রস্তুতি বেশ চোখে পড়ার মতো।
ভারতের সবচেয়ে সংবেদনশীল এলাকা শিলিগুড়ি করিডোর বা চিকেন নেককে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার এবং আসাম জুড়ে তিনটি নতুন সেনা ঘাঁটি স্থাপনের কথা আগেই জানা গিয়েছিল। এবার বাংলাদেশ সীমান্তে আরও একটি সেনাঘাঁটি তৈরি করতে শুরু করল ভারতীয় সেনা। জানা গিয়েছে মিজোরামে চতুর্থ সেনা ঘাঁটিটি স্থাপনের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে। মিজোরামের আইজলের কাছে থুয়াম্পুইতে এই সেনাঘাঁটি তৈরি করা হতে পারে। মনে করা হচ্ছে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় এবং জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির তরফে যে কোনও আক্রমণাত্মক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার প্রথম সারিতে ভারতীয় সেনাকে রাখতে নতুন সেনাঘাঁটি স্থাপন করা হতে পারে। আরও জানা যাচ্ছে, কাছাড় এবং মিজোরাম সীমান্তের তিনটি ব্যাটালিয়ন এলাকায় ৪৫টি বাঙ্কার, রিং বাঁধ, বিস্ফোরণ-প্রতিরোধী আশ্রয়কেন্দ্র এবং ভূগর্ভস্থ অস্ত্রাগার তৈরি করা হবে। অর্থাৎ শুধু চিকেন নেক নয়, বাংলাদেশের অন্যান্য সীমান্ত এলাকাতেও নজরদারি বাড়াতে তৎপর ভারত। শুধু বিএসএফ নয়, সেনাবাহিনীর জন্যও নতুন নতুন ঘাঁটি তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। তবে প্রস্তাবিত চতুর্থ ঘাঁটির অবস্থান বাংলাদেশের চিকেন নেক নামে পরিচিত চট্টগ্রামের ফেনি নদীর কাছে হওয়াটা অন্য ইঙ্গিত করছে বলেই মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।












Discussion about this post