এস জয়শঙ্কর এবং অজিত ডোভাল জুটি আন্তর্জাতিক মহলে বহু প্রশংসিত। তাদের একসঙ্গে করা একাধিক কাজ এবং সিদ্ধান্ত বিপক্ষ সরকারকে মাত করে। আন্তর্জাতিক স্তরে নতুন কিছু চাল আলোচিতও হয়। এইবার বাংলাদেশকে এমন একটি চাল দিতে ভারত মাত করল, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
বাংলাদেশ থেকে আসা ৭৫ জন নাবিককে আটক করেছিল ভারত। এক্ষেত্রে ভারত একেবারে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, একটি শর্তেই তারা তাদের ছেড়ে দেবে। যদি বাংলাদেশ সরকার বন্দি বিনিময় শর্ত চালু করে। কারণ বাংলাদেশের বর্ডার পার করে ভারতয়ী মৎস্যজীবীরা গেলেই তাদের আটক করে বাংলাদেশ সরকার। শুধুমাত্র আটকই নয় কারাগারে পর্যন্ত পাঠিয়ে দেয়। এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের কারাগারে ৯০ থেকে ৯৫ জন মৎস্যজীবী রয়েছে। এর ফলেই ভারত স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে, বন্দি বিনিময় শর্ত চালু করতে হবে। তা বাংলাদেশ সরকার প্রেস রিলিজ করে স্বীকার করে নিয়েছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ভারতের উড়িষ্যাতে বাংলাদেশী ট্রলার আটক হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ভারত কোনও অ্যাকশন নেয়নি। শুধুমাত্র তাদের আটক করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার ভারতের মৎস্যজীবীদের আটক করে তাদের কারাগারে পাঠায়। বহু দিন ধরে আটকে রাখে। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে একাধিক ধারা প্রয়োগ করে। যদিও ভারত সরকার বারবার স্বীকার করে নিয়েছে, শুধুমাত্র সীমানা অতিক্রম করলে যে শাস্তি পাওয়ার যোগ্য, তা দিতে পারে প্রতিবেশী দেশ। কিন্তু একাধিক ধারা দেওয়ার কোনও যুক্তি নেই। বাংলাদেশ সরকার তা মানে না। এবার ভারতের মাস্টারস্ট্রোক। যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
সম্প্রতি, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের একটি তিক্ত সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। ইউনূসের হাতে বাংলাদেশের ক্ষমতা থাকাকালীন বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে দেশটিতে। পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের উপর লাগাতার অত্যাচারের খবর করছে ভারত-সহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলি। যা বিচলিত করছে বহু মানুষকে। এই নিয়ে চুপ করে থাকেনি ভারত। একাধিকবার ভারতের বিদেশমন্ত্রক বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকারকে সাবধান করেছে। কিন্তু কর্ণপাতই করেননি ইউনূস। বরং সেদেশে হয়ে চলা সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের কথা অস্বীকার করেছে বাংলাদেশের তদারকি সরকার। ভারত মিথ্যা প্রচার করছে বলেও গুরতর অভিযোগ আনে তারা। পরে অত্যাচারের ঘটনা স্বীকার করলেও তা কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে ইউনূস প্রশাসন। কিন্তু সেখানকার পরিস্থিতির উপর লাগাম টানতেই যেন ইচ্ছুক নয় প্রশাসন। তার উপর বাংলাদেশের কিছু কট্টরপন্থী সংগঠনগুলি ভারত বিদ্বেষী মনোভাব সাধারণ জনগণের উপর উস্কানি দিচ্ছে। তাতে অবশ্য মদত রয়েছে ইউনূসেরও। তেমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। আরাকান আর্মি নিয়ে জেরবার হচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলের বেশ খানিকটা রয়েছে রাখাইন রাজ্য এবং খানিকটা বাংলাদেশের মধ্যে। শোনা যাচ্ছে, যে বোমা বর্ষণের কথা প্রকাশ করেছে আরাকান আর্মি, তা বাংলাদেশের মধ্যে হয়েছে বলে দাবি তাদের। যদিও বর্ডার থেকে খুব বেশি ভিতরে নয়। তবে বাংলাদেশের সরকার আরাকান আর্মি নিয়ে যতই চুপ করে থাকুক, বাংলাদেশের মাটিতে যে আঘাত এসেছে, তা নিশ্চিত। অন্যদিকে বাংলাদেশের কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের দাপট দেখা যাচ্ছে। তাও অস্বীকার করার মতো নয়। রোহিঙ্গাদের বাড়বাড়ন্ত চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশ সরকার এরপরও যদি সতর্ক না হয়, সেক্ষেত্রে দেশের একটি বিরাট অংশ তাদের হাতছাড়া হবে, তা বলাই বাহুল্য। তারমধ্যে আরাকান আর্মি একাধিক দেশ থেকে অস্ত্র কিনছে। ইতিমধ্যেই তারা মায়ানমার সরকারের থেকে জুন্টা সরকার থেকে অস্ত্র পেয়েছে। ধীরে ধীরে শক্তি বৃদ্ধি করছে এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী। তারমধ্যেই ‘ডোভাল-জয়শঙ্করের ভারতের জোড়া মাস্টরস্ট্রোক। নতুন করে চিন্তা বাড়িয়েছে ইউনূস সরকারকে।
Discussion about this post