বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির একজন নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ ঢাকার এক সমাবেশে ভারতের সেভেন সিস্টার্স হিসেবে পরিচিত পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যকে ‘ভারত থেকে আলাদা’ করার বিষয়ে যে হুমকি দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলিকে তাঁরা বাংলাদেশে জায়গা দেবেন। হাসনাত যখন ওই মন্তব্য করেন তখন মঞ্চে জামায়াতে ইসলামী-সহ বিভিন্ন দলের নেতারা ছিলেন। এনসিপি নেতার এই মন্তব্যের পরই কড়া প্রতিক্রিয়া দেয় ভারত সরকার। দিল্লিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহকে ডেকে কড়া প্রতিক্রিয়া দিতে ভোলেনি ভারত। কিন্তু হাসনাত যে এই দাবি কেবলমাত্র হুমকি দেওয়ার জন্য বলেছিলেন, তেমনটা মনে করছেন না ভারতীয় গোয়েন্দারা। রিপোর্ট, উত্তর-পূবাঞ্চেলের রাজ্য আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফা স্বাধীন-এর প্রধান পরেশ বড়ুয়া এখন ঢাকায় অবস্থান করছে। যদিও কয়েকটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে পরেশ বড়ুয়ার একদা ঘনিষ্ট অনুপ চেটিয়া দাবি করেছেন, ‘পরেশ যথেষ্ট বুদ্ধিমান। এই পরিস্থিতিতে ঢাকায় যাওয়া মানে নিশ্চিত মৃত্যুর ঝুঁকি নেওয়া’। তিনি এটাকে সাজানো গল্প বলেও দাবি করেছেন।
তবে সত্য-অসত্য যাই হোক, বাংলাদেশে এখন জঙ্গি, জিহাদি, বিচ্ছন্নতাবাদী নেতাদের স্বর্গরাজ্য। শেখ হাসিনার আমলে একাধিক মামলায় প্রাণদণ্ড হয়েছে পরেশ বড়ুয়ার, যদিও তা কার্যকর হয়নি। হাসিনা পরবর্তী সময়ে বহু জঙ্গি নেতাকে জেলমুক্তি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরমধ্যে অসমের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আলফার কমান্ডার পরেশ বড়ুয়ার মৃত্যুদণ্ডও খারিজ হয়েছে ইউনূসের বাংলাদেশে। গত বছর ডিসেম্বরেই তাঁর শাস্তি মুকুব হয়। ফলে পরেশ যদি ঢাকাতেও অবস্থান করেন, তাহলে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয় বলেই মনে করছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বা হাসনাত আবদুল্লাহ, আবার কট্টরপন্থী ধর্মীয় নেতা থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সাবেক সেনাকর্তারা বারবার ভারতের সেভেন সিস্টার্স ও শিলিগুড়ি করিডোর বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। এটা কেবলমাত্র কথার কথা নয়, গোয়েন্দারা মনে করছেন এর পিছনে নির্দিষ্ট একটা ছক রয়েছে। আলফা নেতা পরেশ বড়ুয়া এই ছকের অংশ হতেই পারে।
অন্যদিকে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম টাইমস অফ ইসলামাবাদ দাবি করেছে, দুই দেশের উত্তেজনার মধ্যে ভারতীয় সীমান্তে গোলন্দাজ বাহিনী মোতায়েন করেছে বাংলাদেশ। তাঁদের দাবি, ভারতের সীমান্ত এলাকায় তুরস্কের তৈরি টিআরজি-৩০০, টিআরজি-২৩০ গাইডেড মিসাইল সিস্টেমস আর্টিলারি বসাতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। টিআরজি-৩০০ প্রায় ১২০ কিমি পাল্লার এবং টিআরজি-২৩০ প্রায় ৭০ কিমি পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। উভয় সিস্টেমই উচ্চ নির্ভুলতার জন্য GPS এবং ইনর্শিয়াল গাইডেন্স ব্যবহার করে। অন্যদিকে কামরান সাঈদ উসমানি নামের এক পাকিস্তানি যুব নেতা দাবি করেছে, ভারত যদি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বে আঘাত হানে, যদি কেউ বাংলাদেশের দিকে কুনজর দেয়, তাহলে মনে রাখতে হবে, পাকিস্তানের জনগণ, পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী এবং আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র খুব দূরে নয়। উসমানি আরও বলেন, বাংলাদেশ যদি দিল্লির ‘অখণ্ড ভারত ভাবনার’ অংশ হয়ে থাকে, তবে পাকিস্তান চুপ করে বসে থাকবে না। তাঁর এই ভিডিও ভাইরাল হতেই কূটনৈতিক মহলে হইচই পড়ে গিয়েছে। অনেকেই দাবি করছেন, পাকিস্তান ও তুরস্কের পিঠে চড়ে বাংলাদেশ ক্রমাগত ভারতকে হুমকি, হুঁশিয়ারি দিয়ে চলেছে। তবে সম্প্রতি আইআইটি বম্বের এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ভারতের চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহান একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন ভারতবাসীর উদ্দেশ্যে। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ দমনে ভারতকে প্রস্তুত থাকতে হবে স্বল্প সময়ের, অত্যন্ত তীব্র সংঘর্ষের জন্য। তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাস মোকাবিলায় স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ দু’ধরনের পরিস্থিতির জন্যই ভারতকে প্রস্তুত থাকতে হবে। তাহলে কি ভারত ভিতরে ভিতরে কোনও বড় যুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে?












Discussion about this post