রাজনীতিতে একটা কথা বেশ চালু আছে – দীর্ঘদিনের বন্ধু বলে কিছু হয় না, আবার দীর্ঘদিনের শত্রু বলে কিছু হয় না। প্রয়োজনে শত্রু মিত্র হতে পারে, আবার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে মিত্রকে চোখের নিমেষে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া যায়। বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন তেমনই এক অঘটনের সাক্ষী হতে চলেছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামাতের সম্পর্ক কেমন, তা সকলের জানা। এই প্রসঙ্গে ২০১৪ সালে বেগম জিয়ার একটি ঐতিহাসিক মন্তব্য উল্লেখ করা যেতে পারে।
ভারতের একটি ইংরেজি দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বেগম জিয়া বলেছিলেন, ‘জামাতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক শুধু একটি নির্বাচনী সমঝোতা। এখানে আদর্শের কোনও ব্যাপার নেই। ’ ১৯৯৪ সালে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক সংকট দেখা দিলে এইচ এম এরশাদ নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির সঙ্গে মিলে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামী তত্ত্বাবধায়ক আন্দোলন শুরু করে। সেই সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদে খালেদা জিয়ার বিএনপি। পরে ২০০১ সালে জামাতের সঙ্গে বিএনপি জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে যায়। ফলে, বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিতে জামাত যে একটা ফ্যাক্টর, তা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
৫ অগাস্টের পর গণঅভ্যুত্থানের পর আবারও নতুন করে আলোচনায় জামাত-আওয়ামী লীগ গোপন সমঝোতা। যাদের সঙ্গে একসময় চরম শত্রুতা ছিল, সময়ের প্রয়োজনে তাদের হাত ধরা যেতেই পারে। তাদের সঙ্গে হতেই পারে চরম বন্ধুত্ব। কারণ, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। জামায়াত আগামী নির্বাচনে জয়লভা করে ক্ষমতায় যেতে চায়। বর্তমানে পদ্মপারের রাজনীতির হাওয়া তাদের দিকে। সরকারে তাদের প্রতিনিধি আছে। তারা একটি সংগঠিত রাজনৈতিক দল, যে দলের দেশের বাইরেও অগনিত সমর্থক রয়েছে। দেশ ও বিদেশের প্রভাবশালী মহলের একটি অংশ চাইছে জামাত ক্ষমতায় আসুক।
এই প্রসঙ্গে জিয়ার ওই ঐতিহাসিক মন্তব্য স্মরণযোগ্য। এরশাদের আমলে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি এবং বাংলাদেশের বামদলগুলি নির্বাচন বয়কট করলেও আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। এমনকী জামায়াতও। তারা দেশের প্রতিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। সেই সব নির্বাচনে তাদের সঙ্গে সমঝোতা করে আওয়ামী লীগ। তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪২ আসনে আওয়ামী লীগ কোনও প্রার্থী দেয়নি। এর মধ্যে কয়েকটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন আট দলীয় জোটের প্রার্থীরা। আবার কয়েকটি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দিলেও তাদের হয়ে প্রচার করেনি। ১৯৮৬ সালে জামায়াত এবং আওয়ামী লীগের এই সমঝোতার খবর জানত মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। দুই দলের এই ঐক্য বজায় থাকে ১৯৯১-য়ের নির্বাচনের পরেও। সে সময় বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যোগ দেয় জামায়াত। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে জামায়াত এবং আওয়ামী লীগ আন্দোলন করে। কিন্তু ১৯৯৬ সালে নির্বাচনে না বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সমঝোতা হয়েছে, না আওয়ামী লীগের সঙ্গে। এককভাবে তারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ওই বছর তাদের প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ৮.৬১%, যা ৯১-য়ে প্রাপ্ত ভোটের দ্বিগুন। কিন্তু আসন কমে আসে মাত্র তিনটিতে।
পরবর্তীকালে ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াত বিএনপির সঙ্গে জোট করে। ওই বছর জামায়াতে প্রাপ্ত ভোটের হার ৪.২৮% হলেও আসন বেড়ে দাঁড়ায় ১৭। জিয়ায় সরকারে তারা দুটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকও পায়। জিয়া সরকারের বিরুদ্ধে সেই সময় যত দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে, তার ভাগীদার হতে হয়েছিল জামায়াতকে। তাদের শিল্পমন্ত্রী আমীর মতিউর রহমান সব সরকারি কারখানা একে একে বন্ধ করতে শুরু করেন। এর মধ্যে রয়েছে খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলস, চট্টগ্রাম কেমিক্যাল কমপ্লেক্স সহ অনেক প্রতিষ্ঠান। তাছাড়া গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা সহ অসংখ্য মামলার আসামী ছিলেন নিজামি। ২০০৮ সালে বিএনপির সঙ্গে জোট করে জামায়াতের সব থেকে খারাপ ফল হয়। তারা মাত্র দুটি আসনে জয়লাভ করে। প্রাপ্ত ভোটের হার ৪.৭ %। তাই এবার ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। তার পরের বছর মানবতাবিরোধী কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগে শুরু হয় বিচার। আর আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামাতের শুরু হয় এক নতুন অধ্যায়।
বাংলাদেশে সমস্ত নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশছৌঁয়া, শুধু সস্তা হল লাশ। তৌহিদি জনগনকে খুশি করতে হলে শুধু টাকা পয়সা এবং...
Read more












Discussion about this post