জটায়ুর ভাষায় হাইলি সাসপিসাশ?
না কি ‘ভূমিকম্প, ঝঞ্ঝাবৎ, জলোচ্ছাস?’। জটায়ু কিসুই বুঝতে পারছিলেন। তাঁর তালগোল আরও পাকিয়ে গেল যখন তিনি দেখেন ফেলুমিত্তির সাতসকালে আচমকাই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আর তোপসেকে আধঘণ্টার মধ্যে তিন প্যাকেট লাঞ্চ প্যাক করার জন্য বলে দিলেন। জটায়ুর উদ্দেশ্যে ফেলুমিত্তিরের মন্তব্য এই প্রতিবেদনের সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায়। ফেলু মিত্তির হন্তদন্ত হয়ে লাগেজ গোছাতে গোছাতে জটায়ুকে বলেছিলেন – ‘আপনাকে যথা সময়ে সব কিছু বলব। কিন্তু আপনি এখন কোনও প্রশ্ন করতে পারবেন না। এটা কথা দিতে পারেন?’
জটায়ু ফেলু মিত্তিরকে কথা দিয়েছিলেন। বলেছিলেন প্রশ্ন করবেন না। কিন্তু পদ্মাপারে যা হয়ে গেল, তার প্রেক্ষিতে জটায়ু প্রশ্ন না করার আশ্বাস দিতে পারতেন না, তা সহজেই অনুমেয়। একটা গুলি, একটা অপমৃত্যু, যাকে কেন্দ্র করে অজস্র প্রশ্ন। সেই প্রশ্নের উত্তর কি পাওয়া যাবে? না পাওয়া যাবে না। না কি যেমন ‘হাইলি সাসপিসাস’ ছিল, তেমনই ‘হাইলি সাসপিসাস’ থেকে যাবে। গত শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর হাদিকে গুলি করা হয়। তারপর তাঁর মৃত্যু। এই দুইয়ের মাঝে কেটে গিয়েছে এক সপ্তাহ। মাস্টারমাইন্ড ধরা পড়েনি। আর তাকে না ধরে তদারকি সরকার থেকে খালি ভারতকে গালি দেওয়া হচ্ছে। এই ঘটনার সঙ্গে ভারতকে জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
গুলি করার দিন বিকেলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেন তদারকি সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তাফা সরওয়ার ফারুকী। ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘গণহত্যার দায়ে কনভিকটেড হাসিনা ভারতে বসে একের পর এক খুনের হুমকি দিচ্ছিল কিছুদিন ধরেই। আর আজকে গুলিবিদ্ধ হল ওসমান হাদি। এর আগে হাদি বহুবার ভারতীয় নম্বর থেকে খুনের হুমকি পেয়েছেন।’ তিনি আরও লেখেন, ‘আমরা এখনও নিশ্চিত জানি না, কে বা কারা এটা ঘটিয়েছে। যারাই ঘটাক এটার মূল্য তাদের দিতে হবে।’ হাদির দ্রুত আরোগ্য কামনা করে বার্তাও দিয়েছেন। ফেসবুক পেজে লেখেন ‘গেট ওয়েল সুন, হাদি। গোটা দেশ তোমার সুস্থতার প্রার্থনায়।’
কিন্তু যে প্রশ্নের কোনও উত্তর মিলছে না, যে ফারুকী কী করে জানলেন যে ভারতের একটি নম্বর থেকে হাদিকে ফোন করা হয়েছিল? সরকার কেন এখনও সেই ফোন নম্বর প্রকাশ করেনি?তা ছাড়া ফারুকী কি এই বিষয়ে সরকারকে পদক্ষেপ করার কথা বলেছিলেন? ওসমান হাদির ফোন খুঁজলে তো সেই নম্বর পাওয়ার কথা। সরকারের তরফে কী আদৌ কোনও তদন্ত করা হয়েছিল? হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) রায় ঘোষণার দিন হাদি তাঁর ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাস দিয়ে লিখেছিলেন, ৩০টি বিভিন্ন দেশের নম্বর থেকে তাঁর কাছে টেক্সট আসছে, কল আসছে, যেখানে তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ওসমান হাদি লিখেছিলেন, ‘‘গত তিন ঘণ্টায় আমার নম্বরে আওয়ামী লীগের খুনিরা অন্তত ৩০টা বিদেশি নম্বর থেকে কল ও টেক্সট করেছে। যার সামারি হলো- আমাকে সর্বক্ষণ নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। তারা আমার বাড়িতে আগুন দেবে। আমার মা, বোন ও স্ত্রীকে ধর্ষণ করবে এবং আমাকে হত্যা করবে।১৭ তারিখ খুনি হাসিনার রায় হবে। ১৪০০ শহীদের রক্তের ঋণ মেটাতে কেবল আমার বাড়ি-ঘর না, যদি আমাকেও জ্বালিয়ে দেয়া হবে, ইনসাফের এই লড়াই হতে আমি এক চুলও নড়বো না, ইনশাআল্লাহ।’
ডিজিটাল ইনভেস্টিগেটিভ মিডিয়া দ্য ডিসেন্ট হাদিকে গুলি করা করা ব্যক্তি, হাদির নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেওয়া ব্যক্তি ও ৯ ডিসেম্বর ইনকিবাল কালচারাল সেন্টারে যাওয়া ব্যক্তির একাধিক ছবি তুলনামূলকভাবে যাচাই করে এই দাবি করেছে। দ্য ডিসেন্টের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে জানানো হয়, ইনকিলাব কালাচারাল সেন্টার থেকে সংগৃহীত ৯ ডিসেম্বরের সিসিটিভি ফুটেজ, পুলিশের সংগৃহীত ১২ ডিসেম্বরের হামলার সিসিটিভি ফুটেজ, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এবং ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামে ফয়সাল করিম মাসুদ নামক অ্যাকাউন্ট এবং আওয়ামীপন্থি বিভিন্ন পেজ ও ব্যক্তির প্রোফাইলে পোস্ট করা ৫০টিও বেশি ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, ওসমান হাদির ওপর বাইকের পেছন থেকে গুলি করা ব্যক্তিটির চেহারার সঙ্গে ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান নামের এক ব্যক্তির চেহারা মিলে যাচ্ছে। তিনি রাজধানীর আদাবর থানা ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন বলে সংবাদমাধ্যমে পুরোনো খবর থেকে জানা গেছে। এক মাস আগে তাকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়। ইউনূসের অদৃশ্য আশীর্বাদী হাত থেকে তিনি জামিনও পেয়ে যান। তাহলে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ভারতের যোগ কোথায় দেখতে পেলেন ফারুকী? নেই কোনও উত্তর। তাই হাইলি সাসপিসাস বলতেই হচ্ছে।
বাংলাদেশে সমস্ত নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশছৌঁয়া, শুধু সস্তা হল লাশ। তৌহিদি জনগনকে খুশি করতে হলে শুধু টাকা পয়সা এবং...
Read more











Discussion about this post