কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর কেটে গিয়েছিল প্রায় ২৪ ঘণ্টা। গোটা পৃথিবী যখন কাশ্মীরের জঙ্গি হামলা নিয়ে নিন্দায় সরব, তখন আশ্চর্যজনকভাবে নিরব ছিল বাংলাদেশ। ভারতের অন্যতম প্রতিবেশী দেশ। তবে ঘটনার প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি জারি করে দায় সেরেছিল। কিন্তু যখন এটা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয় কূটনৈতিক মহলে, তখনই বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার তরফে একটি ফেসবুক পোস্ট করে পহেলগাঁওয়ের ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন খোদ মুহাম্মদ ইউনূস।
কিন্তু সবকিছু ঘেঁটে ঘ করে দিয়েছেন বাংলাদেশের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনিও ওই হামলার নিন্দা করেছেন। পাশাপাশি তিনি আরও একটি বিষয় উস্কে দিয়েছেন। নজরুল লিখেছেন, কাশ্মীরে পর্যটক হত্যার নিন্দা জানাই। তবে এর পেছনে কারা আছে তা জানা প্রয়োজন। বাংলাদেশের দায়িত্বপূর্ণ পদে বসে থাকা একজন ব্যক্তি যখন সমাজ মাধ্যমেই এই ধরণের বিবৃতি দেন, তখন হইচই তো হবেই। হলও তাই। ফলে কিছুক্ষণের মধ্যেই আসিফ নজরুল তাঁর ফেসবুক পোস্টটি ডিলিট করে দেন। কিন্তু যা হওয়ার তাই হল, অনেকেই সেই পোস্টের স্ক্রিনশট নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করেন। যার জেরে প্রবল চাপে পড়েছে ইউনূস সরকার।
গত মঙ্গলবার কাশ্মীর উপত্যকার পহেলগাঁও থেকে কিছুটা দূরে বৈসরণ ভ্যালিতে চার-পাঁচজন সশস্ত্র জঙ্গি পর্যটকদের উপর গুলি চালায়। এমনকি বেছে বেছে হিন্দুদের চিহ্নিত করে তাঁদের মারা হয় বলে অভিযোগ। সরকারি হিসেবে ২৬ জন নিহত হয়েছে জঙ্গি হামলায়। যারা প্রত্যেকেই পুরুষ এবং হিন্দু। ঘটনার খবর জানাজানি হতেই গোটা বিশ্বের তাবড় রাষ্ট্রপ্রধানরা শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে শুরু করে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিংপিন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লদিমির পুতিন থেকে শুরু করে ইজরাইয়ের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতিনইয়াহু-সহ অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা বিবৃতি দেওয়ার পাশাপাশি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ফোনও করেন এবং এই লড়াইয়ে পাশে থাকার বার্তা দেন। ভারতের প্রতিবেশী দেশ নেপাল, ভূটান, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা এমনকি পাকিস্তানের তরফেও এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি আসে। কিন্তু আসেনি কেবল বাংলাদেশের। মুহাম্মদ ইউনূসের তরফে সেই বিবৃতি আসতে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যায়।
উল্লেথ্য, পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলা বা জেহাদি হামলার দায় পাকিস্তানের দিকেই ঠেলেছে ভারত। তাই হয়তো সদ্য বন্ধু হওয়া পাকিস্তানকে খুশি করতেই দায়সারা দুঃখপ্রকাশ করল ঢাকা। প্রথমে বুধবার দুপুরে দুপুর ১টা ৫৯ মিনিটে বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করা হয়েছে। তাতে লেখা হয়েছে, ‘‘ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরে যে জঙ্গি হামলা হয়েছে, বাংলাদেশ তার তীব্র বিরোধিতা করছে। নিষ্পাপ মানুষের প্রাণ গিয়েছে। নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এই অর্থহীন হিংসায় যাঁদের ক্ষতি হয়েছে, তাঁদেরও আন্তরিক সমবেদনা জানানো হচ্ছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী লড়াইয়ে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সেই অবস্থানে অটল।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বা ভারত সরকারের নাম উল্লেথ নেই। সমবেদনা জানানো হয়েছে শুধুমাত্র নিহত পরিবারদের। এর প্রায় ঘণ্টাখানেক পর সমাজমাধ্যমে পৃথক বিবৃতি দিয়েছেন ইউনূস নিজে। তিনি লিখেছেন, ‘‘কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলা এবং প্রাণহানির ঘটনায় আমার গভীর সমবেদনা রইল। এই জঘন্য অপরাধের তীব্র বিরোধিতা করছি আমরা। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান বরাবর দৃঢ়, তা পুনর্ব্যক্ত করলাম। প্রশ্ন উঠছে, যে দেশে ক্ষমতায় আসার পর ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস শতাধিক জঙ্গিকে জেল থেকে মুক্তি দিয়েছেন। সেই ইউনূসই আবার বলছেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান বরাবর দৃঢ়। ফলে এটা হাস্যকর দাবি ছাড়া আর কিছু নয়।
অন্যদিকে পহেলগাঁও হামলা নিয়ে সবচেয়ে বড় ধামাকা দিয়েছিলেন বাংলাদেশের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি একটি ফেসবুক পোস্টে পহেলগাঁও হামলার নিন্দা করেও কায়দা করে ভারতকে বিঁধতে ছাড়লেন না। আসিফ নজরুল কোনও একজনের ফেসবুক পোস্ট কপি করে লেখেন, এই হামলার পিছনে কারা আছে তা জেনে নেওয়া প্রয়োজন। তাঁর পোস্টে উঠে এসেছে অমিত শাহ, অজিত ডোভালের নামও। অনেকটা এরকম যে পহেলগাঁওতে হামলা ভারতই করিয়েছে। যা পাকিস্তানের বক্তব্য। অর্থাৎ পাকিস্তানের ভাষায় কথা বলছেন বাংলাদেশের আইন উপদেষ্টা। এই পোস্ট ঘিরে শোড়গোল পড়তেই তিনি তা ডিলিট করে দেন। কিন্তু বেকায়দায় পড়লেন মুহাম্মদ ইউনূস। সেই সঙ্গে বেকায়দায় পড়ল বাংলাদেশ। কারণ, ভারত যদি সন্ত্রাসবাদ নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেয়, তাহলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও তা নিতে হবে। কারণ, এই মুহূর্তে পাক মদতে বাংলাদেশও জঙ্গিদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে।
Discussion about this post