অজিত ডোভালের তীক্ষ্ণ বুদ্ধির কাছে কার্যত হারতে হল ইউনুস সরকারকে। কারণ গতকাল বন্দি বিনিময় চ্যুক্তি প্রয়োগ করে ভারত সরকার ৯৫ জন বন্দি মৎস্যজীবিকে বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে আনলেন। গত রবিবার ৫জানুয়ারি দুই দেশের মধ্যে বন্দি বিনিময় চ্যুক্তি মেনে বঙ্গপোসাগরের উপরের জলসীমায় দুই দেশের বন্দিদের একে অপরের কাছে হস্তান্তর করা হল। মূলত অজিত ডোভালের মাস্টার স্ট্রোকেই এই কার্যসিদ্ধি।
গণভূত্থানের আগে শেখ হাসিনার শাসন কালে অনেক ক্ষেত্রেই দুই দেশের মানুষ কাঁটাতার পেরিয়ে, বা আকাশ সীমা ও জলসীমায় দুই দেশে প্রবেশ করেছে বেআইনি ভাবে। কিন্তু সেই সময় এই ঘটনার সমাধান করা হত দুই দেশের মধ্যে ফ্ল্যাগ মিটিং এর মাধ্যমে। কিন্তু অন্তরবর্তী সরকারের আমলে কাকদ্বীপের ট্রলার গুলি বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করার বিষয়টিকে মোঃ ইউনুস জটিল ভাবে পরিবেশন করে ভারতের ৯৫ জন মৎস্যজীবীকে বন্দি করে রাখলো। সেখানেই অজিত ডোভাল এর খুঁড় ধার বুদ্ধিতে পরাস্ত হয়েছে মোঃ ইউনুস। প্রায় আড়াই মাস আগে বাংলাদেশের জলসীমার ভেতর ঢুকে পড়ায় ভারতের কাকদ্বীপের ছয়টি ট্রলার আটক করে বাংলাদেশের উপকূলরক্ষী বাহিনী। ওই ট্রলারগুলোতে ছিলেন ৯৫ জন মৎস্যজীবী। তাদের গ্রেফতার করা হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব লুৎফুন নাহার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানান, ওই ৯৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আটক ছয়টি ট্রলারও ফেরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা। অন্যদিকে, ভারতে আটকে থাকা ৯০ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
বাংলাদেশে আটকে পড়া কাকদ্বীপের ৯৫ জন মৎস্যজীবী ফিরেছেন নিজেদের ঘরে। বৃহস্পতিবার ঢাকা এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এই খবর শোনালেন সে দেশের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন। অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানিয়েছিলেন, ৫ জানুয়ারি মুক্তি পাবেন ভারতে আটকে থাকা ৯০ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবী এবং ভারতের ৯৫ জন জেলে। ভারতীয় দূতাবাসের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়টিও জানিয়েছিলেন তিনি। বিদেশ উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন জানান, ভারতের জলসীমায় আটক ৯০ বাংলাদেশি এবং বাংলাদেশ আটক ৯৫ ভারতীয় মৎস্যজীবী মুক্তি পাচ্ছেন। এরপরই দুদেশের মধ্যে বন্দি বিনিময় নিয়ম মেনে গত ৫ জানুয়ারি বঙ্গোপসাগরে আন্তর্জাতিক জলসীমায় তাঁদের হস্তান্তর করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ৭৮ জন বাংলাদেশি নাগরিক নিয়ে এমভি মেঘনা ও এমভি লায়লা নামক দুটি ফিশিং ট্রলার ভারতীয় জলসীমায় ঢুকে পড়ে। ৯ ডিসেম্বর তাঁদের আটক করা হয়। আবার ভারতীয় জলসীমায় এসে বাংলাদেশের একটি ট্রলার ডুবে গেলে আরও ১২ বাংলাদেশিকে উদ্ধার করা হয়। তারপর আটক করা হয় তাদের। আবার ভারতের ছটি ট্রলার গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে বাংলাদেশি জলসীমায় ঢুকে পড়ে। তখন ৯৫ জন ভারতীয় পটুয়াখালী ও বাগেরহাটে আটক করা হয়। বাংলাদেশের জলসীমায় অবৈধভাবে মাছ ধরার সময় আটক ভারতীয় ৬৪ জেলেকে প্রায় তিন মাস পর বাগেরহাট জেলা কারাগার থেকে বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের জলসীমায় অবৈধভাবে মাছ ধরার সময় আটক থাকার পর প্রায় তিন মাস পর তাঁদের বিরুদ্ধে সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করে মুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে সূত্রের খবর।
প্রসঙ্গত, কাকদ্বীপের মৎস্যজীবীদের বাংলাদেশে গ্রেফতার হওয়ার বিষয়টি জানার পরেই তাদের ভারতে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে তৎপর হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের তরফে কেন্দ্রীয় সরকারেরও দৃষ্টি আকর্ষণও করা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে কাকদ্বীপের বিধায়ক ওই মৎস্যজীবীদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিভিন্ন সময় বন্দি হওয়া জেলেদের বিনিময় করছে বাংলাদেশ ও ভারত। বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় রবিবার ৫ জানুয়ারি ভারত থেকে বাংলাদেশে ফিরছেন ৯০ জন জেলে। একই দিন বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফিরেছেন ৯৫ জেলে। ভারত আর বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড রবিবার একে অপরের দেশে আটক মোট ১৮৫ জন মৎস্যজীবী বা জেলেকে নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে । তবে দুই দেশের মধ্যে এত বড় সংখ্যায় আটক হওয়া মৎস্যজীবী বিনিময় এর ঘটনা এই প্রথম বলেই জানাচ্ছেন আধিকারিকরা।
Discussion about this post