বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানের নায়ক তথা জুলাই আন্দোলনের মুখ হয়ে উঠেছিলেন শরিফ ওসমান হাদি। সেই হাদিকেই গুলিবিদ্ধ হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়কের বৃহস্পতিবার মৃত্যু হয়েছে। ঢাকায় তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল দুষ্কৃতীরা।সিঙ্গাপুরের বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতি অনুযায়ী, ১৮ ডিসেম্বর চিকিৎসকদের সর্বাত্মক চেষ্টার পরও শেষরক্ষা হয়নি। পরলোক গমন করেন ওসমান হাদি।
ঘটনা প্রবাহ শুরু হয় ১২ ডিসেম্বর।ঢাকার পল্টন এলাকার কালভার্ট রোডে টোটোয় চড়ে যাওয়ার সময়ে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা খুব কাছ থেকে গুলি চালায় ওসমান হাদির মাথায়। প্রথমে তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও পরে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় এবং সেখান থেকে ১৫ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে করে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের নিউরোসার্জিক্যাল আইসিইউ-তে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তার মৃত্যু ঘটে।
আর এই খবর বাংলাদেশের চাউর হতেই বৃহস্পতিবার রাত থেকেই ঢাকার রাস্তায় স্লোগান উঠেছে, ‘আমিও হাদি হব, গুলির মুখে কথা কবো’। উত্তেজিত জনতা আবার নেভে পড়ে রাস্তায় আবারো হাতের বাইরে চলে যায় পরিস্থিতি তৎক্ষণাৎ রাস্তায় নামে সেনাবাহিনী কিন্তু ছাত্রদের রোস এতটাই তীব্র ছিল যেখানে হার মানতে হয় সেনাবাহিনীকে। উত্তেজিত জনতা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে আগুন লাগাতে শুরু করে। ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর মতন বাংলাদেশের প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমের অফিসে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।রাগে ক্ষোভে বিপুল সংখ্যক মানুষ যেন উন্মত্ত হয়ে ওঠে।শরিফ ওসমান হাদি ছিলেন বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাসে উঠে আসা এক ব্যতিক্রমী ছাত্রনেতা। বয়সে তরুণ হলেও ২০২৪ সালের ছাত্র অভ্যুত্থানের সময় তিনি হয়ে উঠেছিলেন আন্দোলনের অন্যতম পরিচিত মুখ। এবং লাগাতার হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা ও আওয়ামী লীগের পতনের মূল কারণই অনেকে হাদির কন্ঠকে তুলে ধরে। এবং হাদির বিভিন্ন সময় ঝাঁঝালো কন্ঠে ভারত বিরোধী স্লোগানও শুনতে পাওয়া যায়।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও মুখপাত্র হিসেবে রাজপথে মিছিলে এবং সামাজিক মাধ্যমে তাঁর কণ্ঠ ছিল স্পষ্ট, ধারালো ও আপসহীন কন্ঠ বরাবর তীক্ষ্ণ ও ধারালো ছিল। হাদি তার জীবন শুরু করে একটি বেসরকারি মাদ্রাসা স্কুলের শিক্ষক হিসাবে এবং পরবর্তীতে ইনকিলাব মঞ্চের মূল আহ্বায়ক হিসাবে তিনি তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন। হাদীর রাজনৈতিক জীবনের পথ চলা শুরুই হয়েছিল হাসিনা বিরোধী আওয়ামী লীগ বিরোধী ডাক তুলে।প্রথম দিকে তিনি পরিচিত ছিলেন ছাত্র অধিকার, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ এবং রাষ্ট্রীয় দমননীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার এক সংগঠক হিসেবে। ধীরে ধীরে তাঁর নেতৃত্বগুণ ও সংগঠনের ক্ষমতা তাঁকে ছাত্র রাজনীতির গণ্ডি ছাড়িয়ে বৃহত্তর রাজনৈতিক পরিসরে নিয়ে আসে।