গত আগস্টে পালাবদলের পর বাংলাদেশে এথন ক্ষমতায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে তদারকি সরকার। অপরদিকে পূর্বতন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কেও অবনতি হয়েছে। এই আবহেই বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নিপীড়নের ঘটনা নিয়ে লাগাতার ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নয়া দিল্লি। যদিও সে বিষয়ে বাংলাদেশের তদারকি সরকার খুব একটা কর্ণপাত করেনি, সেটাও দিনের আলোর মতো পরিস্কার। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি এথন জটিল। তবুও সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকায় রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভার বৈঠকের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বৈঠক চেয়ে বারবার বার্তা দিয়েছিল ঢাকা। কিন্তু ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রক সেটাও মেনে নেয়নি। ফলে নিউইয়র্কে মোদি-ইউনূস বৈঠক হয়নি। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল ব্যক্তিগত ক্যারিশমা দেখিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস আমেরিকাতে সফলভাবে আন্তর্জাতিক দৌত সেরেছেন। যা নিয়ে চিন্তায় নয়া দিল্লি।
মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্রপূঞ্জের সাধারণ সভায় যেমন বক্তৃতা দিয়েছেন, তেমনই তিনি একান্ত বৈঠক করেছেন বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে। এরমধ্যে রয়েছেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন, বিদেশসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ এবং চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই প্রমুখ। পাশাপাশি, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট, বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রধান এবং এডিবি-র শীর্ষকর্তার সঙ্গেও আলাদা করে আলোচনা হয়েছে মুহাম্মদ ইউনূসের। তিনি বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগীতার আশ্বাস আদায় করে নিয়েছেন। এমনকি বাংলাদেশের জন্য প্রায় ৭০০ কোটি ডলারের আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ আদায় করে এনেছেন। পুরো বিষয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ভারতের বিদেশমন্ত্রকের আধিকারিকদের।
গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই বাংলাদেশে সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আর্থিক অস্থিরতাও বেড়েছে। বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী-সহ খাদ্যপণ্যের দামও উর্ধ্বমুখী। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য দরকার বিপুল আর্থিক সহায়তা। যা মুহাম্মদ ইউনূস আদায় করে আনতে পেরেছেন তাঁর প্রথম মার্কিন সফরেই। শুধু তাই নয়, তিনি পশ্চিমী দূনিয়াকে বোঝাতে পেরেছেন যে, শেখ হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ইউরোপ এবং আমেরিকার পূর্ণ সমর্থন এবং সহযোগীতা পাবেন। সবমিলিয়ে ইউনূস বুঝিয়ে দিতে পেরেছেন, ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক না হলেও তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে শূন্য হাতে ফেরেননি। বরং ঝুলি ভরে নিয়ে এসেছেন। যা ভারতের কূটনৈতিক পরাজয় হিসেবেই দেখছে ঢাকা।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতা চিন্তা বাড়িয়েছে নয়া দিল্লির। নজিরবিহীনভাবে এবার পাকিস্তান থেকে অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং ট্যাঙ্ক কিনতে চলেছে বাংলাদেশ। এটাও যথেষ্ট মাথাব্যাথার কারণ নতুন দিল্লির। ফলে এবার বাংলাদেশ নিয়ে নরম সুর নিতে চলেছে ভারত। সূত্রের খবর, আগামী নভেম্বরেই বাংলাদেশের তদারকি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে নরেন্দ্র মোদির। এবং তা হতে পারে থাইল্যান্ডে। জানা যাচ্ছে, আগামী নভেম্বরে বে অফ বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন বা বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ভারত ও বাংলাদেশ এই বিমসটেকের সদস্য দেশ। ওই বৈঠকের ফাঁকেই দুই রাষ্ট্রপ্রধানের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
কূটনৈতিক মহলের মতে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবার একত্রে সার্কের পুনরুজ্জীবন চাইছে। ইউনূস রাষ্ট্রপুঞ্জের বৈঠকের ফাঁকে একান্ত কথা বলেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এবং নেপালের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও। আবার ভারতের একটি মহলও চাইছে সার্কের পুনরুজ্জীবন হোক। আবার কূটনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছেন, ভারতের উচিৎ এই মুহুর্তে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্রুত আলোচনায় বসে বাস্তব পরিস্থিতি মেনে নিয়েই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি করা। সবমিলিয়ে চাপে নরেন্দ্র মোদি সরকার।
Discussion about this post