দিল্লি না ঢাকা? ঢাকা ঢাকা…. বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটা জনপ্রিয় স্লোগান ছিল একসময়। এখন ছাত্ররা একটি রাজনৈতিক দল তৈরি করেছে, যার নাম জাতীয় নাগরিক পার্টি, সংক্ষেপে এনসিপি। এই দলের জনপ্রিয় নেতা তথা দক্ষিনাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ ঢাকায় এক জনসভায় ভয়ানক এক বক্তব্য রেখেছেন। এনসিপি-র ওই শীর্ষস্থানীয় নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, “ভারত যদি বাংলাদেশের শত্রুদের তাদের ভূখন্ডে আশ্রয় দেয় তাহলে বাংলাদেশও ভারত-বিরোধী শক্তিগুলোকে আশ্রয় দিয়ে ‘সেভেন সিস্টার্স’কে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে”। প্রসঙ্গত, উত্তর-পূর্ব ভারতের এই সাতটা রাজ্য জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ভারতের চোখে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল একটি ইস্যু। উত্তর পূর্বের এই সাতটা রাজ্য আবার শিলিগুড়ি করিডোরের সংকীর্ণ ২২ কিমি ভুখন্ড দিয়ে যুক্ত। সেই আঙ্গিকে হাসনাত আবদুল্লাহ-র এই মন্তব্যকে ভারত খুবই ‘প্ররোচনামূলক’ বলে মনে করেছে। আর হাসনাতের এই বক্তব্য বিজয় দিবসের অবহে বলা। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি পুরো ঘোলাটে হয়ে গিয়েছে এই মুহূর্তে।
সবচেয়ে বড় বিষয় ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক ঘোলাটে হল মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে। দিল্লির চাণক্যপুরীর বাংলাদেশ হাই কমিশন প্রাঙ্গণে বিজয় দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহ মন্তব্য করেছিলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আসলে অত্যন্ত গভীর ও বহুমাত্রিক এবং অতি সমৃদ্ধ। অতীতের পটভূমিতে এর পারস্পরিক নির্ভরশীলতাও অনুধাবন করা প্রয়োজন। এমনকি ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ককে তিনি বর্ণনা করেছিলেন ‘অর্গানিক রিলেশনশিপ’ হিসেবে। বিজয় দিবসের ওই অনুষ্ঠানের ঠিক পর রিয়াজ হামিদুল্লাহ একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে লেখেন, পারস্পরিক আস্থা, মর্যাদা, প্রগতিশীলতা, সুফল ভাগাভাগি আর অভিন্ন মূল্যবোধের ভিত্তিতেই দুদেশের মানুষের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা সম্ভব। ওই পোস্টে তিনি ট্যাগও করেন ভারতের বিদেশ মন্ত্রককে। কিন্তু রাত মিটতেই পাল্টে যায় গোটা পরিস্থিতি। দিল্লির সাউথ ব্লকে ডেকে পাঠানো হয় বাংলাদেশের হাই কমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহকে। রীতিমতো উস্মা প্রকাশ করে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক তাঁকে বুঝিয়ে দেয় ঠিক কোন কোন ক্ষেত্রে ভারত ক্ষুব্ধ। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে ভারত বুঝিয়ে দেয় যে ভারত মনে করছে বাংলাদেশে নিরাপত্তা পরিবেশের দ্রুত অবনতি হচ্ছে এবং এই পরিস্থিতিতে নয়া দিল্লি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ও বিচলিত। এমনকি ‘কোনো কোনো চরমপন্থী গোষ্ঠী’ যে ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসের জন্য নিরাপত্তা হুমকি তৈরির পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে সেটাও তাঁকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ভারত অবশ্য এখানেই থেমে থাকেনি, বুধবার দুপুরেই ঢাকায় অবস্থিত ভারতের ভিসা সেন্টার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়। এটা একটা কঠোর কূটনৈতিক বার্তা বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
এরমধ্যে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন অফিস অবরুদ্ধ করে দেয় জুলাই ঐক্য নামে একটি সদ্য গজিয়ে ওঠা সংগঠন। ঢাকার বারিধারা এলাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাই কমিশন অফিসের অদূরে রামপুরা থেকে মিছিল করে কয়েকশো ছাত্র জনতা।পুলিশ তাদের আটকালেও ভারত সরকার এই ঘটনায় অত্যন্ত বিরক্ত। উল্লেখ্য আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী যে কোনও দেশে অন্য কোনও দেশের হাই কমিশন অফিস সেই দেশের অংশ হিসেবে ধরা হয়। অর্থাৎ ঢাকায় ভারতের হাই কমিশন অফিস ভারতের অংশ, সেটা আক্রমণের ডাক দেওয়া মানে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার সামিল। দিল্লির কূটনৈতিক মহল মনে করছে, আটকাতে মহম্মদ ইউনূস এর অন্তর্ভুক্তি সরকার মোটেই কোন কার্যকর পদক্ষেপ করেনি। যে কারণে ভারত সরকার হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত।
জানা যায়, ঢাকার হাইকমিশন অফিস ঘেরাওয়ের কর্মসূচির কথা জানতে পেরে বুধবার সকালে দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহকে তলব করে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। এরপরই ঢাকা পুলিশ ভারতের হাই কমিশনে নিরাপত্তা বাড়ায়। তবে জুলাই ঐক্য নামে ওই ভুঁইফোঁড় সংগঠন হুঙ্কার দিয়েছে দিয়েছে তাঁরা আবার অভিযান চালাবে।
আপাতত ভারত বাংলাদেশে তাঁদের ভিসা সেন্টার বন্ধ করেছে। এতে চরম সমস্যায় পড়ছেন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ। কারণ শুধু ভারতে আসার জন্য নয়, ইউরোপ আমেরিকার বহু দেশে যেতে হলেও ভারতের ভিসা প্রয়োজন হয় বাংলাদেশিদের। সবমিলিয়ে ভারত একটা চাপ দিল বাংলাদেশকে। কেউ বলছেন এটা খুব কম, কেউ বলছেন এটা কড়া ডোজ। তবে বিষয়টি গুরুতর। কারণ, ভারত বুঝিয়ে দিল তাঁরা সংযম রক্ষা করবে না।












Discussion about this post