২০২৪ জুলাই মাস বাংলাদেশের পালা বাদলের মূল কান্ডারী ছিল ইনকিলাব মঞ্চ। এবং হাদি ছিল একমাত্র আহ্বায়ক তার ডাকেই সাড়া দিয়ে বাংলাদেশে হাজারো হাজারো ছাত্রনেতা আওয়ামী লীগ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে সেই যুদ্ধে একপ্রকার হার স্বীকার করেই বাংলাদেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মিছিলে তাঁর স্লোগান, সমাবেশে তাঁর বক্তব্য এবং ক্যামেরার সামনে তাঁর দৃঢ় অবস্থান তাঁকে দ্রুত জনপ্রিয় করে তোলে। আর এই সুযোগকেই গোপনে কাজে লাগিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনূস। অনেক রাজনৈতিক মহল অবশ্য মনে করেন ইউনূসের মৌলবাদের বাড়বাড়ন্ত ভারত বিরোধী ধ্যান-ধারণা অনেকাংশেই হাদিকে প্রশ্রয় দিয়েছিল এবং ইউনূসের প্রিয় ছাত্র হয়ে উঠেছিল ওসমান হাদি। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারতের মানচিত্র বিকৃত করে ইউনূসের গুড বয় হিসাবে পরিচিত পেয়েছিলেন এই হাদি।সমর্থকদের কাছে তিনি ছিলেন ‘ভয় না পাওয়া নেতা’, আবার সরকারের সমর্থক মহলে তাঁকে দেখা হতো এক ‘বিপজ্জনক উস্কানিদাতা’ হিসেবে। ফলে হাদির জনপ্রিয়তা যে ক্রমশ বাড়ছিল তা জনসমক্ষে চলে এসেছিল এবং আসন্ন বাংলাদেশের নির্বাচনী ঘোষণা হতেই হঠাৎ হাদীর উপর গুলি হামলা অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। পরবর্তীতে ইনকিলাব মঞ্চ ভেঙে দেওয়া হলেও ওসমান হাদি রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াননি। বরং তিনি ঘোষণা করেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ঢাকার একটি আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন। এটাই কি হাদির জীবনে বড় কাল হয়ে দাঁড়ালো?
একদিকে ভারত বিরোধী মনোভাব অন্যদিকে রাজনৈতিকভাবে হাদির জনপ্রিয়তা ইউনূসের আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছিল দিন দিন তাই অজ্ঞাত পরিচয় বাইকে থাকা দুই আরোহীর সংস্পর্শে হাদীর গুলি কান্ড এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইলেন ইউনূসের উপদেষ্টা মহল!
হয়তো ইউনুস চেয়েছিলেন এক আর হয়ে গেল আরেক
হাদির মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসতেই ঢাকার শাহবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ, অবস্থান ও প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু হয়। উত্তেজনার মধ্যেই রাতভর একাধিক স্থানে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন লাগানোর মতন ঘটনাও ঘটে।
অশান্তির আঁচ ছড়িয়েছে ঢাকার বাইরেও। চট্টগ্রাম, রাজশাহী-সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সহিংস ঘটনার খবর মিলেছে। এমনকি ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ময়মনসিংহের ভালুকায় এক হিন্দু যুবককে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগও উঠেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। বর্তমান বাংলাদেশের যা পরিস্থিতি আবারও সেই ২০২৪ জুলাই মাস কে মনে করিয়ে দিচ্ছে অনেককেই গতকাল রাত থেকেই জনতা নেবে এসেছে রাস্তায় বিক্ষোভের তীব্রতা এতটাই সামাল দিতে ব্যর্থ হচ্ছে সেনাবাহিনী এই প্রসঙ্গে অবশ্য ইউনূস জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে সবাইকে শান্ত থাকার বার্তা দিলেও অশান্ত বাংলাদেশ যে ইউনূসের পতন ডেকে আনছে তা স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টাও হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন।












Discussion about this post