গত বছর বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচূত্য হওয়ার পর ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। এক কথায় সাপে – নেউলের মতো। হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার মহম্মদ ইউনুস ক্ষমতা দখলের পরেই ভারত বিরোধীতার সীমা চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। এমনকি ভারতের বিতর্কিত একটি মানচিত্রও তারা সামনে নিয়ে এসেছিল যেখানে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের অংশগুলো বাংলাদেশের সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই দিল্লি এটিকে চরম উস্কানি হিসেবে দেখেছিল। এমনকি ভারতের আশ্রয়ে থাকা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে বসে বক্তব্য দেওয়াকে বাংলাদেশের উস্কানি মনে হয়েছিল। ফলে ভারতের কাছে একাধিকবার বাংলাদেশের তরফে অনুরোধ করা হয় হাসিনার এই কার্যকলাপ বন্ধের। স্বভাবসুলভ ভাবেই এইসব কথায় ভারত পাত্তা দেয়নি। শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত চেয়েও ভারতের কাছে একাধিকবার আবেদন করা হয় বাংলাদেশের তরফে। সেখানেও ভারত স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, শেখ হাসিনা যতদিন ইচ্ছা ভারতে থাকবে। ভারত যে শেখ হাসিনাকে ফেরত দেবে না তা ভারতের তরফে বাংলাদেশকে বারেবারে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু বাংলাদেশ পাকিস্তান প্রীতি করতে গিয়ে তা বুঝতে না পারলেও অবশেষে ইউনুস সাহেব বুঝেছেন যে ভারত কখনই তার বন্ধু হাসিনাকে তাদের হাতে তুলে দেবে না। এরপরেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন কোনও রাগ – ঢাক ছড়াই বলেছিলেন, ভারত যদি হাসিনাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে না দেয় সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের কিছুই করার নেই।
১৫ ই ডিসেম্বর সচিবালয়ে বাংলাদেশের অর্থ উপদেষ্টা বলেছিলেন, মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে অন্তর্বর্তী সরকার ভারত থেকে ৫০ হাজার টন চাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থনীতি ও বাণিজ্যের সম্পর্ককে ছাপিয়ে দুই দেশের কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কের উত্তেজনা আবারও বেড়ে যায়। ঢাকায় ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরেরদিনই ইউনূসের সাথে বৈঠক হয় তিনটি রাজনৈতিক দলের। এই বৈঠকের পর এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রকাশ্যে দাবি তোলেন, হাসিনার ভারতের বসে কথা বলার পিছনে ভারতের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মদত আছে। তাই ঢাকার হাই কমিশনারকে তলব করে কৈফিয়ত তলব করতে হবে। এরপর দিনই বাংলাদেশের পররষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাই কমিশনের প্রণয় ভার্মাকে তলব করে। ঢাকা অভিযোগ করে ভারত তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে দ্রুত ফেরত চায়।
এই আবহেই এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লা বড় হুমকি দিয়ে বসে। প্রকাশ্যে তিনি বলেন, ভারতের সবচেয়ে স্পর্শকাতর এলাকা সেভেন সিস্টার্স ভাঙার জন্য ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তিনি সাহায্য করবেন। একইদিনে জুলাই ঐক্য রাজধানী ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা করে। ডাকসুর সাহিত্য ও সংস্কৃতিক সম্পাদক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ হুমকি দিয়ে বলেন, পরেরবার ভারতীয় হাই কমিশনের একটা ইট আস্ত রাখা হবে না। এরপরেই পাল্টা জবাব দিল নয়া দিল্লি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশের হাই কমিশনারকে তলব করে। এরপর ভারতের তরফে একটি বিবৃতি জারি করে বলা হয়, কিছু চরমপন্থী গোষ্ঠী ভারতীয় হাই কমিশনকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার সংকট তৈরির পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের কয়েকটি গোষ্ঠী যে মিথ্যে নেরেটিভ তৈরী করার চেষ্টা করছে ভারত তা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করে। ভারত বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক, সুষ্ঠ ও অবাধ নির্বাচন চায়। এর সাথে ভারত ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রও বন্ধ করে দেয়। এর মধ্যে দিয়ে দিল্লি বোঝাতে চাইল আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আবেগ দিয়ে চলে না।
এর উত্তরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে কেমন নির্বাচন হবে তা নিয়ে প্রতিবেশীদের উপদেশ চাই না। বাংলাদেশ কোনও সন্ত্রাসবাদে বিশ্বাস করে না। বাংলাদেশ কোনও বিচ্ছিন্নতাবাদীকে তার মাটিতে আশ্রয় দেবে না। বাংলাদেশ চায় ভারত হাসিনাকে থামাক।
নির্বাচনের আগে ভারত বিরোধিতায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন রাজীনীতির মাঠ গরম হয়ে ওঠায় বিশ্লেষকদের মতে, যমুনা ভবনের বাইরে কোনও অস্তিত্ব নেই কিংস পার্টির। তাই নির্বাচনী জোয়ারে নিজেদের আনতে ভারত বিরোধী প্রচরণাকেই বেছে নিয়েছেন।
ভারত – বাংলাদেশের সোনালী দিন এখন অতীত। প্রতিবেশী শক্তিশালী দেশ ভারতের সাথে চরম খেলায় মেতে উঠেছে বাংলাদেশ। ভারত ধৈয্যের বাঁধ হারালে বাংলাদেশের অন্তিম দিন যে আসন্ন তা গোটা বিশ্বের কাছে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট।












Discussion about this post