বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের দিল্লি সফর নিয়ে কম জল্পনা-কল্পনা হয়নি। জানা গিয়েছিল, খলিলুররে হাতে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা একটি তথ্যপ্রমান সমৃদ্ধ ফাইল বা ডসিয়র তুলে দিয়েছিলেন। তাতে বাংলাদেশের একাধিক জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, তাতে পাকিস্তানের কোন কোন জঙ্গিগোষ্ঠী এবং কম্যান্ডার রয়েছেন তার সবিস্তার তথ্য ছিল। যদিও ডোভালের আগেই বেশ কিছু তথ্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিয়ে এসেছিলেন ভারতের মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের চার উচ্চপদস্থ কর্তা। তাঁরা মাস দেড়েক আগেই বাংলাদেশ সফর করে এসেছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের মুহাম্মদ ইউনূস সরকার ভারতের সেই দাবি মেনে কার্যত কিছুই করেনি এমনকি বাংলাদেশের সেনাবাহিনীও কিছু করেনি বলেই জানা গিয়েছে। তাহলে কি ভারত চুপ করে বসে রয়েছে, নাকি ভারত কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে? যেটা জানা যাচ্ছে, সেটা ওই মিয়ানমারের মতোই অজ্ঞাত ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে। তাও একটা-দুটো নয়, একসঙ্গে দশ থেকে বারোটি জায়গায় আচমকা হামলা হয়েছে বলেই সূত্রের খবর। তবে এ বিষয়ে না ভারত মুখ খুলেছে, না বাংলাদেশ সরকার মুখ খুলেছে। এমনকি বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমও কিছু বলেনি এখনও পর্যন্ত। কিন্তু ভারতের একাধিক সূত্র দাবি করেছে, বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ড্রোন হামলা হয়েছে। আর তা কোথা থেকে হয়েছে, কে বা কারা করেছে সেটা স্পষ্ট নয়। কেউ কেউ দাবি করেছেন, এই ড্রোনগুলি মিয়ানমারের দিক থেকে এসেছে এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্যেই আঘাত হেনেছে। আর তাতে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি জঙ্গি কম্যান্ডার ও প্রশিক্ষণরত যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
বাংলাদেশের কোনও সংবাদমাধ্যম বা সরকার এটা স্বীকার করেনি। ভারতের বেশ কয়েকজন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ দাবি করেছেন, এই ড্রোন হামলা এতটাই নির্দিষ্ট ছিল যে ওই জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ব্যতীত আশেপাশের অন্য কোনও অঞ্চলের ক্ষতি হয়নি। কোথায় কোথায় হামলা হয়েছে? তাঁদের দাবি, সিলেট, কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি টার্গেটে হামলা হয়েছে। এমনকি খোদ ঢাকার একটি টার্গেটও উড়ে গিয়েছে ওই ড্রোন হামলায়। তবে প্রতিটি ড্রোনই মিয়ানমারের দিক থেকে এসেছিল। তবে কেউ এর দায় স্বীকার করেনি।
এদিকে বাংলাদেশের তরুণ সমাজের একটা বড় অংশ ভারত-বিরোধিতায় এতটাই ব্যস্ত যে আপাতত তা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন খোদ মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি জানেন ভারত কতটা অগ্রাসী হয়ে উঠেছে। ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনের সামনে এক সমাবেশে বাংলাদেশের অজ্ঞাতকুলশীল এক সংগঠনের কয়েকজন নেতার বক্তব্য সমাজ মাধ্যমে সামনে এসেছে।
এই বক্তব্যগুলি থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট, সেটা হল এবার চুপ করে বসে থাকা মানে ভারতের জন্য বড় বিপদকে ডেকে আনা। ভারতের একাধিক প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন, বাংলাদেশের উপর আরও চাপ বৃদ্ধি করা। কারণ মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের একটা স্পষ্ট নীতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তাঁদের বক্তব্য, হাসনাত বা অন্য কেউ যারা সরকারের সংশ্লিষ্ট নয় তাঁদের বক্তব্যের দায় সরকার নেবে না।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের বক্তব্য থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট। হাসনাতদের বক্তব্য তাঁরা অবান্তর বলছেন। আবার ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনের নিরাপত্তা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন। কারণ ক্ষমতায় এসে তাঁরা বুঝেছেন ভারতের সঙ্গে বিবাদে যাওয়া তাঁদের পক্ষে খুবই কঠিন। কিন্তু সেই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার, হাসনাত বা বাকি চরমপন্থী নেতাদের বিরুদ্ধে যে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না, সেটাও লক্ষ্যণীয়। যা হয়তো ভারত সরকার এড়িয়ে যাবে না।












Discussion about this post