আর মাত্র কয়েকদিন, আাগমী জানুয়ারি মাসের ২০ তারিখ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইতিমধ্যেই তিনি তাঁর মন্ত্রিসভা বা ক্যাবিনেট সাজিয়ে ফেলেছেন। যারা ট্রাম্পের সাথেই শপথ নেবেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে। কোনও দেশে নতুন সরকার গঠন হলে সকলেরই নজর থাকে কে বা কারা মন্ত্রী হচ্ছেন। কারণ, তাঁদের মনোভাব, চিন্তাধারা অনেক ক্ষেত্রেই নির্ভর করে সেই দেশের আভ্যন্তরীন ও বৈদশিক নীতি কেমন হবে। আর সেই দেশটি যদি হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তবে সেই কৌতুহল আরও বেড়ে যায়। কারণ, এখনও গোটা বিশ্বের পয়লা নম্বর সুপার পাওয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ফলে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের ক্যাবিনেটের দিকে নজর যে গোটা বিশ্বের থাকবে, এ কথা একটা শিশুও বলে দিতে পারে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতিমধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের জন্য ঐতিহাসিক জয় পেয়েছেন। আর তাঁর ক্যাবিনেটে এমন কয়েকজন ব্যক্তিকে স্থান দিয়েছেন, যাদের জন্য ভারত উচ্ছ্বসিত হতেই পারে। অপরদিকে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ছে বাংলাদেশ, চিন, পাকিস্তানের মতো ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলির।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট তাঁর সম্ভাব্য মন্ত্রিসভায় বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ভারতীয় বংশোদ্ভুতকে স্থান করে দিয়েছেন, যারা বিশ্ব রাজনীতিতে অনেক ওলোট-পালোট করে দিতে পারেন। আর আমেরিকায় প্রবাসী ভারতীয়দের জন্য এটা অবশ্যই খুশির খবর। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই নাম আসবে তুলসী গ্যাবার্ডের। যিনি ভারতের প্রতি নিজের পক্ষপাতিত্বের কথা প্রকাশ্যেই বলেন। তাঁর মতে হিন্দুধর্ম শ্রেষ্ঠ ধর্ম এবং গীতা শ্রেষ্ঠ ধর্মগ্রন্থ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও তিনি ব্যক্তিগতভাবে খুব পছন্দ করেন। এই তুলসী গ্যাবার্ডকে এ বার দেশের গোয়েন্দা বিভাগের নতুন অধিকর্তা অর্থাৎ ডিএনআই বা ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স নিয়োগ করেছেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অপরদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রধান মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন বা এফবিআই-এর প্রধান হিসেবে বেছে নিয়েছেন আরেক ভারতীয় বংশোদ্ভুত ক্যাশ্যপ প্যাটেল ওরফে ক্যাশ প্যাটেলকে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই বিশ্বব্যাপি নজরদারি চালাতে অত্যন্ত দক্ষ একটি গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ-এর সহযোগী। মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগে এই দুজনের নিয়োগ ভারতের কাছে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
কারণ ভারত এতদিন পাকিস্তানে চলা জঙ্গি কার্যকলাপ নিয়ে সোচ্চার ছিল। এবার তাতে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের নাম। ফলে জঙ্গি সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে লড়ায়ে এবার আমেরিকাকে পাশে পাবে ভারত। অপরদিকে আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিয়োগ করেছেন মাইক ওয়াল্টজকে। যিনি চিন ও পাকিস্তান বিরোধী বলে সর্বজন পরিচিত। পাশাপাশি মাইক ওয়াল্টজ অনেকটাই কানাডা তথা জাস্টিন ট্রুডো বিরোধী। এতেও ভারতের লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মাইক ওয়াল্টজ যেমন কট্টর ট্রাম্প সমর্থক তেমনই তিনি এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের পদক্ষেপের সমালোচনায় সোচ্চার হয়েছেন বহুবার। এই অঞ্চলে চিনের সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘাতের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রস্তুত হওয়ার গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন। আর এই কারণেই ওয়াল্টজ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য ভারতকে আমেরিকার অবিচ্ছেদ্য অংশীদার বলে অভিহিত করেছেন। মার্কিন সেনেটর মার্কো রুবিওকে আমেরিকার পরবর্তী সেক্রেটারি অফ স্টেটস বা জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত করেছেন ট্রাম্প। যিনি চিন, ইরান, ভেনিজুয়েলা এবং বিশেষ করে কিউবার প্রতি কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে বিদেশনীতি গ্রহন করার পক্ষে। ফলে ট্রাম্প প্রশাসন যে চিনের প্রতি কঠোর অবস্থান নেবেন সেটা এখনই বলে দেওয়া যায়। এতে চাপে পড়বে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেকেন্ড লেডি হতে চলেছেন উষা চিলকুরি ভ্যান্স। তিনিও ভারতীয় বংশোদ্ভুত মার্কিন নাগরিক। তাঁর আদি বাড়ি অন্ধ্রপ্রদেশের প্রত্যন্ত এক গ্রামে। তিনিও কট্টর ভারতপন্থী এবং ভারতের প্রতি তাঁর দুর্বলতা স্বীকার করেন। আমেরিকার পরবর্তী সহকারি অ্যাটর্নী জেনারেল মনোনীত হয়েছেন চণ্ডীগড়ের বাসিন্দা, বর্তমানে মার্কিন নাগরিক হরমিত কে বিলোন। যিনি মার্কিন বিচার বিভাগে বড় দায়িত্ব পেলেন। আবার মার্কিন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথের ডিরেক্টর নিযুক্ত হয়েছেন কলকাতায় জন্মগ্রহনকারী জয় ভট্টাচার্য। তিনিও মার্কিন স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বড় দায়িত্ব পালন করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়কালে। সবশেষে ট্রাম্প আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে আরেক ভারতীয় বংশোদ্ভুতকে নিয়োগ করলেন। তাঁর আমলে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে হোয়াইট হাউসের নীতি নির্ধারণে সিনিয়র অ্যাডভাইজার হিসাবে কাজ করবেন শ্রীরাম কৃষ্ণন। ফলে বিশেষ উপদেষ্টা হিসাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক দায়িত্ব থাকবে তাঁর কাঁধেই। সবমিলিয়ে বলা যায়, আগামী ২০ জানুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এশিয়া মহাদেশে বহু পরিবর্তন পরিলক্ষিত হতে পারে। আর এতে প্রধান নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় থাকবে ভারত। তখন বাংলাদেশের ইউনূস প্রশাসন অনেকটাই কোনঠাসা হয়ে পড়বে।
Discussion about this post