হাসিনা বিদায়ের পর থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের শুরু হয়েছে ‘বসন্ত বিলাপ’ এত প্রেম, যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো ভাষার অভাব রয়েছে। তাই, বিখ্যাত লোকসঙ্গীত শিল্পী নির্মলেন্দু চৌধুরীর গাওয়া একটি লালন সঙ্গীত ধার করতেই হচ্ছে। গানটি হল কথা কয়রে দেখা দেয় না। সেই গানে আছে ‘খুঁজি তাঁরে আসমান জমিন / আমারে চিনিনে আমি গো / এ কী বিষম ভুলে ভ্রমি / আমি কোন জন সে কোন জনা। ’ যদিও গানের ভাবার্থ অন্য। কিন্তু গানে যে লাইনটি সেই লাইনটি এই দুই দেশের সম্পর্কের সঙ্গে হুবহু মিলে যায় – এ কী বিষম ভুলে ভ্রমি, আমি কোন জন সে কোন জনা। না বাংলাদেশ নিজেকে চিনতে পারছে, না পাকিস্তান। আর হাদির শেষকৃত্য নিয়ে যেভাবে সে দেশের গণমাধ্যমে কভারেজ দেওয়া হল, তাতে একটা বিষয় খুব স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে তা হল তাদের ভারত-বিরোধিতা।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদি শেষকৃত্যে উপচে পড়ল ভিড়। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজ়ায় হাদির শেষ যাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। এ দিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজ়ায় ওসমান হাদির শেষযাত্রায় হাজার হাজার মানুষ যোগ দিয়েছিলেন। সেখান থেকে কফিন নিয়ে যাওয়া হয়েছিল নজরুলের সমাধিসৌধে। ধর্মীয় রীতি পালনের সময় সেখানে হাজির ছিল কয়েক হাজার মানুষ। শনিবার বিকেল ৪টে নাগাদ তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে কবি নজরুল ইসলামের পাশে সমাধি দেওয়া হয়। হাদির শেষ যাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টা পরিষদের একাধিক সদস্য। উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টর সহযোগী অধ্যাপত সাইফুদ্দিন আহমদ-সহ অনেকে। জাতীয় নাগরিক পার্টির নাহিদ ইসলাম, হাসনাত আবদুল্লাহ, নাসির উদ্দিন পাটওয়ারি উপস্থিত ছিলেন। ওসমান হাদির শেষকৃত্যে অংশ নিয়েছিলেন জামায়াতে ইসলামির আমির শফিকুর রহমান, বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমদ। শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রেখেছেন মুহাম্মদ ইউনূস।
যদিও শেষকৃত্যানুষ্ঠান পর্ব একেবারেই নির্বিঘ্নে মেটেনি। হঠাত্ করে দলে দলে মানুষ জোর করে সংসদ ভবন চত্বরে ঢুকে পড়ে। সংসদের ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করে তারা। যদিও সঙ্গে সঙ্গে সেনা এসে পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে। তাদের সামনে দাঁড়িয়েই স্লোগান দিতে শুরু করে ওই জনতা। দেওয়া হয় ভারত-বিরোধী স্লোগানও। মাইকে সকলকে সরে যেতে বলেনন সেনাকর্মীরা। তবে তাতেও ভিড় কমেনি। বেশ কিছুক্ষণ জনতা ও সেনা মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। পরে অবশ্য জনতা সেখান থেকে সরে গিয়ে শাহবাগে ভিড় করে। রাস্তা আটকে হাদি-হত্যায় অভিযুক্তদের গ্রেফতারির দাবি জানানো হয়। এদিকে, রীতি পালনের পর সংসদ চত্বর থেকে হাদির দেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কবি কাজি নজরুল ইসলামের সমাধির পাশেই হাদিকে কবর দেওয়া হয়। হাদির শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস। ছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানও। এছাড়া বিএনপি, জামাত ও পড়ুয়াদের দল এনসিপির নেতারাও শেষকৃত্যে অংশ নেন। জমায়েতে ভাষণও দেন ইউনুস। সেখানেও বারেবারে ভারত বিরোধী স্লোগান দেয় উপস্থিত জনতা।
এবার আসা যাক পাকিস্তানের গণমাধ্যম হাদির শেষকৃত্য নিয়ে কী বলছে? গণমাধ্যমে ইনকিলাব মঞ্চকে বলা হয়েছে ‘স্বাধীনতার অগ্রপথিক’। দ্য ডন পত্রিকার শিরোম ‘Massive crowd attends of Bangladesh student leader’. এশিয়া প্যাসেফিকের হোম পেজে একটি ছবি রয়েছে। সেই ছবিতে দেখা গিয়েছে একজনের হাতে পোস্টার। পোস্টারে লেখা ‘আমরা সবাই হাদি হবো। যুগে যুগে লড়ে যাবো’। এগুলি যে ভারত-বিরোধীতা, তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।












Discussion about this post