বাংলাদেশ ইস্যুতে এখন খবরের শিরোনামে চট্টগ্রাম। এই চট্টগ্রাম নিয়েই যত মাথার ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ইউনূস সরকারের। রাজনৈতিক মহলের একাংশ অনেকেই মনে করছেন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম আলাদা হয়ে যাবে। এর পিছনে ভৌগলিক কি কারণ রয়েছে, সেই নিয়েই আলোচনা করব আজকের প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশের তিনদিকে রয়েছে ভারত। বাংলাদেশের পশ্চিম দিকে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। উত্তর পূর্ব দিকে আছে ভারতের সাতটি রাজ্য। যা সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম দিকে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের কিছু অংশ এবং রয়েছে সিকিম। এই সিকিমের পূর্ব দিকে রয়েছে ভুটান এবং পশ্চিম দিকে রয়েছে নেপাল। সিকিমের উত্তর দিকে রয়েছে তিব্বত। ভারত ছাড়াও আর একটি বাংলাদেশের সীমান্ত দেশ রয়েছে মায়ানমার। মায়ানমারের দুটি রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত রয়েছে। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য রাখাইন রাজ্য। এরমধ্যে আমরা ভারতের শিলিগুড়ি করিডরে দিকে যদি নজর রাখি, শিলিগুড়ি হল বাংলার জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিং জেলার দুটি শহর। জলপাইগুড়ি জেলার পর আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহার জেলা রয়েছে। এই দুটি জেলার সঙ্গে আসামের সীমান্ত রয়েছে। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের বা ভারতের মূল অংশ থেকে এই শিলিগুড়ি শহর হয়ে কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ার হয়ে আসাম রাজ্যে যেতে হয়। পরে আসাম রাজ্য থেকে ভারতের উত্তর-পূর্বঞ্চলের অন্য যে ছটি রাজ্য আছে, সেগুলিতে যেতে হয়। আর এই চিকেন নেকের প্রস্ত অনেক জায়গায় ২৫ কিলোমিটার আবার অনেক জায়গায় ৬০ কিলোমিটার। আমরা জানি আবরতের উত্তর-পূর্বদিকে সাতটি রাজ্য রয়েছে। যাদের সেভেন সিস্টার্স বলা হয়ে থাকে। সেগুলি হল অরুণাচলপ্রদেশ, আসাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম এবং মেঘালয়।
অন্যদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে দুটি দেশের সীমান্ত রয়েছে। ভারত এবং অন্যটি হল মায়ানমার। আমরা জানি ভারতের তিনদিকেই রয়েছে বাংলাদেশ। পূর্ব দিকে ভারতের সাতটি রাজ্যের মধ্যে অসম, ত্রিপুরা,মেঘালয়, মিজোরামের সীমান্ত রয়েছে বাংলাদেশের। আসামের সঙ্গে বাংলাদেশের দুই দিকে সীমান্ত রয়েছে। উত্তরদিকে রয়েছে বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার সঙ্গে। অন্যদিকে পূর্বদিকে রয়েছে সিলেট এবং মৌলবিবাজার জেলার সঙ্গে। ১৯৪৭ সালে সিলেটকে নিয়ে গণভোট হয়েছিল। অর্থাৎ সিলেটের মানুষ ভারতের যাবে নাকি পাকিস্তানে যাবে, সেই নিয়ে। মেঘালয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ, কুড়িগ্রাম-সহ একাধিক জেলার সীমান্ত রয়েছে।
এ তো গেল ভৌগলিক বিষয়। এইবার প্রশ্ন হচ্ছে, মায়ানমার নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতেরই বা কেন এত মাথাব্যথার কারণ। কারণ, উল্লেখযোগ্যভাবে মায়ানমার দেশটিকে নিয়ে ভারত এবং চীনের একাধিক স্বার্থ রয়েছে। ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সুবিধাজনক একটি দেশ মায়ানমার। আমরা জানি, চীন ভারতমহাসাগরে তার প্রভাব বিস্তার করতে চায়। সেই কারণে মায়ানমারের ভিতর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পৌঁছনোর জন্য বিভিন্ন প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে। চীন থেকে মায়ানমারের ভিতর দিয়ে রাখাইন রাজ্যের বন্দর থেকে দূরত্ব ৬৫৬ কিলোমিমিটার। অন্যদিকে, মায়ানমারে ভারতেরও একাধিক প্রজেক্ট রয়েছে। অর্থাৎ একেবারে স্পষ্ট, মায়ানমারে চীন এবং ভারতের স্বার্থ রয়েছে।
অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম রাঙামাটি, খাগরাছুটি এবং বান্দরবন নিয়ে গঠিত। চট্টগ্রামের এই এলাকা পাহাড় এবং পার্বত্য নিয়ে গঠিত বলে নামকরণ করা হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম। ১৮৬০ সালের আগে চট্টগ্রামকে ভেঙে পার্বত্য চট্টগ্রাম গঠন করা হয়। ১৯৮৪ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভেঙে খাগরাছুটি, বান্দরবন এভং রাঙামাটি জেলা গঠন করা হয়। এই তিন জেলাতে বিভিন্ন উপজাতির বসবাস রয়েছে। এবং কিছু বিছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী রয়েছে। যারা চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে আলাদা করতে চায়। এর পিছনে আন্তর্জাতিক একাধিক ষড়যন্ত্র রয়েছে।
Discussion about this post