বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশে নতুন তদারকি সরকার গঠিত হল। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে মোট ১৪ জন উপদেষ্টা শপথ নিয়েছেন। ১৭ সদস্যের উপদেষ্টা মণ্ডলীর বাকি তিনজন ঢাকার বাইরে থাকায় শপথগ্রহন অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি। মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে নতুন তদারকি সরকারে কারা কারা উপদেষ্টা হিসেবে থাকেন তার দিকে তাঁকিয়ে ছিল নয়াদিল্লি। কারণ, হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক রাখে সেটা নির্ভর করছে এই উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্যদের উপরই। গত সোমবার ছাত্র আন্দোলনের চাপে পদত্যাগ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই তিনি বাংলাদেশ ত্যাগ করে ভারতে এসে আশ্রয় নেন। পরবর্তী তিনদিন বাংলাদেশ সরকারহীন অবস্থায় ছিল, ফলে সেনার হাতে ছিল বাংলাদেশের শাসনভার। তবে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশ একটা অন্তর্বর্তীকালীন তদারকি সরকার গঠন করে ফেলল। এখন দেখে নেওয়া যাক কারা কারা এই তদারকি সরকারের উপদেষ্টা বা মন্ত্রী হলেন।
সকলেই জানেন, বাংলাদেশের তদারকি সরকারের মাথায় বসেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনুস। যিনি গোটা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের একমাত্র পরিচিত মুখ বললে ভুল হবে না। আন্দোলনরত ছাত্রদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তিনি প্যারিস থেকে সোজা ঢাকায় চলে আসেন বাংলাদেশের দায়িত্বভার কাঁধে তুলে নিতে। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি এবং তাঁর পারিষদরা শপথ নিলেও শুক্রবার জানানো হয় কে কোন মন্ত্রকের দায়িত্ব পাচ্ছেন। এদিন মুহাম্মদ ইউনুসের তরফে জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রিপরিষদের বিভাগের বিস্তারিত তথ্য পেশ করা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, মুহাম্মদ ইউনুস নিজের হাতে প্রধানমন্ত্রীত্ব ছাড়াও রেখেছেন ২৭টি দফতর। সেগুলি হল, মন্ত্রিপরিষদ, প্রতিরক্ষা, সশস্ত্রবাহিনী, শিক্ষা, সড়ক পরিবহন এবং সেতু, খাদ্য, কৃষি, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়, রেলপথ এবং নৌ পরিবহন, জনপ্রশাসন, বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি, খনিজ, মহিলা এবং শিশুবিষয়ক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ত্রাণ, তথ্য এবং সম্প্রচার, বাণিজ্য, শ্রম এবং কর্মসংস্থানের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, মুহাম্মদ ইউনুস বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন এবং দুর্নীতি রুখতে নিজের হাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক রাখলেন। তবে পরবর্তী সময় উপদেষ্টা মণ্ডলীর সংখ্যা বাড়তেও পারে। সেক্ষেত্রে মন্ত্রকও বন্টন করা হবে তাঁদের কাছে।
]
অন্যান্য উপদেষ্টাগণের মধ্যে সালেহ উদ্দিন আহমেদ পেলেন অর্থ এবং পরিকল্পনা রূপায়ন মন্ত্রক। তিনি বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্ণর ছিলেন। ডঃ আসিফ নজরুল পেলেন আইন, বিচার এবং সংসদ বিষয়ক মন্ত্রক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং বৈষ্যম্যবিরোধী আন্দোলনের পুরধা। বিশিষ্ট আইনজীবী আদিলুর রহমান খান পেলেন শিল্প মন্ত্রক। তিনি এক মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতাও বটে। আসান আরিফের দায়িত্বে এল স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন এবং সমবায় মন্ত্রক। তিনি বাংলাদেশের প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেলারেন। খালেদা জিয়া সরকারের আমলে প্রাক্তন বিদেশসচিব মোঃ তৌহিদ হোসেনের হাতে এল পররাষ্ট্র মন্ত্রক। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের হাতে থাকছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন। তিনি পরিবেশবিদ। পরিবেশ নিয়ে কাজ করে তিনি একাধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। মিজ শামীন এস মুরশিদের হাতে থাকছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন পেয়েছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দায়িত্ব। খালিদ হোসেন পেয়েছেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রক, তিনি হেফাজতে ইসলামের প্রাক্তন নায়েব। ইসলামি বিষয়ক পণ্ডিত খালিদ হোসেন মৌলবাদী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। কৃষিবিদ মিজ ফারিদা আখতারের হাতে থাকল মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রক। তিনি বিকল্প অর্থনীতির গবেষণা করে সাফল্য পেয়েছেন। বাংলাদেশের গ্রামীন শিক্ষা অধিদফততরের অধিকর্তা মিজ নূরজাহান বেগম পেলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান। আর যে দূজনের দিকে সকলের নজর ছিল সেই ছাত্র আন্দোলনের পুরোধা নাহিদ ইসলাম পেয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক। এবং আসিফ সজীব ভূঁইয়া পেলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রক।
Discussion about this post